Skip to content
Home » MT Articles » ভুট্টার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। ভুট্টার জাত, উৎপত্তি ও চাষ।

ভুট্টার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। ভুট্টার জাত, উৎপত্তি ও চাষ।

ভুট্টা

ভুট্টা

ভুট্টা একটি ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ যা থেকে খাদ্যশস্য হিসেবে ভুট্টার দানা সংগ্রহ করা হয়। এর ইংরেজি নাম Maize। এর দানা গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির আকৃতির এবং এটিতে একটি শক্ত খোসা থাকে। এর খোসার রঙ সাধারণত হলুদ, সাদা, বা বাদামী হয়। ভুট্টার দানা থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়, যেমন ভাত, রুটি, খিচুড়ি, মুড়ি, পপকর্ন, কর্নফ্লেক্স, ইত্যাদি। এছাড়াও, ভুট্টার গাছ গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ভুট্টার বৈজ্ঞানিক নাম: Zea mays

ভুট্টার শ্রেণীবিন্যাস:

  • জগৎ: Plantae
  • বিভাগ: Magnoliophyta
  • শ্রেণী: Liliopsida
  • বর্গ: Poales
  • পরিবার: Poaceae
  • গণ: Zea
  • প্রজাতি: Zea mays

ভুট্টার উৎপত্তি:

ভুট্টার উৎপত্তি

ভুট্টা মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায় উৎপন্ন হয়েছিল। প্রায় ৯,০০০ বছর আগে, মেক্সিকানরা প্রথম ভুট্টার চাষ শুরু করেছিল। ভুট্টা দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভুট্টা এর জাতের নাম:

আরোও পড়ুন

টমেটোর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

ভুট্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য যা বিশ্বজুড়ে চাষ করা হয়। ভুট্টার প্রধান জাতের মধ্যে রয়েছে:

  • মাইশিগান ওয়াইন: এই জাতের ভুট্টা সবচেয়ে সাধারণ এবং সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়। এটি একটি মিষ্টি, ক্রিমি দানা যা ভাজা, সেদ্ধ, গ্রিল করা, বা পপকর্ণ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • কর্নফ্লেক্স: এই জাতের ভুট্টা কর্নফ্লেক্স তৈরির জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একটি শক্ত, নরম দানা যা ভেঙে যাওয়ার পরেও তার আকার ধরে রাখে।
  • কর্নমিল: এই জাতের ভুট্টা কর্নমিল তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ছোট, নরম দানা যা পিষে যায় এবং আটা তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • কর্নস্টার্চ: এই জাতের ভুট্টা কর্নস্টার্চ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি মসৃণ, সাদা গুঁড়া যা বিভিন্ন খাবারে thickener বা binder হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • মাইশিগান সুইট: এই জাতের ভুট্টা একটি মিষ্টি, ক্রিমি দানা যা সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু ভুট্টা হিসাবে বিবেচিত হয়।
  • কাঁচা ভুট্টা: এই জাতের ভুট্টা কাঁচা খাওয়া হয়। এটি একটি শক্ত, নরম দানা যা স্যালাড, স্ট্যু, বা অন্যান্য খাবারে যোগ করা যেতে পারে।
  • পোপকার্নের জন্য ভুট্টা: এই জাতের ভুট্টা পপকর্ণ তৈরির জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একটি বড়, নরম দানা যা ভেঙে যাওয়ার পরে একটি ফোলা, হালকা ভুট্টা তৈরি করে।

ভুট্টার অন্যান্য জাতগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ডার্ক কর্ণ: এই জাতের ভুট্টা একটি গাঢ় বাদামী দানা রয়েছে। এটি একটি মিষ্টি, ক্রিমি স্বাদ রয়েছে।
  • ফ্লোরেন্টাইন কর্ণ: এই জাতের ভুট্টা একটি দীর্ঘ, পাতলা দানা রয়েছে। এটি একটি মিষ্টি, ক্রিমি স্বাদ রয়েছে।
  • কর্নেরি কর্ণ: এই জাতের ভুট্টা একটি ছোট, গোলাকার দানা রয়েছে। এটি একটি মিষ্টি, ক্রিমি স্বাদ রয়েছে।
  • স্টাইল্ট কর্ণ: এই জাতের ভুট্টা একটি লম্বা, সরু দানা রয়েছে। এটি একটি মিষ্টি, ক্রিমি স্বাদ রয়েছে।
  • ইন্ডিয়ান কর্ণ: এই জাতের ভুট্টা একটি ছোট, গোলাকার দানা রয়েছে। এটি একটি মিষ্টি, ক্রিমি স্বাদ রয়েছে।

