Skip to content
Home » MT Articles » মুগ ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

মুগ ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

মুগ ডালের পুষ্টিগুণ

মুগ ডাল বা সোনামুগ ডাল

মুগ ডাল হল একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ ডাল যা দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ব্যাপকভাবে খাওয়া হয়। মুগ ডালের ইংরেজি নাম Green Gram. এটি একটি লেগুম পরিবারের উদ্ভিদ প্রজাতি যা Vigna radiata নামে পরিচিত। মুগ ডাল দুটি প্রধান প্রকারে পাওয়া যায়: খোসা ছাড়ানো এবং খোসা ছাড়ানো। খোসা ছাড়ানো মুগ ডাল হল সবুজ বা হলুদ রঙের এবং এটি দ্রুত রান্না হয়। খোসা ছাড়ানো মুগ ডাল হল হালকা বাদামী রঙের এবং এটি রান্না করতে কিছুটা বেশি সময় লাগে।

এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাবার যা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। এটি প্রোটিনের একটি ভাল উৎস, যা পেশী গঠন এবং মেরামত জন্য প্রয়োজনীয়। মুগ ডালে ফাইবারও রয়েছে, যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের একটি ভাল উৎসও, যার মধ্যে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, এবং পটাসিয়াম।

 মুগ ডালের পুষ্টিগুণ:

ইহা একটি পুষ্টিকর খাবার যা প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের একটি ভাল উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম মুগ ডালে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
শক্তি৩৪৩ কিলো ক্যালরি
প্রোটিন২৫.১ গ্রাম
চর্বি০.৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট৫৯.০ গ্রাম
আঁশ০.৭ গ্রাম
ক্যালসিয়াম৬৯ মিলিগ্রাম
আয়রন৪.৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-১০.২২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-২০.৪৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৩০.২৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৬০.১৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৯৫৭ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি০.৫ মিলিগ্রাম

মুগ ডাল রান্নার উপায়:

একটি জনপ্রিয় খাবার হলো মুগ ডাল যা বিভিন্নভাবে রান্না করা যেতে পারে। এখানে একটি সহজ উপায় রয়েছে মুগ ডাল রান্নার:

উপকরণ:

  • ১ কাপ মুগ ডাল
  • ৪ কাপ পানি
  • ১ টেবিল চামচ তেল
  • ১/২ চা চামচ জিরা
  • ১/২ চা চামচ আদা বাটা
  • ১/২ চা চামচ রসুন বাটা
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ মরিচ গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ ধনে গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়া
  • স্বাদমতো লবণ

রান্নার প্রণালী:

মুগ ডালের রান্নার প্রণালী

১. মুগ ডাল ভালো করে ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।

২. একটি কড়াইতে তেল গরম করে জিরা ফোড়ন দিন।

৩. জিরা ফোটার পর আদা বাটা এবং রসুন বাটা দিয়ে হালকা করে ভাজুন।

৪. এবার হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, এবং গরম মশলা গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।

৫. কষানো মশলার মধ্যে ভিজিয়ে রাখা মুগ ডাল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।

৬. এবার পানি দিয়ে ঢেকে দিন।

৭. ডাল সিদ্ধ হয়ে এলে স্বাদমতো লবণ দিয়ে নামিয়ে নিন।

টিপস:

  • মুগ ডাল রান্না করার সময় বেশি পানি দেওয়া উচিত নয়। কারণ ডাল ফুলে গেলে পানি কমে যাবে।
  • ডাল সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। তাহলে ডাল আরও সুস্বাদু হবে।
  • আপনার পছন্দমতো অন্যান্য মশলাও যোগ করতে পারেন। যেমন, পেঁয়াজ কুচি, টমেটো কুচি, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি।

মুগ ডালের উপকারিতা:

মুগ ডালের উপকারিতা

প্রোটিন: 

মুগ ডাল একটি দুর্দান্ত প্রোটিন উৎস। প্রোটিন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা কোষ, টিস্যু এবং পেশী গঠনে সহায়তা করে।

আয়রন: 

মুগ ডাল একটি ভাল আয়রনের উৎস। আয়রন রক্তের অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।

ফাইবার: 

মুগ ডাল একটি ভাল ফাইবার উৎস। ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

ভিটামিন এবং খনিজ: 

মুগ ডালে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজও রয়েছে, যেমন ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩, ভিটামিন বি-৬, এবং ফোলেট।

আরোও পড়ুন

পালংশাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

ওজন হ্রাস: 

এটি একটি কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার যা ফাইবার সমৃদ্ধ। ফাইবার হজমকে ধীর করে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে, যা ওজন হ্রাসে সহায়তা করতে পারে।

হৃদরোগ প্রতিরোধ: 

মুগ ডালে ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: 

মুগ ডাল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ: 

এতে অ্যান্টিঅক্সিডন্ট উপস্থিত থ্যাকে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।

মুগ ডালের অপকারিতা:

মুগ ডাল একটি সাধারণ এবং নিরাপদ খাবার। তবে, কিছু লোকের জন্য এটি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। মুগ ডালের সম্ভাব্য অপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • গ্যাস এবং ফোলাভাব: মুগ ডালে ফাইবার থাকে, যা গ্যাস এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিশেষ করে সেই লোকদের জন্য একটি সমস্যা হতে পারে যাদের ইতিমধ্যেই এই সমস্যাগুলি রয়েছে।
  • অ্যালার্জি: মুগ ডাল একটি অ্যালার্জেন হতে পারে। মুগ ডালের অ্যালার্জি লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
    • চুলকানি
    • ফুসকুড়ি
    • মুখ, জিহ্বা বা গলা ফুলে যাওয়া
    • শ্বাসকষ্ট

মুগ ডালের অ্যালার্জি রয়েছে এমন লোকদের এটি এড়ানো উচিত।

মুগ ডাল অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়াও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মুগ ডালে লেকটিন নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা কিছু লোকের মধ্যে পেট খারাপের কারণ হতে পারে। মুগ ডাল অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়াও রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, যা গাউট রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

মুগ ডাল একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার, তবে এটি স্বাস্থ্যকরভাবে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মুগ ডাল খাওয়ার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:

  • রান্না করার আগে মুগ ডাল ভালভাবে ধুয়ে নিন। এটি লেকটিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে।
  • প্রথমবার খাওয়ার সময় মুগ ডাল অল্প পরিমাণে খাওয়া শুরু করুন। এটি অ্যালার্জির কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে মুগ ডাল খাবেন না।

সম্পর্কিত:

মৃগেল মাছের সুস্বাদু যত সব রেসিপি।

January 25, 2024

কাঠলিচু কি? জেনেনিন কাঠলিচুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

July 15, 2024

স্ট্রবেরি: শুধু সুস্বাদু নয়, পুষ্টিতেও ভরপুর একটি ফল

June 29, 2024

বাইন মাছ: স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এক খাবার। স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদুও বটে।

December 9, 2024

দারুচিনি কি? দারুচিনির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 6, 2023

আখরোট কি? জেনেনিন আখরোটের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

September 12, 2024

ক্যাপসিকাম: ক্যাপসিকামের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও প্রকারভেদ।

January 25, 2025

মটরশুটি সবজি: মটরশুটির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

October 5, 2024

বহেরা কি? জেনেনিন বহেরার অভাবনীয় ভেষজ গুণ সম্পর্কে।

March 12, 2024

খরশুলা মাছ: খরশুলা মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য।

November 21, 2024
error: Content is protected !!