Skip to content
Home » MT Articles » যক্ষা রোগ কি? যক্ষা রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা।

যক্ষা রোগ কি? যক্ষা রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা।

যক্ষা

যক্ষা (টিবি)

যক্ষা (টিবি) একটি সংক্রামক রোগ যা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি সাধারণত ফুসফুসে আক্রমণ করে, তবে এটি শরীরের যেকোনো অংশকেও প্রভাবিত করতে পারে, যেমন কিডনি, মেরুদণ্ড এবং মস্তিষ্ক।

যক্ষার দুটি প্রধান ধরন রয়েছে:

  • সক্রিয় টিবি: যক্ষার লক্ষণগুলি উপস্থিত থাকে।
  • সুপ্ত টিবি: যক্ষার লক্ষণগুলি দেখা দেয় না।

যক্ষা রোগের (সক্রিয় টিবির) লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি (এক নাগাড়ে ৩ সপ্তাহের বেশি)
  • কাশির সাথে রক্ত
  • শ্বাসকষ্ট
  • বুকে ব্যথা
  • জ্বর (বিকেলের দিকে এবং অল্প পরিমাণ)
  • ঘাম
  • ওজন হ্রাস

সুপ্ত টিবির কোন লক্ষণ নেই।

যক্ষার চিকিৎসা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে হয়। সক্রিয় টিবির জন্য, অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ছয় মাসের জন্য নেওয়া হয়। সুপ্ত টিবির জন্য, অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত তিন মাসের জন্য নেওয়া হয়।

যক্ষার রোগের কারণ:

যক্ষা রোগের কারণ

যক্ষার রোগের কারণ হল মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ফুসফুসে আক্রমণ করে, তবে এটি শরীরের যেকোনো অংশকেও প্রভাবিত করতে পারে।

যক্ষার সংক্রমণ সাধারণত বায়ুবাহিত। যখন একজন সংক্রামিত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি দেয়, তখন বাতাসে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। অন্য কেউ এই ব্যাকটেরিয়াযুক্ত বাতাসে শ্বাস নিলে তারা সংক্রমিত হতে পারে।

যক্ষা রোগ নির্ণয়:

যক্ষা রোগ নির্ণয়ের জন্য বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করা যেতে পারে।

  • কফ পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় রোগীর কফের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার জন্য পরীক্ষা করা হয় (Sputum for AFB).
  • ত্বকের পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় রোগীর বাহুতে একটি ছোট ইনজেকশন দেওয়া হয়। যদি রোগীর শরীরে যক্ষা রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি থাকে, তাহলে ইনজেকশনের জায়গায় একটি ফোলাভাব দেখা দেবে (Mantoux Test)
  • চিত্রগ্রহণ পরীক্ষা (ইমেজিং টেষ্ট): এই পরীক্ষাগুলি ফুসফুসে বা শরীরের অন্যান্য অংশে যক্ষা রোগের উপস্থিতি পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে:
    • এক্স-রে
    • সিটি স্ক্যান
    • এমআরআই

যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য কোন একক পরীক্ষা যথেষ্ট নয়। সাধারণত, কয়েকটি পরীক্ষার একটি সমন্বয় ব্যবহার করা হয়।

যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য অন্যান্য পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • রক্ত পরীক্ষা: এই পরীক্ষাগুলি রোগীর শরীরে যক্ষা রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয় (Anti -TB IgG.IgM,IgA)
  • মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিসের জন্য কালচার পরীক্ষা: এই পরীক্ষাগুলি ব্যাকটেরিয়াকে বৃদ্ধি করতে এবং সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
  • PCR Test

Gene Xpert:

জিনএক্সপার্ট হল একটি স্বয়ংক্রিয় ডায়গনিস্টিক পরীক্ষা যা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (এমটিবি) ডিএনএ এবং রিফাম্পিসিন প্রতিরোধের সনাক্ত করতে পারে। এটি একটি কার্টিজ-ভিত্তিক নিউক্লিক অ্যাসিড পরিবর্ধন পরীক্ষা (NAAT) যা দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

জিনএক্সপার্ট পরীক্ষার জন্য, রোগীর কফের নমুনা একটি বিশেষ কার্টিজে সংগ্রহ করা হয়। কার্টিজটি একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে স্থাপন করা হয়, যা এমটিবি ডিএনএ এবং রিফাম্পিসিন প্রতিরোধের জন্য পরীক্ষা করে। পরীক্ষার ফলাফল সাধারণত 30 মিনিটের মধ্যে পাওয়া যায়।

জিনএক্সপার্ট পরীক্ষার বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। এটি দ্রুত এবং নির্ভুল, এবং এটি এমটিবি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সনাক্ত করতে পারে। এটি বিশেষ করে সুপ্ত যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য কার্যকর।

জিনএক্সপার্ট পরীক্ষাটি বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি যক্ষ্মা রোগের দ্রুত এবং নির্ভুল নির্ণয়ের মাধ্যমে রোগের বিস্তার এবং মৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বাংলাদেশে জিনএক্সপার্ট পরীক্ষাটি বেশ কয়েকটি সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন

দাঁত তুললে কি সত্যিই চোখের সমস্যা হয়?

