Skip to content
Home » MT Articles » ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা । কোন রঙের বিনে কি বর্জ্য ফেলবেন ?

ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা । কোন রঙের বিনে কি বর্জ্য ফেলবেন ?

ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কি?

ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হল ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন বর্জ্যকে সঠিকভাবে সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ এবং নিষ্পত্তি (Dispose) করার প্রক্রিয়া।

ল্যাবরেটরি বর্জ্যের শ্রেণীবিভাগ:

ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন বর্জ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:

  • সংক্রামক ও বিষাক্ত বর্জ্য: রাসায়নিক পদার্থ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, মাইক্রোবায়োলজিকাল পদার্থ, প্যাথলজিক্যাল স্যাম্পল যুক্ত পদার্থ ইত্যাদি। 
  • ধারালো বর্জ্য: সূঁচ, ছুরি, কাঁচের টুকরো ইত্যাদি
  • সাধারণ বর্জ্য: কাগজ, প্লাস্টিক, টিস্যু ইত্যাদি
  • তরল বর্জ্য: ল্যাবে ব্যবহৃত মেশিনারিজ থেকে প্রাপ্ত বর্জ্য, স্টেইনিং ও ওয়াশিং এ ব্যবহৃত তরল পদার্থ।
  • পুনঃনবায়ন যোগ্য বর্জ্য: মোড়ক, প্লাস্টিক বা ধাতব কৌটা, পানির বোতোল, পলিথিন ইত্যাদি।

ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য:

ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হল:

  • মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশকে রক্ষা করা
  • সংক্রমন প্রতিহত করা
  • বর্জ্য থেকে সম্পদ পুনরুদ্ধার করা
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খরচ কমানো

ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ধাপ:

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিম্নলিখিত ধাপগুলির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:

  1. বর্জ্য শ্রেণীকরণ: ল্যাবরেটরি বর্জ্যকে তাদের ধরন, ব্যবহার ও বিপজ্জনকতার মাত্রার উপর ভিত্তি করে শ্রেণীকরণ করা হয়।
  2. বর্জ্য সংগ্রহ: বর্জ্যকে শ্রেণীকরণ করার পর, সেগুলিকে সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হয়।
  3. বর্জ্য পরিবহন: বর্জ্যকে সংগ্রহ করার পর, সেগুলিকে সঠিকভাবে পরিবহন করা হয়।
  4. বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ: বর্জ্যকে পরিবহন করার পর, সেগুলিকে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বর্জ্যকে নিরাপদভাবে নিষ্পত্তি করা যায়।
  5. বর্জ্য নিষ্পত্তি (Dispose): বর্জ্যকে প্রক্রিয়াকরণের পর, সেগুলিকে নিরাপদভাবে নিষ্পত্তি করা হয়। বর্জ্যকে নিষ্পত্তি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যপদ্ধতি:

ল্যাবরেটরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে আমরা মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি, পরিবেশের দূষনকে প্রতিরোধ করতে পারি, সংক্রমনকে প্রতিহত করতে পারি। 

আসুন আমরা এখন জেনে নেই যে ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন বর্জ্যকে কিভাবে ধাপে ধাপে নিস্পত্তি করতে হবে।

১. বর্জ্য শ্রেণীকরণ : 

বর্জ্যকে তাদের ধরন, ব্যবহার ও বিপজ্জনকতার মাত্রার উপর ভিত্তি করে শ্রেণীকরণ করা হয়। এর পর বিভিন্ন শ্রেণীর বর্জ্যকে বিভিন্ন রঙের বিনে ফেলা হয়। এই বিনগুলির রং বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।

