Skip to content
Home » MT Articles » D-dimer Test // যা কিছু জানা প্রয়োজন।

D-dimer Test // যা কিছু জানা প্রয়োজন।

D-dimer Test

আনুষ্ঠানিক নাম:

D-dimer Test (ডি-ডাইমার পরীক্ষা)

অন্যান্য নাম:

Fragment D-dimer, Cross-linked fibrin degradation product (XDP)

কেন D-dimer Test টি করা হয়?

থ্রম্বোটিক (ব্লাড ক্লট উৎপাদনকারী) বা রক্তপাত সংক্রান্ত রোগ এবং অবস্থা নির্ণয় করার জন্য D-dimer Test টি করা হয়।

কখন D-dimer Test করা হয়?

যখন এমন একটি রোগ বা অবস্থার লক্ষণ দেখা দেয় যা তীব্র অথবা দীর্ঘস্থায়ী অসংলগ্ন রক্ত ​​জমাট বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যেমন: DVT (ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস), PE (পালমোনারি এমবোলিজম), বা DIC (ডিসমিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার কোগুলেশন)। 

D-dimer Test এর জন্য কি ধরণের নমুনা (Sample) নেওয়া হয়?

শিরা থেকে নেওয়া রক্তের নমুনা (Venous Blood).

এই পরীক্ষাটির জন্য রোগীর কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে কি?

কোনো ধরনের পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। যেকোনো সময় একটি রক্তের নমুনা দিয়েই পরীক্ষাটি করা যায়। তবে নমুনা দেয়ার পূর্বে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খেলে সিরাম (রক্তর জলীয় অংশ) লাইপেমিক হতে পারে। এতে D-dimer এর ফলাফল মিথ্যা পজিটিভ দেখাতে পারে।

D-dimer Test এ মূলত কি পরীক্ষা করা হয়?

D-dimer Test

যখন একটি শিরা বা ধমনী আহত হয় এবং রক্ত বেরোতে শুরু করে, তখন রক্তক্ষরণ সীমিত করতে বা বন্ধ করতে এবং ধমনীর ছিদ্রটি প্লাগ করতে শরীর নিজে থেকেই একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু করে (যাকে কোগুলেশন ক্যাসকেড বলা হয়) । এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, ফিব্রিন নামক এক প্রকার প্রোটিনের থ্রেড তৈরি হয়। এই থ্রেডগুলি ক্রস-লিঙ্কযুক্ত (থ্রম্বিন নামক প্রোটিন দ্বারা একত্রে আটকানো) একটি ফিব্রিন নেট তৈরি করে (থ্রম্বাস) যা প্লেটলেটগুলিকে আবদ্ধ করে এবং আঘাতের জায়গায় রক্তের জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

এরপর যখন আঘাকপ্রাপ্ত জায়গাটি নিরাময় হয়ে যায় তখন শরীর প্লাজমিন নামক অপর একটি প্রোটিন ব্যবহার করে রক্তের জমাটকে (ফিব্রিন নেট-থ্রম্বাস) ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে দেয় যাতে এটি অপসারণ করা যায়। এই বিচ্ছিন্ন জমাট বাঁধার (ফিব্রিন নেট-থ্রম্বাস) টুকরোকে বলা হয় ফিব্রিন ডিগ্রেডেশন প্রোডাক্ট (FDP)। এই উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার FDP গুলির মধ্যে একটি হল ডি-ডাইমার (D-dimer), যা ক্রস-লিঙ্কড ফিব্রিনের বিভিন্ন আকারের টুকরা নিয়ে গঠিত। ডি-ডাইমার সাধারণত সুস্থ্য মনুষের রক্তে সনাক্ত করা যায় না। রক্ত জমাট বাঁধা ও পরে ভেঙে যাওয়ার প্রক্রিয়ার পরেই এটি তৈরি হয়।

ডি-ডাইমারের প্রধান ব্যবহার হল পাঁয়ের শিরা বা ফুসফুসের শিরাস্থ রক্ত জমাট বাঁধা উপসর্গের সঠিক রোগ নির্নয় করা। যদি আপনার ডি-ডাইমার ফলাফল নেগেটিভ হয় তবে আপনার শিরাস্থ রক্ত জমাট বেঁধে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। যদি ডি-ডাইমার পজিটিভ হয় তবে এর অর্থ আপনার শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও ভেঙ্গে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি চলমান। তবে ডি-ডাইমার পজিটিভ এর অর্থ সবসময়ই এই নয় যে, আপনার রক্তজমাট আছে, কারণ এটি অন্যান্য অনেক পরিস্থিতিতেও উত্থিত হয়। তাই ডি-ডাইমার রক্তের জমাট বাঁধার রোগ নির্ণয় বা নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট নয়।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে D-dimer Test এর ব্যবহার: 