যক্ষার রোগের চিকিৎসা/প্রতিকার:

যক্ষার রোগের চিকিৎসা

যক্ষার রোগের প্রতিকার হল অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা। সক্রিয় যক্ষার জন্য, অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ছয় মাসের জন্য নেওয়া হয়। সুপ্ত যক্ষার জন্য, অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত তিন মাসের জন্য নেওয়া হয়।

যক্ষার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলি হল:

  • রিফাম্পিসিন
  • ইথামবুটোল
  • আইসোনিয়াজিড
  • পিরাজিনামাইড
  • স্ট্রেপ্টোমাইসিন

যক্ষার চিকিৎসার সময়, রোগীদের প্রতিদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকগুলি সঠিকভাবে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যাতে যক্ষা সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয়।অবশ্যই একজন রেজিস্ট্রাড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা উচিৎ।

যক্ষা রোগের জটিলতা:

যক্ষার জটিলতাগুলি রোগের তীব্রতা, রোগীর বয়স এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং রোগের চিকিৎসার উপর নির্ভর করে। যক্ষার কিছু সাধারণ জটিলতাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ফুসফুসের জটিলতা: যক্ষা ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে ফুসফুসের ক্ষত, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ফুসফুস ফেইলর হতে পারে।
  • অন্যান্য অঙ্গের জটিলতা: যক্ষা শরীরের অন্যান্য অঙ্গকেও প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে কিডনির ক্ষতি, হাড়ের ক্ষতি, মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং যকৃতের ক্ষতি হতে পারে।
  • জলশূন্যতা: যক্ষায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই কাশি, ডায়রিয়া এবং বমি বমি ভাব অনুভব করেন, যা পানি শূন্যতার কারণ হতে পারে।
  • রক্তশূন্যতা: যক্ষায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই রক্তাল্পতা অনুভব করেন।
  • অন্যান্য সংক্রমণ: যক্ষার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলি অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

যক্ষার জটিলতাগুলি প্রতিরোধের জন্য, রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।

যক্ষার জটিলতাগুলি এবং এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ফুসফুসের জটিলতার লক্ষণ:
    • খাঁচখাঁচ শব্দ
    • কাশি
    • রক্ত মিশ্রিত কফ
    • বুকে ব্যথা
    • শ্বাসকষ্ট
  • অন্যান্য অঙ্গের জটিলতার লক্ষণ:
    • কিডনির ব্যথা
    • হাড়ের ব্যথা
    • মাথাব্যথা
    • বমি বমি ভাব
    • বমি
  • পানি শূন্যতার লক্ষণ:
    • পায়ের গোড়ালিতে ফোলাভাব
    • শুষ্ক ত্বক
    • ঘাম না হওয়া
    • দুর্বলতা
  • রক্তশূন্যতার লক্ষণ:
    • দুর্বলতা
    • ক্লান্তি
    • ঘন ঘন মাথা ঘোরা
    • চোখের সাদা অংশে হলুদ রঙ
  • অন্যান্য সংক্রমণের লক্ষণ:
    • জ্বর
    • ঠান্ডা লাগা
    • গলা ব্যথা
    • মাথাব্যথা

যক্ষার জটিলতাগুলি সন্দেহ হলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার লক্ষণগুলির মূল্যায়ন করবেন এবং একটি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করবেন।

যক্ষার জটিলতাগুলির চিকিৎসা রোগের ধরণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে, হাসপাতালে ভর্তি এবং জটিলতার চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

যক্ষা রোগীর খাবার তালিকা:

যক্ষার রোগের খাবার

যক্ষার রোগীদের জন্য একটি সুষম খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই খাবারগুলি রোগীদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে এবং তাদের শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।

যক্ষার রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মধ্যে নিম্নলিখিত খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:

  • ফল এবং শাকসবজি: ফল এবং শাকসবজিতে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • প্রোটিন: প্রোটিন পেশী এবং টিস্যুগুলির মেরামত এবং পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
  • কার্বোহাইড্রেট: কার্বোহাইড্রেট শক্তির জন্য প্রয়োজনীয়।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি: স্বাস্থ্যকর চর্বি হৃদয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

যক্ষার রোগীদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবারগুলি বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে, যেমন:

  • কমলালেবু এবং অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ব্রোকলি এবং অন্যান্য ক্রুসিফেরাস শাকসবজি: ক্রুসিফেরাস শাকসবজিতে সালফোরাফেন রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
  • টক দই: টক দইতে প্রোবায়োটিক রয়েছে, যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • বাদাম এবং বীজ: বাদাম এবং বীজে ভিটামিন, খনিজ এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে।

যক্ষার রোগীদের কিছু খাবার এড়ানো উচিত, যেমন:

  • অতিরিক্ত চিনি: অতিরিক্ত চিনি ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাত খাবারে সাধারণত অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং ক্যালোরি থাকে।
  • ফ্যাটযুক্ত মাংস: ফ্যাটযুক্ত মাংস কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে।
  • অ্যালকোহল: অ্যালকোহল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে।

যক্ষার রোগীদের জন্য একটি সুষম খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই খাবারগুলি রোগীদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে এবং তাদের শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।

যক্ষার রোগীদের জন্য একটি সম্ভাব্য খাবারের তালিকা নিম্নরূপ:

  • নাস্তা: ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ, টক দই বা ওটমিল।
  • দুপুরের খাবার: সালাদ, ভাত, মাছ বা মুরগির মাংস, সবজি।
  • রাতের খাবার: সবজি স্টু, মাছ বা মুরগির মাংস, ভাত বা আলু।
  • স্ন্যাকস: ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ বা টক দই।

এই তালিকাটি শুধুমাত্র একটি নির্দেশিকা। একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ রোগীদের জন্য একটি ব্যক্তিগতকৃত খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।

error: Content is protected !!