বিনের রংবর্জ্যের ধরন/শ্রেণীউদাহরণ
হলুদ বিনসংক্রামক বর্জ্যমাইক্রোবায়োলজিকাল পদার্থ, প্যাথলজিক্যাল স্যাম্পল যুক্ত পদার্থ, গজ, ব্যান্ডেক, তুলা ইত্যাদি। অর্থাৎ যা থেকে সংক্রমন ছড়াতে পারে এমন সকল পদার্থ।
লাল বিনধারালো বর্জ্যসূঁচ, ছুরি, ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো, ব্লেড, ধারাল ধাতব ইত্যাদি।
কালো বিনসাধারণ বর্জ্য:কাগজ, প্লাস্টিক, টিস্যু, রাবার, কর্ক, কৌটা ইত্যাদি।
সবুজ বিনপুনঃনবায়ন যোগ্য বর্জ্য:মোড়ক, প্লাস্টিক বা ধাতব কৌটা, পানির বোতোল, পলিথিন, অসংক্রমিত কাপড়, গজ, তুলা ইত্যাদি।
নীল বিনতরল বর্জ্য: ল্যাবে ব্যবহৃত মেশিনারিজ থেকে প্রাপ্ত বর্জ্য, স্টেইনিং ও ওয়াশিং এ ব্যবহৃত তরল পদার্থ অন্যান্য অসংক্রমিত তরল পদার্থ।
Color coded waste bin

২. বর্জ্য সংগ্রহ:

শ্রেণীকরণ করার পর এগুলোকে পরিবহনের জন্য সংগ্রহ করা হয়। সারাদিনের কাজের শেষে বর্জগুলোকে কালার কোড অনুসরন করে প্যাকিং করতে হবে ও বির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।

৩. বর্জ্য পরিবহন:

বর্জ্যকে সংগ্রহ করার পর, সেগুলিকে সঠিকভাবে পরিবহন করা হয় ও নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে জমা করা হয় এগুলোকে সঠিক ভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য। বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বর্জগুলো সংগ্রহ, পরিবহন ও নিষ্পত্তি (Dispose)  করে থাকে প্রিজম বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থা।

৪. বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ:

বর্জ্যকে পরিবহন করার পর, সেগুলিকে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বর্জ্যকে নিরাপদভাবে নিষ্পত্তি করা যায়।সংশ্লিষ্ট সংস্থা এই কাজটি সম্পন্ন করে থাকে।

৫. বর্জ্য নিষ্পত্তি (Dispose):

বর্জ্যকে প্রক্রিয়াকরণের পর, সেগুলিকে নিরাপদভাবে নিষ্পত্তি করা হয়। বর্জ্যকে নিষ্পত্তি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। পদ্ধতিগুলো নিম্নরুপ।

  • ইনসিনারেশন: ইনসিনারেশন হল বর্জ্যকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ফেলার একটি পদ্ধতি। এটি বর্জ্যকে ধ্বংস করে এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করে।
  • ল্যান্ডফিল: ল্যান্ডফিল হল বর্জ্যকে মাটিতে পুঁতে ফেলার একটি পদ্ধতি। এটি বর্জ্যকে ধ্বংস করে না, তবে এটি পরিবেশ দূষণ রোধ করে।
  • রিসাইকেলিং: রিসাইকেলিং হল বর্জ্য থেকে নতুন পণ্য তৈরি করার একটি পদ্ধতি। এটি পরিবেশ দূষণ রোধ করে এবং সম্পদের অপচয় রোধ করে।

ল্যাবরেটরির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা:

ল্যাবরেটরিতে বর্জ্য নিষ্পত্তি করার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্জ্যকে সঠিক বিনে ফেলা এবং বর্জ্য নিষ্পত্তি করার সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। এতে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে।

ল্যাবরেটরির বর্জ্য নিষ্পত্তি করার জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলি অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত:

  • বর্জ্যকে সঠিক বিনে ফেলুন।
  • বর্জ্যকে সঠিকভাবে স্তূপ করে রাখুন।
  • বর্জ্যকে সঠিকভাবে প্যাক করুন।
  • বর্জ্যকে সঠিকভাবে পরিবহনে সাহায্য করুন।
  • বর্জ্যকে সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা করুন।

সঠিকভাবে বর্জ্য নিষ্পত্তি করে আমরা পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারি, সংক্রমনকে প্রতিহত করতে পারি এবং আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।

error: Content is protected !!