Skip to content
Home » MT Articles » অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কি? এই অ্যানিমিয়ার লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কি? এই অ্যানিমিয়ার লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কি?

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হলো একটি রোগ যেখানে অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্তকণিকা তৈরি করে না। অস্থিমজ্জা হলো আমাদের হাড়ের ভেতরের নরম, স্পঞ্জি টিস্যু যা রক্তকণিকা তৈরি করে। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার বাংলা প্রতিশব্দ অবর্ধক রক্তশূন্যতা (ইংরেজি: Aplastic anemia). অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হলে, অস্থিমজ্জা লাল রক্তকণিকা, সাদা রক্তকণিকা এবং প্লেটলেট তৈরি করতে পারে না।

সাধারণত রক্তশূন্যতা বলতে কেবল লোহিত রক্তকণিকার অভাব বোঝালেও, অবর্ধক রক্তশূন্যতায় (Aplastic anaemia) তিন ধরনের রক্তকোষের (লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা এবং অণুচক্রিকা) উৎপাদনই হ্রাস পায়।

এটি কৈশোর ও কুড়ি বছর বয়সের মানুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে বয়স্কদের মধ্যেও এটি সাধারণ। এটি বংশগতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা রাসায়নিক, ঔষধ বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সংস্পর্শের কারণে ঘটতে পারে। তবে প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই এর কারণ নিরূপণ করা যায়নি।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার লক্ষণ কি কি?

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার লক্ষণ

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ক্লান্তি
  • শ্বাসকষ্ট
  • দ্রুত হৃৎস্পন্দন
  • মাথাব্যথা
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • সহজে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া
  • মুখ বা মাড়ি থেকে রক্তপাত
  • নাক দিয়ে রক্তপাত
  • যোনি থেকে রক্তপাত
  • সংক্রমণ

প্রকারভেদ:

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়াকে দুটি প্রধান প্রকারে ভাগ করা যায়:

  • পারিবারিক অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া: জন্মগতভাবে আপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হওয়া।
  • অর্জিত অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া: জীবনের যেকোনো সময় অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হওয়া।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কেন হয়?

কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অটোইমিউন রোগ: এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের নিজস্ব কোষগুলিকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে।
  • ভাইরাল সংক্রমণ: হেপাটাইটিস, এপস্টাইন-বার ভাইরাস (Epstein-Barr virus – EBV ) এবং পারভোভাইরাসের (Pavro Virus) মতো ভাইরাসের সংক্রমণে আপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।
  • রাসায়নিক: বেনজিন এবং কিছু কীটনাশক অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।
  • ওষুধ: ক্লোরামফেনিকল এবং কিছু ক্যান্সারের ওষুধ আপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।
  • বিকিরণ: উচ্চ মাত্রার বিকিরণ অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার রোগ নির্ণয়:

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হলো একটি রোগ যেখানে অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্তকণিকা তৈরি করে না। রোগ নির্ণয়ের জন্য, ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন, যার মধ্যে রয়েছে:

১) রক্ত পরীক্ষা:

  • সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা (CBC): লাল রক্তকণিকা, সাদা রক্তকণিকা এবং প্লেটলেটের সংখ্যা পরীক্ষা করা হয়।
  • রিটিকুলোসাইট গণনা: রক্তে অপরিণত লাল রক্তকণিকার সংখ্যা পরীক্ষা করা হয়।
  • হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস: হিমোগ্লোবিনের ধরন পরীক্ষা করা হয়।
  • ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজেনেস (LDH) পরীক্ষা: এটি লাল রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার পরিমাণ পরীক্ষা করে।

২) অস্থি মজ্জা পরীক্ষা:

  • অস্থি মজ্জা অ্যাস্পিরেশন: অস্থি মজ্জা থেকে তরল নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
  • অস্থি মজ্জা বায়োপসি: অস্থি মজ্জা থেকে টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

অন্যান্য পরীক্ষা:

  • ভাইরাল সংক্রমণের পরীক্ষা: হেপাটাইটিস, এপস্টাইন-বার ভাইরাস এবং পারভোভাইরাসের মতো ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করা হয়।
  • জিনগত পরীক্ষা: পারিবারিক আপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া নির্ণয়ের জন্য।

রোগ নির্ণয়ের সময় ডাক্তার নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করবেন:

  • রোগীর লক্ষণ
  • রক্ত পরীক্ষার ফলাফল
  • অস্থি মজ্জা পরীক্ষার ফলাফল
  • অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফল
  • রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস

আরোও পড়ুন

পলিসাইথেমিয়া ভেরা: রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার রোগ

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া চিকিৎসা:

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া চিকিৎসা

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে।

প্রধান চিকিৎসাগুলির মধ্যে রয়েছে:

১) রক্ত সঞ্চালন:

  • লাল রক্তকণিকা সঞ্চালন অ্যানিমিয়া থেকে উদ্ভূত ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলি উন্নত করতে পারে।
  • প্লেটলেট সঞ্চালন রক্তপাতের ঝুঁকি কমাতে পারে।
  • সাদা রক্তকণিকা সঞ্চালন সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে।

২) অ্যান্টিবায়োটিক:

সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়।

৩) ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধ:

  • অটোইমিউন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • এই ওষুধগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমন করে, যা অস্থিমজ্জাকে আক্রমণ করা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
  • সাধারণত ব্যবহৃত ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে কর্টিকোস্টেরয়েড, অ্যান্টি-থাইমোসাইট গ্লোবুলিন (ATG), এবং সাইক্লোস্পোরিন।

৪) অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন:

  • এটি অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা।
  • এই প্রক্রিয়াটিতে, রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত অস্থি মজ্জা সুস্থ অস্থি মজ্জা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়।
  • অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া, এবং এটি শুধুমাত্র গুরুতর অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্যই ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য চিকিৎসা:

  • রক্ত ​​উৎপাদনকারী ওষুধ:
  • জিন থেরাপি:
  • অ্যান্টি-আপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া অ্যান্টিবডি:

চিকিৎসার খরচ:

চিকিৎসার খরচ নির্ভর করে রোগের তীব্রতা, চিকিৎসার ধরণ এবং চিকিৎসার স্থানের উপর। তবে অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন একটি ব্যয়বহুল উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া।বাংলাদেশে অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা মত খরচ হতে পারে।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া চিকিৎসার সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:

  • সংক্রমণ
  • রক্তপাত
  • অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার
  • অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে, গ্রাফ্ট বনাম হোস্ট রোগ (GVHD)

প্রতিরোধ:

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া প্রতিরোধের কোন নিশ্চিত উপায় সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি । তবে, ভাইরাল সংক্রমণ এড়িয়ে চলা এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক এবং বিকিরণের সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

This Article is written with the help of Gemini

error: Content is protected !!