Skip to content
Home » MT Articles » টাইফয়েড জ্বর কেন হয়? এর লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা।

টাইফয়েড জ্বর কেন হয়? এর লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা।

টাইফয়েডের

টাইফয়েড জ্বর কি?

টাইফয়েড জ্বর একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি একটি জীবাণু যা দূষিত খাবার বা জল থেকে ছড়িয়ে পড়ে। অন্ত্রনালিতে জীবাণু সংক্রমণের ফলে এটি হয়।গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে আমাদের দেশে টাইফয়েড জ্বর এর প্রকোপ বাড়ে। টাইফয়েডের রিসিপটর অর্গান হলো লিভার। স্যালমোনেলা টাইফি নামের ব্যাকটেরিয়া টাইফয়েডের জন্য দায়ী। তবে টাইফয়েডের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলেই কেউ আক্রান্ত হবেন এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকলে অনেক সময় জীবাণু দেহে সংক্রমণ করতে পারে না। উন্নত বিশ্বে এই রোগের প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে।যেকোনো বয়সের মানুষেরই টাইফয়েড হতে পারে। তবে শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়।

টাইফয়েড জ্বর কেন হয় ?

টাইফয়েডের অন্যতম কারণ হলো দূষিত খাবার গ্রহণ। টাইফয়েড জ্বর হল একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা টাইফয়েড জ্বর/এন্টেরিক ফিভার নামেও পরিচিত। এটি সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়।এই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির মল থেকে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।ময়লাযুক্ত দূষিত পানি বা দূষিত খাবারের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহে প্রবেশ করে। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা ময়লাযুক্ত হাত দিয়ে খাবার বা পানীয় স্পর্শ করলেও এই ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে।এ রোগের জটিলতাও কম নয়। যেমন রক্তক্ষরণ, অগ্নাশয়ে প্রদাহ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ এমনকি কিডনিতেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

টাইফয়েড জ্বর রোগের জীবাণু
সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া – টাইফয়েডের জীবাণু।

টাইফয়েড জ্বর এর লক্ষণ :

  • তীব্র জ্বর ও কাশি (স্টেপ লেডার ফিভার )
  • বমি বমি ভাব বা বমি
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি
  • মাথাব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • ক্ষুধামন্দ্যা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • পেট ব্যথা
  • জিহ্বার মাঝবরাবর একটি সাদা দাগ
টাইফয়েড জ্বর এর লক্ষণ
টাইফয়েড রোগী। জিহ্বার মাঝবরাবর একটি সাদা দাগ।

টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা

টাইফয়েডের উপসর্গ প্রকাশের পরপরই দ্রুত  চিকিৎসা নিতে হবে। টাইফয়েড হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে প্রথমেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। রক্তের কালচার হচ্ছে টাইফয়েড নির্ণয়ের সর্বোত্তম পরীক্ষা।

পরীক্ষা করে টাইফয়েডের জীবাণু পাওয়া গেলে ১৪ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়। অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার পর রোগীর সেরে উঠতে ৫-৭ দিন সময় লাগতে পারে। এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে, চিকিৎসক যত দিন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পরামর্শ দেবেন, তত দিন পর্যন্ত অবশ্যই ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। অনেক সময় দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে বা ওষুধ খাওয়ার পরেও জ্বর না কমলে টাইফয়েড জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

টাইফয়েডে জ্বর ও ডায়রিয়ার কারণে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। এ সময় শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগাতে রোগীকে প্রচুর তরল, ক্যালরিসমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। জ্বর বেশি থাকলে শরীর বারবার মুছে দিতে হবে। প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর এর জটিলতা

টাইফয়েডের প্রথম সপ্তাহে জ্বর, শরীরব্যথা, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো সমস্যা থাকে। প্রথম পাঁচ থেকে সাত দিন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সপ্তাহ শেষে পেট ফুলে যাওয়া, প্রচণ্ড কাশি, প্লীহা বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
টাইফয়েড জটিল আকার ধারণ করলে পরবর্তী সময়ে অন্ত্রনালি ফুটো হয়ে যাওয়া, অন্ত্রে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমনকি পিত্তথলি, হৃৎপিণ্ড ও হাড়ের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়াতে শুরুতেই টাইফয়েডের সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।

টাইফয়েডের প্রতিকার ও প্রতিরোধ :

টাইফয়েডের প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

টাইফয়েড জ্বর এর প্রতিকার

১. টাইফয়েড জ্বর এর টিকা বা ভ্যাকসিন :

টাইফয়েডের টিকা হল টাইফয়েড রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়। টাইফয়েডের টিকা সাধারণত ২ বছর বয়সের পর থেকে দেওয়া যায়। টাইফয়েডের টিকা দীর্ঘমেয়াদী ইমিউনিটি প্রদান করে না। তাই প্রথম ডোজ দেওয়ার পর প্রতি তিন বছর পর পর একটি করে ডোজ দিতে হয়। কিছুক্ষেত্রে টাইফয়েডের টিকা নেওয়ার পরও টাইফয়েড রোগের সংক্রমণ হতে পারে। তবে, টিকা নেওয়ার ফলে রোগের তীব্রতা কম হয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও কম থাকে। টাইফয়েড প্রতিরোধে চিকিৎসকের পরামর্শমতো নির্দিষ্ট টাইফয়েডের টিকা বা ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন।

২. পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস :

টাইফয়েডের প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরূরী। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি ও মৌসুমী ফলমূল খেতে হবে। খাওয়ার আগে দুই হাত ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে নেওয়া যেতে পারে। খাবার খাওয়া ও পরিবেশনের আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

৩. বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন :

বাইরের লাচ্ছি, ফালুদা, শরবত বা জুসের মতো পানীয়তে মেশানো বরফ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করা খাবার খেতে হবে।কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরের খোলা ও নোংরা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. শিশুর যত্ন :

শিশুর মলমূত্র ও পোশাক ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুরা বারবার মুখে হাত দেয়, তাই শিশুর হাত ও খেলনা জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

৫. টয়লেট সব সময় পরিষ্কার রাখুন

টয়লেট সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

আরোও পড়ুন

কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি ? প্রতিদিন কলা কেন খাবেন ?

টাইফয়েড জ্বর হলে করণীয় কি ?

টাইফয়েড হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে কিছু জানা যাক-

১. টাইফয়েডের রক্ত পরীক্ষা

টাইফয়েড পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে ছড়ায়। টাইফয়েডর রক্ত পরীক্ষা হলো টাইফয়েড রোগের উপস্থিতি নির্ণয় করার জন্য একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় রক্তের নমুনা নেওয়া হয় এবং সেই নমুনায় সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। যদি এই পরীক্ষায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়, তাহলে রোগটি টাইফয়েডে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

সব সময় পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে। নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অবশ্যই হাত ভালোভাবে ধুতে হবে। ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করে রাখতে হবে।

৩. পানি, খাবারে সতর্কতা

পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। খাবার গরম করে খেতে হবে। বাইরের খাবার খেলে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। অপরিষ্কার শাক-সবজি ও কাঁচা-ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. বাসস্থান ও টয়লেটের সুব্যবস্থা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন টয়লেটে ময়লা বা পানি জমে না থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে খোলামেলা ও পরিষ্কার বাসায় রাখতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর এর রোগীর জন্য উপদেশ :

টাইফয়েড হয়েছে কি না, তা যেমন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে, তেমনি ওষুধ খাওয়ার জন্যও অবশ্যই রোগীকে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।

রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল ও অর্ধতরল খাবার খাওয়াতে হবে।

এ সময় যতদুর সম্ভব মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

error: Content is protected !!