ভুট্টার চাষ:

ভুট্টা একটি উষ্ণ-মৌসুমী ফসল। এটি সাধারণত বসন্ত বা গ্রীষ্মে চাষ করা হয়। ভুট্টা চাষের জন্য উর্বর, জল নিষ্কাশনযোগ্য মাটি প্রয়োজন। ভুট্টার বীজ সাধারণত সারিতে বপন করা হয়। ভুট্টা গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে জল প্রয়োজন। ভুট্টা গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়া হয়। ভুট্টা গাছ সাধারণত ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ফসল পাকে।

ভুট্টার পুষ্টিগুণ:

ভুট্টার পুষ্টিগুণ

ভুট্টা একটি পুষ্টিকর খাবার যা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের একটি ভাল উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম ভুট্টায় নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান থাকে:

ভিটামিন

  • ভিটামিন এ | ৯০ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন সি | ৭ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন ই | ২ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন কে | ১ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন বি১ | ০.০৩ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি২ | ০.০৪ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি৩ | ১.৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি৫ | ০.২ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি৬ | ০.১ মিলিগ্রাম
  • ফোলেট | ১২ মাইক্রোগ্রাম

খনিজ উপাদান

  • পটাশিয়াম | ৪১০ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম | ৩২ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম | ৭ মিলিগ্রাম
  • আয়রন | ০.৭ মিলিগ্রাম
  • জিঙ্ক | ০.৭ মিলিগ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ | ০.৭ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস | ১০০ মিলিগ্রাম

ভুট্টা একটি ভালো কার্বোহাইড্রেট উৎস যা শরীরকে শক্তি প্রদান করে। এটি একটি ভালো প্রোটিন উৎসও যা পেশী গঠন এবং মেরামত করতে সাহায্য করে। ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এছাড়াও, ভুট্টায় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।

ভুট্টার উপকারিতা:

ভুট্টার উপকারিতা

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: 

ভুট্টায় পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের একটি ভালো উৎস:

 ভুট্টায় ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকে।

হজম স্বাস্থ্য: 

ভুট্টায় থাকা ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফাইবার খাদ্যকে দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে:

 ভুট্টায় থাকা ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার খাদ্য থেকে কোলেস্টেরল শোষণ কমায়।

হার্টের স্বাস্থ্য:

 ভুট্টায় থাকা ফাইবার, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার রক্তচাপ কমায়, কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তনালীগুলিকে সুরক্ষিত করে। ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তনালীগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, যা হার্টের রোগের কারণ হতে পারে।

ডায়াবেটিস: 

ভুট্টায় থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফাইবার খাদ্য থেকে শর্করা শোষণ কমায়।

শক্তি: 

ভুট্টায় থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরকে শক্তি প্রদান করে। কার্বোহাইড্রেট শরীরের প্রধান জ্বালানী উৎস।

ভুট্টার অপকারিতা:

ভুট্টার অপকারিতা

ভুট্টা একটি সাধারণ এবং নিরাপদ খাবার। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ভুট্টার কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা হল:

  • অ্যালার্জি: ভুট্টা একটি সাধারণ অ্যালার্জেন। ভুট্টা থেকে তৈরি খাবার, যেমন পপকর্ণ, কর্নফ্লেক্স, এবং কর্নমিল, খেলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, এবং বমি বমি ভাব।
  • গ্যাস এবং ফোলাভাব: ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার হজম হতে সময় লাগে, যা গ্যাস এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।
  • ওজন বৃদ্ধি: ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তির উৎস, তবে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস: ভুট্টায় গ্লুকোজ থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ভুট্টা খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।

ভুট্টার অপকারিতা এড়াতে, এটিকে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

এখানে কিছু টিপস রয়েছে যা ভুট্টার অপকারিতা কমাতে সাহায্য করতে পারে:

  • ভুট্টা পরিমিত পরিমাণে খাবেন।
  • ভুট্টা সেদ্ধ বা গ্রিল করে খাবেন।
  • পপকর্ণকে অতিরিক্ত তেল বা লবণ দিয়ে ভাজবেন না।
  • ডায়াবেটিস রোগীরা ভুট্টা খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলবেন।
error: Content is protected !!