Skip to content
Home » MT Articles » পাংগাস মাছ এর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও সুস্বাদু রেসিপি।

পাংগাস মাছ এর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও সুস্বাদু রেসিপি।

পাংগাস মাছ

পাংগাস মাছ

বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় মাছ হলো পাংগাস। পাংগাস মাছ পুষ্টিগুণে ভরপুর। পাংগাস মাছ দেশি এবং বৈদেশিক দুই ধরণের হয়।দেশি মাছটি সাধারণত ছোট হয় এবং এর পিঠ কালচে রঙের হয়। বৈদেশিক পাংগাস মাছ বড় হয় এবং এর পিঠ রুপালি রঙের হয়।পাংগাস মাছ প্রোটিন, ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস। এটি ক্যালোরি এবং চর্বি-তে কম। পাংগাস মাছ ঝাল, মাখা, ভাজা এবং স্যুপ সহ বিভিন্ন ধরণের পদে ব্যবহার করা যায়।

পাংগাস মাছের পুষ্টিগুণ:

পাংগাস মাছের পুষ্টি উপাদান (Pangas Fish Nutritional Value per 100g Serving)

পুষ্টিউপাদানপরিমাণদৈনিক চাহিদা (DV)
Calories162 kcal8%
Protein22.4 g45%
Total Fat4.5 g7%
Saturated Fat1.5 g7%
Monounsaturated Fat2.0 g
Polyunsaturated Fat1.0 g
Cholesterol70 mg23%
Sodium65 mg3%
Potassium530 mg12%
Carbohydrates0 g0%
Fiber0 g0%
Sugar0 g
Vitamin A100 IU2%
Vitamin C0 mg0%
Vitamin D360 IU90%
Vitamin E0.5 mg3%
Vitamin B122 mcg8%
Calcium12 mg1%
Iron0.8 mg4%

পাংগাস মাছের উপকারিতা:

পাংগাস মাছের উপকারিতা

পুষ্টি:

  • প্রোটিনের উচ্চ উৎস: পাংগাস মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা পেশী গঠন ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য।
  • কম চর্বি: এতে স্যাচুরেটেড এবং মোট চর্বির পরিমাণ কম, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড: মস্তিষ্ক ও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • ভিটামিন এবং খনিজ: ভিটামিন A, D, B12, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজের ভালো উৎস।

আরোও পড়ুন

গলদা চিংড়ির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য।

স্বাস্থ্য:

  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং কম চর্বির উপস্থিতি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ও কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
  • চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: ভিটামিন A চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ভিটামিন C রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • পেশী বৃদ্ধি ও মেরামত: প্রোটিন পেশী গঠন ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য।

পাংগাস মাছ এর অপকারিতা:

১)পারদ: কিছু পাংগাস মাছে পারদ থাকতে পারে, যা উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে, নিয়মিত পরিমাণে খাওয়া গেলে ঝুঁকি কম থাকে।

২)পরিবেশগত উদ্বেগ: কিছু পাংগাস মাছের খামার পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।

পাংগাস মাছের খাবার তালিকা:

পাংগাস মাছ সর্বভুক, অর্থাৎ এরা মাংসাশী এবং উদ্ভিদভোজী উভয় খাবারই খেয়ে থাকে।

প্রাকৃতিক পরিবেশে, পাংগাস মাছ সাধারণত নিম্নলিখিত খাবার খায়:

  • প্লাঙ্কটন: ছোট জলজ প্রাণী, যেমন শেত্তলা, ড্যাফনিয়া, এবং রোটিফার।
  • কীটপতঙ্গের লার্ভা: মশা, মাছি, এবং ড্রাগনফ্লাইয়ের লার্ভা।
  • ছোট মাছ: গুপি, মোলা, এবং বেটার মতো ছোট মাছ।
  • জলজ উদ্ভিদ: শেওলা, জলজ লিলি, এবং জলজ ঘাস।
  • ডিট্রিটাস: পানিতে পচা জৈব পদার্থ।

খামারে, পাংগাস মাছকে সাধারণত নিম্নলিখিত খাবার খাওয়ানো হয়:

  • পেললেটেড খাবার: এই খাবারগুলি বিশেষভাবে পাংগাস মাছের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য তৈরি করা হয়। এগুলোতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে।
  • চালের খোসা: এটি একটি সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার যা কিছু প্রোটিন এবং শক্তি সরবরাহ করে।
  • সয়াবিনের খোসা: এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস।
  • মাছের তেল: এটি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে।
  • ভিটামিন এবং খনিজ: এগুলি মাছের স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।

পাংগাস মাছের খাবার তৈরি করার সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:

  • পুষ্টি: খাবারে মাছের সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকতে হবে।
  • পাচনযোগ্যতা: মাছের জন্য খাবার সহজে হজম করা যায় তা নিশ্চিত করা উচিত।
  • পরিবেশগত প্রভাব: খাবার উৎপাদনের পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনা উচিত।

বাংলাদেশে, পাংগাস মাছের খাবার তৈরির জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত উপাদান ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চালের খোসা, সয়াবিনের খোসা, এবং মাছের তেল। কিছু খামারে পোকামাকড়ের লার্ভা এবং জলজ উদ্ভিদও ব্যবহার করা হয়।

পাংগাস মাছের খাবারের দাম বিভিন্ন উপাদান এবং উৎপাদন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে।

পাংগাস মাছের খাবার কেনার সময়, নিশ্চিত করুন যে এটি একটি সম্মানিত প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে এসেছে এবং এটি মাছের জন্য সুষম এবং পুষ্টিকর।

