Skip to content
Home » MT Articles » কিডনির পাথর কি? কিডনিতে পাথর কেন হয়? কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?

কিডনির পাথর কি? কিডনিতে পাথর কেন হয়? কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?

কিডনির পাথর

কিডনির পাথর কি?

আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। এসব খাবারে থাকে বিভিন্ন ধরনের কনিজ উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আমরা জানি যে আমাদের গৃহিত বিভিন্ন খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌছে যায়। আর শরীরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন বর্জ কিডনির দ্বারা রক্ত পরিশোধনের মাধ্যমে অপসারিত হয়।রক্তে বিদ্যমান খনিজ গুলো বিভিন্ন কারনে কিডনিতে ধিরে ধিরে জমা হয়ে স্ফটিক তৈরি হতে পারে। কিডনিতে পাথর হলো খনিজ পদার্থের শক্ত জমা বা স্ফটিক যা কিডনিতে তৈরি হয়। এগুলি বিভিন্ন আকারের হতে পারে, ছোট বালির দানা থেকে শুরু করে গল্ফ বলের আকার পর্যন্ত।

কিডনিতে পাথর কেন হয়?

কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো:

1. ডিহাইড্রেশন: যখন আমরা পর্যাপ্ত পানি পান করি না, তখন প্রস্রাব ঘন হয়ে যায় এবং খনিজ পদার্থগুলি স্ফটিক তৈরি করে। এই স্ফটিকগুলি সময়ের সাথে সাথে বড় হয়ে পাথরে পরিণত হতে পারে।

2. অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ: খাবারে অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ করলে প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।

3. অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ: প্রাণিজাত খাবার (মাংস, মাছ, ডিম) অতিরিক্ত গ্রহণ করলে প্রস্রাবে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা কিডনিতে পাথর তৈরির কারণ হতে পারে।

4. মূত্রনালীতে সংক্রমণ: বারবার মূত্রনালীতে সংক্রমণ হলে প্রস্রাবে খনিজ পদার্থের ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।

5. স্থূলতা: স্থূল ব্যক্তিদের কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

6. পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারে কিডনিতে পাথরের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার ঝুঁকিও বেশি।

7. কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন ডিউরেটিক এবং থায়াযাইড ওষুধ, কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।

8. কিছু বিপাকীয় রোগ: কিছু বিপাকীয় রোগ, যেমন হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম (Hyperparathyroidism) এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ম্যালঅ্যাবজরপশন (Gastrointetinal malabsorption), কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।

কিডনির পাথর কিভাবে তৈরি হয়?

কিডনির পাথর কিভাবে তৈরি হয়?
  • খনিজ পদার্থের ঘনীভূত হওয়া: যখন প্রস্রাবে খনিজ পদার্থ (যেমন ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড) ঘনীভূত হয়, তখন তা স্ফটিক তৈরি করে।
  • স্ফটিকের জমা: এই স্ফটিকগুলি কিডনির ভেতরে জমা হতে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে বড় হয়ে পাথরে পরিণত হয়।
  • পাথরের বৃদ্ধি: এই পাথরের সাথে আরও স্ফটিক জমা হয়ে ধীরে ধীরে পাথর বড় হতে থাকে এবং এটি কিডনির ভেতরে নড়াচড়া করতে পারে।

কিডনিতে পাথরের লক্ষণ:

কিডনিতে পাথরের লক্ষণ

কিডনিতে পাথরের সাধারন লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে,

  • কোমর বা পেটে তীব্র ব্যথা
  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
  • বারবার প্রস্রাবের ইচ্ছা
  • প্রস্রাবে রক্ত ​​বা মেঘলা
  • বমি বমি ভাব
  • বমি

অনেক ক্ষেত্রেই কিডনিতে পাথরের কোনো লক্ষণ না–ও থাকতে পারে। মেরুদণ্ডে ব্যথার জন্য নিয়মিত চেকআপের সময় অনেক ক্ষেত্রে ধরা পড়ে। কিডনির পাথরের জন্য ব্যথা হলে ওপর পেটের অথবা নিচের পিঠের ডানে বা বাঁয়ে মৃদু ব্যথা হতে পারে।

