কান
কান আমাদের শ্রবণ, ভারসাম্য রক্ষা এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। তাই কানের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কানের যত্নে করণীয় কিছু বিষয় হল:
১) কান পরিষ্কার রাখা:
কানের ভিতর দিক পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতিদিন হালকা গরম পানি এবং তোয়ালে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কখনই কানে কোনও দ্রবণ বা টুথব্রাশ ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে কানের ভেতরের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২) কান খোঁচানো থেকে বিরত থাকা:
কানকে খোঁচানোর ফলে কানের ভেতরের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
৩) বেশি জোরে শব্দ থেকে দূরে থাকা:
বেশি জোরে শব্দের সংস্পর্শে আসলে কানের ভেতরের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। তাই গান শোনা, গান গাওয়া, কনসার্টে যাওয়া ইত্যাদির সময় ভালো মানের ইয়ারফোন বা হেডফোন ব্যবহার করা উচিত।
৪) জল থেকে কানের সুরক্ষা:
আরোও পড়ুন
ওজন নিয়ন্ত্রণে ১০ টি খাবার।
গোসল, সাতার কাটা, স্নান ইত্যাদির সময় কান পানিতে ভিজে গেলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে নেওয়া উচিত। এছাড়াও, কান থেকে পানি বের করার জন্য কান পাকা বা কানটিকে টিপে পানি বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়।
৫) ডাক্তারের পরামর্শ:
কানে ব্যথা, জ্বর, কানে পানি বা পুঁজ বের হওয়া, কানে শোনার সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কান থেকে পুজ বের হয় কেন?
কানের ভেতর থেকে পুজ বের হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো কানের সংক্রমণ। কানের সংক্রমণ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কারণে হয়। কানের সংক্রমণ দু’ধরনের হতে পারে:
- বহিঃকর্ণের সংক্রমণ (ওটাইটিস এক্সটারনা): এই সংক্রমণ কানের বাইরের কানচামচ (ক্যানাল) এবং ত্বকে হয়। বহিঃকর্ণের সংক্রমণের লক্ষণ হলো কানে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, কান থেকে পুজ বের হওয়া, কানের ভেতরের ত্বক লাল হয়ে যাওয়া এবং ফুলে যাওয়া।
- মধ্যকর্ণের সংক্রমণ (ওটাইটিস মিডিয়া): এই সংক্রমণ কানের মধ্যকর্ণে হয়। মধ্যকর্ণের সংক্রমণের লক্ষণ হলো কানে ব্যথা, জ্বর, কানে পুজ বের হওয়া, কানে শুনতে সমস্যা হওয়া, মাথা ঘোরা এবং ভারসাম্যহীনতা।
কানের ভেতর থেকে পুজ বের হওয়ার অন্যান্য কারণ হলো:
- কানে আঘাত: কানে আঘাতের ফলে কানের পর্দা ছিদ্র হতে পারে। কানের পর্দা ছিদ্র হলে কান থেকে পুজ বের হতে পারে।
- নাকের সংক্রমণ: নাকের সংক্রমণ থেকেও কানের সংক্রমণ হতে পারে। নাকের সংক্রমণের ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইউস্টেশিয়ান টিউব হলো একটি নল যা নাক এবং মধ্যকর্ণকে সংযুক্ত করে। এই টিউব বন্ধ হয়ে গেলে মধ্যকর্ণে চাপ তৈরি হয় এবং মধ্যকর্ণে সংক্রমণ হতে পারে।
- কান ক্যান্সার: কান ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হলো কানে পুজ বের হওয়া।
কান থেকে পুজ বের হলে করনীয় কি?
কানের ভিতর থেকে পুজ বের হলে প্রথমে একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কানের সংক্রমণের কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দেবেন।
চিকিৎসার মধ্যে থাকতে পারে:
- অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ: কানের সংক্রমণের কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক হলে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দেওয়া হয়।
- কান ড্রপ: কানের ভেতর থেকে পুজ বের হওয়া বন্ধ করতে কানের ড্রপ দেওয়া যেতে পারে।
- অস্ত্রোপচার: কিছু ক্ষেত্রে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে গেলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
এছাড়াও, কানের ভেতর থেকে পুজ বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত:
- কানে আঘাত করা থেকে বিরত থাকা।
- ঠান্ডা লাগা থেকে বিরত থাকা।
- নাকের সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা করা।
- কানের ভেতর পরিষ্কার করার সময় কানের ভেতরে কোনো কিছু ঢোকানো থেকে বিরত থাকা।
কানের ভেতর থেকে পুজ বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিজে নিজে চিকিৎসা না করাই ভালো। কারণ, এতে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
কানের যত্নে করণীয় কিছু অতিরিক্ত বিষয় হল:
- বাচ্চাদের কানের যত্নে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বাচ্চারা প্রায়ই কান খোঁচায়। তাই তাদের কানের ভেতর খোঁচানো থেকে বিরত রাখার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
- যারা বাইরে কাজ করেন বা যারা উচ্চ শব্দের সংস্পর্শে আসেন তাদের কানের যত্নে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তারা ভালো মানের ইয়ারপ্রটেক্টর ব্যবহার করতে পারেন।
কানের যত্ন নিলে কানের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং কানের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।