Skip to content
Home » MT Articles » ভাইরাল জ্বর কি, এর লক্ষণ কি কি ? ভাইরাল জ্বর হলে করণীয় কি ?

ভাইরাল জ্বর কি, এর লক্ষণ কি কি ? ভাইরাল জ্বর হলে করণীয় কি ?

ভাইরাল জ্বর

ভাইরাল জ্বর বা ভাইরাস জ্বর বা ফ্লু: 

ভাইরাস ফিভার বা ভাইরাল জ্বর বছরের যেকোনো সময় হতে পারে। তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। এটি সাধারণত ছোঁয়াচে হয়ে থাকে। ক্রমে এই ভাইরাসজনিত রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে একসঙ্গে পরিবারের অনেকেই আক্রান্ত হতে পারে। জ্বরের শুরুতে এর প্রকৃতি নিরূপণ করা না গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্বরের ধরন ও বিভিন্ন উপসর্গ দেখেই ভাইরাল জ্বর নির্ণয় করা যায়।ভাইরাল জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি আপনা-আপনি সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। ভাইরাসজনিত জ্বরের কোনো প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়।

ভাইরাল জ্বর এর লক্ষণ:

ভাইরাল জ্বর এর লক্ষণ
  • হঠাৎ জ্বর আসা ও ৫-৭ দিন ধরে চলতে থাকা।
  • শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  • জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করা।
  • জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকবে।
  • নাক দিয়ে পানি পড়া
  • জ্বরের সঙ্গে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • তীব্র শরীর ব্যথা হবে।
  • গলায় প্রচুর ব্যথা হতে পারে।
  • জ্বরের মাত্রা খুব বেশি হলে বাচ্চারা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

ভাইরাল জ্বর হলে করণীয়:

  • জ্বর থাকলে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
  • জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে বারবার পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে দিতে পারেন।
  • খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কারণ পুষ্টিকর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
  • অন্যান্য  উপসর্গ দেখা দিলে সেই অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
  • বিশ্রামে থাকতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। প্রচুর ফলমূল খেতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।

আরোও পড়ুন

আম খাওয়ার উপকারিতা ও আমের পুষ্টিগুণ।

ভাইরাল জ্বরে সাবধানতা:

  • ভাইরাস জ্বরের কারণে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে । যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন না করলে ভাইরাল জ্বরও নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়া, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি। এমনকি মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করতে পারে।
  • শিশুদের যথা সময়ে মাম্পস, টিটেনাস, চিকেন পক্স, পোলিও, হেপাটাইটিস, স্মল পক্স এর টিকা দিতে হবে।
  • বাড়িতে পোষা কুকুরকে নিয়মিত জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  • ভাইরাল জ্বর হলে রোগীকে একটু আলাদা রাখতে হবে।
  • জ্বর হওয়ামাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জ্বর হলেই কি অ্যান্টিবায়োটিক ?

  • কোনো সুনির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিসে পৌঁছার আগেই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দিলে প্রকৃত রোগটি অনেক সময় ধরা পড়ে না। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা উচিত নয়।
  • জ্বর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিবায়োটিক দিলে বাচ্চাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি  হয় না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া  অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা উচিত নয়। মনে রাখবেন মেনিনজাইটিস বা সেপটিসেমিয়া ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে দেরি করে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে কোনো অসুবিধা নেই।

নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া কতটা ঠিক ?

বাংলাদেশে এটা একটা নিয়মিত প্রবণতা যে, জ্বর হলে নিজে নিজে প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ অনেকেই কিনে খেতে শুরু করেন।

জ্বরের প্রথমদিকে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অনেক সময় চিকিৎসকরা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ কোন ক্রমেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

এছাড়া জ্বর তিনদিনের বেশি থাকলে অথবা জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

অনেক সময় টিবি বা লিম্ফোমার জন্য শুধুমাত্র রাতের বেলায় জ্বর আসতে পারে। এরকম দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ভাইরাল জ্বর কাদের বেশি হয় ?

যাঁদের মূলত অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাঁদের এই ভাইরাল ফিভারে আক্রান্তের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে অ্যাজমা, ক্রনিক ব্রংকাইটিস, হার্টের অসুখ ও ডায়াবেটিস থাকলে এই ভাইরাস খুব সহজে আক্রমণ করতে পারে।যারা শারীরিক অসুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ খায় তাঁদের এই জ্বরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ এক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এই জ্বর শরীরকে খুব দুর্বল করে দেয়। যা থেকে জ্বরের পাশাপশি সংক্রমণের সম্ভাবনাও দ্বিগুণ বেড়ে য়ায়। বিশেষ করে চেস্ট ইনফেকশন এক্ষেত্রে বেশি হয়। এই জ্বর থেকে নিউমোনিয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।জ্বর ছেড়ে গেলেও যদি কারও দীর্ঘদিন সর্দি-কাশি, দুর্বলতা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে  অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।  

ভাইরাল জ্বর প্রতিরোধে করণীয়:

  • আশপাশের কারও জ্বর হলে তার কাছাকাছি কম যাওয়াই ভাল।
  • পরম পানিতে গোসল করুন। শিশুদের একেবারেই ঠান্ডা পানিতে গোসল করাবেন না।
  • বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাবেন না। কোনওভাবে ভিজে গেলে বাড়ি ফিরে গোসল করে নিন। 
  • প্রচুর পানি খেতে হবে। কারণ এই  জ্বর হলে শরীরে ঘাম হয় খুব বেশি, ফলে পানি মাত্রা কমে। ডাবের পানি এই দুর্বলতা কাটাতে খুবই উপকারী।
  •  প্রচুর ফল, বিশেষ করে লেবু, কমলা, মাল্ট্রা খেলে ভাল। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি ঠিক থাকে।
  • হাঁচি, কাশির সময় মুখে কনু্ই দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আরও ভাল হয় যদি মাস্ক ব্যবহার করা যায়। এতে জ্বরের ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করা যায়।

উপদেশ:

সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা:

জ্বর হলে শরীরের ভেতরে থাকা জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা লড়াই করতে শুরু করে। এসময় শরীরকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেয়া উচিত।

প্রচুর তরল পানীয় পান করা:

প্রচুর পরিমাণে তরল পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করা যায়। বিশেষ করে লেবুর পানি ও গরম পানি পান করা যেতে পারে।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ:

ভাইরাল জ্বর
মৌসুমী ফলমূল ভাইরাল জ্বর প্রতিরোধে অত্যন্ত উপকারী

জ্বরের সময় অরুচি ভাব তৈরি হলেও মৌসুমী ফলমূল বা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। তাহলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

উষ্ণ পরিবেশে থাকা:

জ্বরের সময় শুষ্ক ও উষ্ণ পরিবেশে থাকতে হবে। এই সময় পরিষ্কার ও উষ্ণ পোশাক পরা উচিত।

error: Content is protected !!