লাল প্রস্রাব বা প্রস্রাবে হালকা রক্ত যাওয়া আরেকটি লক্ষণ। পাথর যদি প্রস্রাবের নালিতে নেমে আসে তাহলে ওপরের পেট-পিঠ থেকে কুঁচকির দিকে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং সঙ্গে বমি, জ্বর ইত্যাদি থাকে। পাথর মূত্রনালি বা ইউরেটারে আটকে গেলে কিডনি ফুলে যায়। অনেক সময় ইউরোসেপসিস বা মারাত্মক সংক্রমণ হয়ে জীবনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে জরুরিভাবে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে পাথর বের করতে হবে, শিরার মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে।

কিডনিতে পাথর এর চিকিৎসা:

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের আকার, অবস্থান এবং লক্ষণগুলির উপর।

বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে :

1. ছোট পাথর (4 মিমি এর কম):
  • প্রচুর পানি পান: প্রচুর পরিমাণে পানি পান (প্রতিদিন 2-3 লিটার) পাথরকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে সাহায্য করে।
  • ব্যথার ওষুধ: ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তার ব্যথার ওষুধ (যেমন ibuprofen, acetaminophen) দিতে পারেন।
  • প্রস্রাবে অ্যালকালাইনিং এজেন্ট: কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার প্রস্রাবে অ্যালকালাইনিং এজেন্ট (যেমন potassium citrate) দিতে পারেন যা পাথরকে দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে।
2. বড় পাথর (4 মিমি এর বেশি):
  • Extracorporeal Shock Wave Lithotripsy (ESWL): ESWL হলো একটি অ-অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যা শক তরঙ্গ ব্যবহার করে কিডনিতে পাথরকে ভেঙে ফেলে। ভাঙা পাথরগুলি প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে।
  • Percutaneous Nephrolithotomy (PCNL): PCNL হলো একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যেখানে ত্বকের মাধ্যমে একটি ছোট ছিদ্র করে কিডনিতে পাথর অপসারণ করা হয়।
  • Ureteroscopy: Ureteroscopy হলো একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যেখানে মূত্রনালীতে একটি পাতলা, নমনীয় টিউব ঢোকানো হয় এবং পাথর অপসারণ করা হয়।
  • Open Surgery: খুব বড় বা জটিল পাথর অপসারণের জন্য খোলা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসার পর করণীয়:

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
  • লবণ, প্রোটিন এবং অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ কমাতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

কিডনিতে পাথরের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধের জন্য করণীয়:

কিডনিতে পাথরের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধের জন্য করণীয়:
  • উপরে উল্লেখিত চিকিৎসার পরামর্শগুলি অনুসরণ করুন।
  • নিয়মিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারা পরিবর্তন করুন।

কিডনিতে পাথর শনাক্ত করার পরীক্ষা

রোগীদের প্রস্রাব পরীক্ষা করলে লোহিতকণিকা, পাস-সেল বা পাথরের ক্রিস্টাল পাওয়া যেতে পারে। পেটের এক্স-রে করলে প্রায় ৯০ শতাংশ পাথর দেখা যায়। তবে কিডনির খুব ছোট পাথর বা মূত্রনালির পাথর শনাক্ত করতে হলে সিটি স্ক্যান প্রয়োজন হয়। আলট্রাসনোগ্রাম করলেও কিডনি ও মূত্রথলির পাথর ধরা পড়ে।

কিডনির পাথর কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?

কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রক্ত ​​পরিশোধন, বর্জ্য অপসারণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখা এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ও কিডনির পাথর প্রতিরোধ সাহায্য করতে পারে এরকম কিছু নিয়মের মধ্যে রয়েছে

  • পর্যাপ্ত পানি পান (প্রতিদিন 2-3 লিটার)
  • লবণ গ্রহণ কমিয়ে দিন
  • প্রোটিন গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করুন
  • মূত্রনালীতে সংক্রমণ প্রতিরোধ করুন
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন

This article is written with the help of Gemini

error: Content is protected !!