আমলকী
আমলকী হলো একটি বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ যা রোসাসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আমলকীর ইংরেজি নাম amla বা Indian gooseberry। এটি হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে জন্মে। ভারতীয় উপমহাদেশে আমলকীর প্রচুর জনপ্রিয় রয়েছে। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন-সি বা এস্করবিক এসিড থাকে।এটি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। আমলকি একটি ঔষধি ফল হিসেবেও পরিচিত এবং এটি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। আমলকি গাছ 5 থেকে 10 মিটার উঁচু হতে পারে। এর পাতাগুলি লম্বা এবং সরু, এবং এর ফলগুলি গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি হয়। আমলকি ফলের রঙ সবুজ থেকে হলুদ হয়।
চুলের যত্নে আমলকী:

আমলকী একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা চুলের যত্নে অত্যন্ত উপকারী। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া রোধ করে, চুলকে ঘন ও মজবুত করে এবং চুলের শুষ্কতা দূর করে। আমলকী চুলের জন্য যেসব উপকার করে সেগুলো হল:
- চুলের গোড়া শক্ত করে: আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
- চুল পড়া রোধ করে: আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
- চুলকে ঘন ও মজবুত করে: আমলকীতে থাকা প্রোটিন এবং ভিটামিন চুলকে ঘন ও মজবুত করে।
- চুলের শুষ্কতা দূর করে: আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ করে।
চুলের যত্নে আমলকী ব্যবহারের কিছু উপায় হল:
আরোও পড়ুন
তরমুজের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। তরমুজ কেন খাবেন?
- আমলকীর রস: আমলকীর রস চুলের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী উপাদান। আমলকীর রস চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া রোধ করে এবং চুলকে ঘন ও মজবুত করে। আমলকীর রস ব্যবহারের জন্য এক টেবিল চামচ আমলকির রস একটি কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে লাগান এবং ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- আমলকীর গুঁড়া: আমলকীর গুঁড়াও চুলের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমলকীর গুঁড়া চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া রোধ করে এবং চুলকে ঘন ও মজবুত করে। আমলকীর গুঁড়া ব্যবহারের জন্য এক চা চামচ আমলকীর গুঁড়া এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে লাগান এবং ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- আমলকীর তেল: আমলকীর তেল চুলের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী তেল। আমলকীর তেল চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া রোধ করে এবং চুলকে ঘন ও মজবুত করে। আমলকীর তেল ব্যবহারের জন্য আমলকির তেল হালকা গরম করে চুলে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আমলকী চুলের যত্নে একটি অত্যন্ত কার্যকর উপাদান। আমলকী ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার চুলকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে পারেন।
আমলকীর পুষ্টিগুণ:

আমলকী একটি পুষ্টিকর ফল যা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। আমলকীর পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ নিম্নরূপ:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (১০০ গ্রাম) |
ক্যালোরি | ৬৪ |
কার্বোহাইড্রেট | ১৪.২ গ্রাম |
প্রোটিন | ২.৪ গ্রাম |
ফাইবার | ১.৯ গ্রাম |
চিনি | ১০.৮ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৬০০ মিলিগ্রাম (RDI এর ৭৫০%) |
ভিটামিন এ | ২৯০ IU |
ভিটামিন বি১ | ০.০৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি২ | ০.০৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৩ | ০.২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৫ | ০.১৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.০৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.১৭ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৫ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৩০২ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৭ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৭ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ০.২ মিলিগ্রাম |
আমলকীর উপকারিতা:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা ত্বককে মসৃণ ও টানটান রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, আমলকী ত্বকের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। এটি চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং চুলকে চকচকে ও সুন্দর করে তোলে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আমলকীর অপকারিতা:

আমলকী একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। তবে, আমলকীর কিছু অপকারিতাও রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
- অ্যালার্জি: খুব কম লোকের ক্ষেত্রে আমলকীর প্রতি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে আমলকী খেলে ত্বকে চুলকানি, ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
- অ্যাসিডিটি: আমলকী একটি টক ফল, তাই যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকী খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস: আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের আমলকী খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলারা: গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের আমলকী খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আমলকী খাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত:
- আমলকী খাওয়ার আগে খোসা ছাড়িয়ে ফেলবেন না। কারণ আমলকীর খোসায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
- আমলকী খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এতে আমলকীর টকভাব দূর হবে এবং হজম ভালো হবে।
- আপনি যদি অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন, তাহলে আমলকী খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- ডায়াবেটিস রোগীদের আমলকী খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের আমলকী খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাধারণত, আমলকী একটি নিরাপদ খাবার। তবে, কিছু ক্ষেত্রে আমলকীর কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। তাই আমলকী খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।