অ্যাজমা রোগ বা হাঁপানী
অ্যাজমা রোগ হল একটি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ যা শ্বাসনালীর প্রদাহ এবং সংকোচনের কারণে হয়। এটি শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে চাপ এবং বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে। অ্যাজমা রোগ প্রায়শই শৈশবে শুরু হয়, তবে এটি যেকোনো বয়সে যেকোনো ব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।অ্যাজমার সঠিক কারণ অজানা, তবে এটি জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির সংমিশ্রণের কারণে বলে মনে করা হয়। অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসনালীতে প্রদাহজনক কোষের একটি অতিরিক্ত পরিমাণ থাকে। এই কোষগুলি শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে এবং মিউকাস তৈরি করে, যা শ্বাসনালীকে আরও সংকুচিত করে।
অ্যাজমার সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- শ্বাসকষ্ট
- শুকনা কাশি
- বুকে চাপ বা ব্যথা
- মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া
- বুক থেকে শব্দ করা
- শ্বাসকষ্টের কারনে রাতে ঘুম থেকে হঠাৎ করে জেগে ওঠা
অ্যাজমা রোগ কেন হয়?
অ্যাজমা রোগ সঠিক কারণ অজানা, তবে এটি জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির সংমিশ্রণের কারণে বলে মনে করা হয়।
জেনেটিক কারণ:
অ্যাজমার জন্য কিছু জিনগত প্রবণতা রয়েছে। যদি আপনার পরিবারে কারও অ্যাজমা থাকে, তাহলে আপনার অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
পরিবেশগত কারণ:
অ্যাজমা রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশগত কারণগুলি বেশি ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- অ্যালার্জেন, যেমন ধুলাবালি, পোকামাকড়ের পশম এবং ফুলের রেণু
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
- ধূমপান
- শীত বা শুষ্ক বাতাস
- ব্যায়াম
অ্যাজমা রোগ নির্ণয়:
অ্যাজমা নির্ণয়ের জন্য আপনার ডাক্তার আপনার লক্ষণ, চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে একটি পরীক্ষা করবেন। আপনার ডাক্তার আপনার ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতেও পারে।
অ্যাজমা টেস্টের দুটি প্রধান ধরন হল:
- পিক ফ্লো মিটার পরীক্ষা: এই পরীক্ষাটি একটি ছোট, হাতে ধরার যন্ত্র ব্যবহার করে যা একজন ব্যক্তির ফুসফুসের বাতাস বের করার সর্বোচ্চ গতিকে পরিমাপ করে। একটি নিম্ন পিক ফ্লো স্কোর অ্যাজমার একটি ইঙ্গিত হতে পারে।
- স্পিরোমেট্রি: এই পরীক্ষাটি একটি বড় যন্ত্র ব্যবহার করে যা একজন ব্যক্তির ফুসফুসের বাতাস বের করার এবং শ্বাস নেওয়ার পরিমাণ এবং গতি পরিমাপ করে। একটি অস্বাভাবিক স্পিরোমেট্রি ফলাফল অ্যাজমার একটি ইঙ্গিত হতে পারে।
অন্যান্য পরীক্ষা যা অ্যাজমা নির্ণয় করতে ব্যবহার করা যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
- এক্স-রে: এই পরীক্ষাটি ফুসফুসের কাঠামো এবং আকার মূল্যায়ন করতে ব্যবহৃত হয়।
- সিটি স্ক্যান: এই পরীক্ষাটি ফুসফুসের আরও বিস্তারিত চিত্র তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
অ্যাজমা হলে করণীয়/চিকিৎসা:
- ডাক্তারের সাথে দেখা করা: যদি আপনার অ্যাজমার লক্ষণ থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলি মূল্যায়ন করবেন এবং আপনার জন্য সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন।
- ওষুধ সেবন করা: অ্যাজমার চিকিৎসার জন্য ওষুধ অপরিহার্য। আপনার ডাক্তার আপনাকে একটি ইনহেলার ওষুধ দেবেন যা শ্বাসনালীকে প্রসারিত করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আপনি অন্যান্য ওষুধও নিতে পারেন যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যালার্জেন এক্সপোজার হ্রাস করা: অ্যালার্জেন এক্সপোজার অ্যাজমার লক্ষণগুলিকে ট্রিগার করতে পারে। আপনি অ্যালার্জেন এক্সপোজার হ্রাস করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন, যেমন:
- আপনার বাড়ি এবং পরিবেশ থেকে অ্যালার্জেনগুলি অপসারণ করুন।
- অ্যালার্জেন এক্সপোজার এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- অ্যালার্জেন প্রতিরোধের ওষুধ নিন।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করা: স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করা অ্যাজমার লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- ধূমপান না করা।
অ্যাজমা অ্যাটাক হলে সাথে সাথে করণীয়:
- শান্ত থাকুন। ঘাবড়ে গেলে বা প্যানিক করলে অ্যাজমা অ্যাটাক আরও খারাপ হতে পারে।
- আপনার ইনহেলার ব্যবহার করুন। আপনার রিলিভার ইনহেলারটি ব্যবহার করুন। যদি আপনার লক্ষণগুলি 15 মিনিটের মধ্যে না কমে যায় তবে আরেকবার ইনহেলারটি ব্যবহার করুন।
- হাসপাতালে যেতে হবে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য আপনার ডাক্তার বা জরুরী পরিষেবাগুলির সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি থাকে তবে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বিবেচনা করুন:
- শ্বাসকষ্ট যা 15 মিনিটের মধ্যে ইনহেলার ব্যবহারের পরেও উন্নত হয় না।
- বুকে চাপ বা ব্যথা।
- মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া।
- বুক থেকে শব্দ করা।
- রাতে ঘুম থেকে ওঠা।
অ্যাজমা একটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।