পাংগাস মাছের রেসিপি:

পাংগাস মাছের ভুনা:

উপকরণ:

  • পাংগাস মাছ – ১ কেজি (মাঝারি টুকরো করে কাটা)
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
  • আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো – ১ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়ো – ১ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • তেল – পরিমাণমতো
  • ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য

প্রণালী:

  1. মাছের টুকরোগুলোতে লবণ, হলুদ গুঁড়ো ও অল্প তেল মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
  2. একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
  3. এতে আদা-রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো ও ধনে গুঁড়ো দিয়ে কষিয়ে নিন।
  4. মসলা কষানো হলে মাছের টুকরোগুলো দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  5. অল্প পানি দিয়ে ঢেকে মাছ সেদ্ধ করে নিন।
  6. মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

পরিবেশন:

গরম ভাতের সাথে পাংগাস মাছের ভুনা পরিবেশন করুন।

টিপস:

  • আরও সুস্বাদু করার জন্য মাছে অল্প করে আদা-রসুন বাটা ও হলুদ গুঁড়ো মাখিয়ে রাখতে পারেন।
  • ঝাল পছন্দ করলে মরিচ গুঁড়োর পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারেন।
  • মাছের ঝোল ঘন করে রান্না করতে চাইলে অল্প পানি দিয়ে রান্না করুন।
  • ধনেপাতার পরিবর্তে কাঁচা মরিচ কুচি ছড়িয়েও পরিবেশন করতে পারেন।

পাংগাস মাছের ঝোল:

উপকরণ:

  • পাংগাস মাছ – ১ কেজি (মাঝারি টুকরো করে কাটা)
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
  • আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • টমেটো কুচি – ১ কাপ (ঐচ্ছিক)
  • হলুদ গুঁড়ো – ১ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়ো – ১-২ চা চামচ (স্বাদ অনুযায়ী)
  • জিরা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • তেল – পরিমাণমতো
  • ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য
  • কাঁচা মরিচ – 2-3 টি (ফাটা)
পাংগাস মাছের ঝোল

প্রণালী:

  1. মাছের টুকরোগুলোতে লবণ, হলুদ গুঁড়ো ও অল্প তেল মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
  2. একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
  3. এতে আদা-রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো ও ধনে গুঁড়ো দিয়ে কষিয়ে নিন।
  4. টমেটো কুচি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন (টমেটো ব্যবহার না করলে এই পদক্ষেপটি বাদ দিন)।
  5. মসলা কষানো হলে মাছের টুকরোগুলো দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  6. 2-3 কাপ পানি দিয়ে ঢেকে মাছ সেদ্ধ করে নিন।
  7. মাঝে মাঝে ঝোল নেড়েচেড়ে দিন।
  8. মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে, ঝোল ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন।
  9. ধনেপাতা কুচি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

পরিবেশন:

গরম ভাতের সাথে পাংগাস মাছের ঝোল পরিবেশন করুন।

টিপস:

  • ঝোল আরও ঝাল পছন্দ করলে মরিচ গুঁড়োর পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারেন।
  • ঝোলের স্বাদ আরও বাড়ানোর জন্য তেজপাতা, লবঙ্গ, এলাচ ও দারচিনি ব্যবহার করতে পারেন।
  • ধনেপাতার পরিবর্তে কাঁচা মরিচ কুচি ছড়িয়েও পরিবেশন করতে পারেন।

পাংগাস মাছ ভাজা:

উপকরণ:

  • পাংগাস মাছ – ১ কেজি (মাঝারি টুকরো করে কাটা)
  • পেঁয়াজ কুচি – ১/২ কাপ
  • আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়ো – ১/৪ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়ো – ১/৪ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • সুজি – ২ টেবিল চামচ
  • বেসন – ২ টেবিল চামচ
  • তেল – ভাজার জন্য
  • ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য

প্রণালী:

  1. মাছের টুকরোগুলোতে লবণ, হলুদ গুঁড়ো ও অল্প তেল মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
  2. একটি পাত্রে সুজি, বেসন, লবণ, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো ও ধনে গুঁড়ো মিশিয়ে নিন।
  3. অল্প অল্প করে পানি দিয়ে মসৃণ ব্যাটার তৈরি করে নিন।
  4. একটি কড়াইতে তেল গরম করে মাছের টুকরোগুলো ব্যাটারে ডুবিয়ে ভেজে নিন।
  5. মাছের দুই পাশ হালকা বাদামী করে ভেজে তুলে নিন।
  6. গরম গরম পরিবেশন করুন ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে।
ভাজা

পরিবেশন:

গরম ভাত, রুটি, লুচি, পরোটা, খিচুড়ি ইত্যাদির সাথে পাংগাস মাছের ভাজা পরিবেশন করুন।

টিপস:

  • মাছের ভাজা আরও মুচমুচে করতে চাইলে ব্যাটারে বেকিং পাউডার অল্প পরিমাণে মিশিয়ে নিতে পারেন।
  • ঝাল পছন্দ করলে মরিচ গুঁড়োর পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারেন।
  • ভাজার সময় তেল বেশি গরম হলে মাছ পুড়ে যেতে পারে, তাই মাঝারি আঁচে ভাজা ভালো।
  • ধনেপাতার পরিবর্তে কাঁচা মরিচ কুচি ছড়িয়েও পরিবেশন করতে পারেন।

This article is written with the help of Gemini

error: Content is protected !!