চোখের ছানি কি? কেন হয়?
চোখের ছানি (Cataracts) হল চোখের লেন্সের একটি অস্বচ্ছ বা ঘোলাটে হয়ে যাওয়া অবস্থা। চলুন জেনে নেই চোখের ছানি কেন হয়? চোখের ছানির চিকিৎসা কি? চোখের ছানি প্রতিরোধের কিছু উপায় ? কোন ধরনের খাবার খেলে চোখের ছানি হওয়ার সমভাবনা কমে যাবে?
চোখের ছানি কেন হয়?
চোখের লেন্সটি ক্যামেরার লেন্সের মতো কাজ করে এবং আলোকে ফোকাস করে রেটিনায়। যখন লেন্সটি ঘোলাটে হয়ে যায়, তখন আলো সঠিকভাবে ফোকাস হতে পারে না এবং দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। এটা যেমন ক্যামেরার লেন্সে ধুলো লেগে গেলে ছবি ঝাপসা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি চোখের লেন্সে ছানি হলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।

ছানির অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল বয়স। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের লেন্সের প্রাকৃতিকভাবে ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- আঘাত: চোখে আঘাত লাগলে ছানি হতে পারে।
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীদের ছানি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- স্টেরয়েড ব্যবহার: দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করলেও ছানি হতে পারে।
- অন্যান্য চোখের রোগ: কিছু চোখের রোগ ছানির কারণ হতে পারে।
চোখের ছানির লক্ষণ
- দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া: সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
- আলোর চারপাশে বর্ণবলয় দেখা: বিশেষ করে রাতে।
- রঙগুলো ফিকে দেখা: রং স্বাভাবিকের চেয়ে ফিকে বা হলুদ দেখাতে পারে।
- দৃষ্টি ক্রমাগত পরিবর্তন হওয়া: দিনে একাধিকবার চশমা বদলাতে হতে পারে।
চিকিৎসা
বর্তমানে ছানির সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হল অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ঘোলাটে লেন্সটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং তার জায়গায় একটি কৃত্রিম লেন্স স্থাপন করা হয়। এই অস্ত্রোপচারটি সাধারণত খুবই সফল এবং দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।চোখের ছানি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা যদিও সম্ভব নয়, তবে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আপনি এর ঝুঁকি কমাতে পারেন।
আরোও পড়ুন
চোখ সুস্থ রাখতে ৮ টি খাবার।
চোখের ছানি প্রতিরোধে কিছু উপায়:
- সুষম খাদ্য: ফল, শাকসবজি, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান। এই খাবারগুলি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- সুর্যের আলো থেকে চোখ রক্ষা: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের জন্য ক্ষতিকর। সানগ্লাস পরুন যা UVA এবং UVB রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করে।
- ধূমপান পরিহার: ধূমপান চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- নিয়মিত চোখের পরীক্ষা: নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করানো খুবই জরুরী। এতে ছানি শুরু হওয়ার আগেই ধরা পড়তে পারে।
- ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: এই দুটি রোগ ছানির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই এই রোগগুলি যদি থাকে তবে তা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- চোখে আঘাত এড়ানো: চোখে কোনো আঘাত লাগলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছানি হলে কী খাবার খাওয়া উচিত?
ছানি হলে খাবারের মাধ্যমে সরাসরি চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তবে, একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে।
ছানি প্রতিরোধে ও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিছু খাবার:
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: এই খাবারগুলি মুক্ত র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চোখকে রক্ষা করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- গাজর
- পালং শাক
- শিম
- কাঁঠাল
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার: এই ফ্যাটি এসিড চোখের শুষ্কতা এবং অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- মাছ (স্যামন, টুনা)
- বাদাম (আখরোট, বাদাম)
- বীজ (চিয়া সিড, ফ্লাক্স সিড)
এছাড়াও, নিম্নলিখিত খাবারগুলিও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:
- লেবু: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা কলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে।
- হলুদ: এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে।
মনে রাখবেন:
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরূরি।
- কোনো একটি খাবারকে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
- ছানি হলে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এই তথ্যটি শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য এবং কোনো চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।