খেজুর:
মধ্যপ্রাচ্যের এই ফলটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত। খেজুরের ইংরেজি নাম ডেট (Date)। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়ামসহ অনেক পুষ্টিগুণ। এসব খাদ্য উপাদান শরীরে অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে যখন আপনার বয়স পৌঁছাবে ৩০-এর কোঠায়।এ সময় মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণক্ষমতা কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, আমাদের কর্মশক্তি হ্রাস, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, পেশির সমস্যা, হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, হিমোগ্লোবিনের অসামঞ্জস্যতা, হজমে সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাড় ক্ষয়, ত্বকের নানা সমস্যা হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।আর এসব সমস্যার সমাধানে দারুন ভূমিকা রাখতে পারে খেজুর। আসুন জেনে নিই এই ফলটি আমাদের শরীরে কীভাবে কাজ করে।
খেজুরের পুষ্টিগুণ:

খেজুর একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
একটি মাঝারি আকারের খেজুরে (২৮ গ্রাম) রয়েছে :
- ক্যালোরি: ৬২
- কার্বোহাইড্রেট: ১৩ গ্রাম
- ফাইবার: ৩.৫ গ্রাম
- চিনি: ৯ গ্রাম
- প্রোটিন: ১.৬ গ্রাম
- ভিটামিন বি-3 : ১৭% (দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
- ম্যাগনেসিয়াম: ১৪% (দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
- পটাসিয়াম: ১৬% (দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
- কপার: ১১% (দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
- ম্যাঙ্গানিজ: ১১% (দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
খেজুরের উপকারিতা:

খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার রয়েছে। খেজুর খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়, যেমন:
স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতে খেজুর:
খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকায় এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি করে, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রী যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি । তাই বেশি বয়সে স্মৃতিশক্তি লোপ করতে না চাইলে বয়স ৩০ হলেই খেজুর খেতে শুরু করে দিন।
কর্মশক্তি বাড়ায়:
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বয়স বৃদ্ধির কারণে ঝিমুনি ভাব দেখা দিলে প্রতিদিন খেজুর খান। তাহলেই আর ক্লান্তি আপনাকে ঘিরে ধরতে পারবে না।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে খেজুর:
যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলাব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে। এ ছাড়া নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
আরোও পড়ুন
জ্বর কী, কেন হয়, কাদের বেশি হয় ? জ্বর কত প্রকার ?
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে খেজুর:
খেজুরে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। যেমন: বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫। এ ছাড়া ভিটামিন সি সহ নানা ভিটামিনের পাওয়ার হাইস বলতে পারেন খেজুরকে। এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই চোখের সমস্যা তাড়াতাড়ি আনতে না চাইলে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন।
মজবুত পেশি গঠনে খেজুর:

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় পেশির নানান জটিলতা। আর এই পেশির জটিলতা এড়াতে ভালো কাজ করে প্রোটিন। খেজুর প্রোটিন সমৃদ্ধ। তাই এটি আমাদের পেশি ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের জন্য অপরিহার্য প্রোটিন সরবরাহ করে।
হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে খেজুর:
বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়ে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও।খেজুর এই ঝুঁকি কমাতে পারে । খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম, যা হৃদ্রোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় (এলডিএল) এবং ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে খেজুর:
খেজুরে আয়রন থাকে প্রচুর পরিমাণে। এই আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। শরীরে রক্তাল্পতা দেখা দিলে বা হিমোগ্লোবিনের কমতি হলে খেজুর খাওয়া শুরু করুন। এর ফলে শরীরের আয়রনের মাত্রা বজায় থাকে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হবে এবং রক্তের কোষ উৎপন্ন হবে।
পরিপাকে সহায়তা:
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হজমশক্তি কমতে শুরু করে। তাই এ সময় খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে আপনার হজমশক্তি বাড়বে। কারণ, অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
হাড়ের সুরক্ষায়:
ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে। সেই সঙ্গে মাড়ির স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত রাখে।
ত্বকের যত্নে খেজুর:
বয়সের ছাপ প্রথমে ত্বকেই ধরা পড়ে। তাই ত্বকের যত্নে খেজুর খুব উপকারী। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচায়। ত্বকের নানা সমস্যা থেকেও খেজুর মুক্তি দেয়। ত্বকের বলি রেখা নিয়ন্ত্রণ করতেও খেজুর ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব ও হরমোনের সমস্যা কমাতে খেজুর কার্যকর।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর খেজুর:
খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম।
ফাইবারের উৎস খেজুর:
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। তাই এই ফল ডায়েটে রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে।
কোষ্ঠকাঠিন্যে প্রতিরোধে খেজুর:
.কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। পর দিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি পান করুন। দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে:
প্রতিটি খেজুরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
খেজুরের অপকারিতা:

খেজুর একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা অনেক স্বাস্থ্য উপকারের জন্য দায়ী। তবে, খেজুরতে কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
- খেজুরে থাকা উচ্চ মাত্রার ফাইবার কিছু লোকের জন্য গ্যাস এবং পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
- খেজুরে থাকা উচ্চ মাত্রার চিনি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা হতে পারে।
- খেজুরে থাকা উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম কিডনি রোগীদের জন্য সমস্যা হতে পারে।
- খেজুরে থাকা উচ্চ মাত্রার ক্যালোরি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
যদি আপনি খেজুর খেয়ে কোনও অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন তবে অবিলম্বে খেজুর খাওয়া বন্ধ করুন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।