অন্যান্য ল্যাবরেটরি পরীক্ষা এবং ইমেজিং স্ক্যানের সাথে ডি-ডাইমার পরীক্ষার অনুরোধ করা হয়। যা হাইপারকোয়াগুলেবিলিটি, অসংলগ্নভাবে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা সৃষ্টিকারী রোগ এবং অবস্থাগুলি নির্ণয় করতে এবং নিরীক্ষণ করতে সহায়তা করে। এই অবস্থাগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ একটি হল DVT (ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস) যা শরীরের গভীর শিরাগুলিতে রক্ত জমাট বাঁধার সাথে জড়িত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঁয়ের শিরাতে ঘটে থাকে। আরেকটি সাধারন অবস্থা হলো পালমোনারি এম্বোলিজম (Pulmonary Embolism-PE) যা ফুসফুসের শিরাগুলিতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে ঘটে। এই জমাটগুলি খুব বড়ও হতে পারে এবং স্বাভাবিক রক্ত ​​প্রবাহকে বাধা দিতে পারে, যার ফলে ফোলা, ব্যথা এবং টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে। অনেক সময় জমাট রক্তের একটি অংশ ভেঙ্গে শরীরের অন্যান্য অংশে চলে যেতে পারে, যেমন জমাটটি ফুসফুসে গিয়ে জমা হতে পারে (যা পালমোনারি এমবোলিজম বা PE নামে পরিচিত)।

DIC (ডিসমিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার কোগুলেশন) নির্ণয়ের জন্য অন্যান্য পরীক্ষার সাথে ডি-ডাইমার পরিমাপেরও অনুরোধ করা হয়ে থাকে। ডিআইসি একটি জটিল ও দ্রুত ক্রমবর্ধমান রোগ যা বিভিন্ন পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে: কিছু অস্ত্রোপচার পদ্ধতি, পোড়া, সংক্রমণ, ক্যান্সার, লিভারের রোগ, বিষাক্ত সাপের কামড় এবং প্রসবোত্তর (শিশু প্রসবের পরে) অবস্থা। DIC তে শরীরের ক্লটিং ফ্যাক্টর গুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য ছোট ও বড় রক্ত জমাট তৈরি হয়। এবং একই সাথে রোগীকে অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকিতে ফেলে। অন্তর্নিহিত সমস্যাটির চিকিৎসার সময় রোগীকে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট দেয়া হয়ে থাকে বা রক্তের বিভিন্ন উপাদান ট্রান্সফিউশন করা হয়ে থাকে। ডিআইসি চিকিত্সার কার্যকারিতা নিরীক্ষণের জন্যও D-dimer Test টি ব্যবহার করা হয়।

আরোও পড়ুন

Antinuclear Antibody (ANA) Test.\\যা কিছু জানা প্রয়োজন।

D-dimer Test কখন অনুরোধ করা হয়? (When is it requested or advised?)

ডি-ডাইমার অনুরোধ করা হতে পারে যখন-

  • একজন রোগীর DVT-এর লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন পায়ে ব্যথা, কোমলতা, শোথ (ফোলা), বিবর্ণতা ইত্যাদি।
  • PE এর লক্ষণ, যেমন শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং ফুসফুস সম্পর্কিত বুকে ব্যথা দেখা দেয়।
  • ডি-ডাইমার পরীক্ষাটি বিশেষভাবে উপযোগী যখন ডাক্তার মনে করেন যে, রোগীর DVT বা PE ছাড়া অন্য কোন কারনে উপসর্গগুলো সৃষ্টি হয়েছে। অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত রক্তজমাট বাঁধার বিষয়টিকে নাকোচ করে দিতে এটি খুব দ্রুত ও সহজ একটি উপায়। ডি-ডাইমার পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ মানে রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার মত কোনো সমস্যা নেই, লক্ষণগুলো অন্য কোনো রোগের কারনে দেখা দিচ্ছে। 
  • যখন একজন রোগীর DIC-এর উপসর্গ থাকে, যেমন মিউকোসাল রক্তপাত (মুখ, নাক, মূত্রাশয় বা অন্ত্র থেকে রক্তপাত), ঘা, বমি বমি ভাব, বমি, পেশী এবং পেটে তীব্র ব্যথা, খিঁচুনি এবং অলিগুরিয়া (প্রস্রাবের আউটপুট হ্রাস), তখন ডি-ডাইমার পরীক্ষাটি অনুরোধ করা হতে পারে। প্রকৃত অবস্থা  নির্ণয় করতে সাহায্য করার জন্য D-dimer এর সাথে PT, APTT, ফিব্রিনোজেন এবং প্লেটলেট গণনাও অনুরোধ করা হয়ে থাকে। রোগীর ডিআইসি-এর চিকিত্সার অগ্রগতি নিরীক্ষণে সহায়তা করার জন্যও ডি-ডাইমার অনুরোধ করা হতে পারে।

পরীক্ষার ফলাফল (Report) থেকে আমি কি বুঝবো?

একটি পজিটিভ ডি-ডাইমার আপনার শরীরে অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রার ক্রস-লিঙ্কযুক্ত FDP এর উপস্থিতি নির্দেশ করে। এটি আপনার ডাক্তারকে বলে যে, শরীরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্লট (থ্রম্বাস) গঠন এবং ভাঙ্গন হয়েছে। তবে D-dimer Test এর মাধ্যমে ক্লট (থ্রম্বাস) এর অবস্থান বা কারণ চিহ্নিত করা যায় না। উচ্চমাত্রার ডি-ডাইমার  VTE-Venous Thromboembolism (শিরায় ক্লট/থ্রম্বাস) এর কারণে হতে পারে। এছাড়াও সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচার বা ট্রমা, সংক্রমণ, লিভার বা কিডনি রোগ, ক্যান্সার, স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার কিছু রোগ যেমন একলাম্পশিয়ার কারণেও ডি-ডাইমার পজিটিভ হতে পারে।

স্বভাবিক মাত্রার বা নেগেটিভ ডি-ডাইমার এর অর্থ হল আপনার তীব্র রক্ত জমাট বাঁধা বা অস্বাভাবিক ক্লট গঠন এবং ভাঙ্গন সৃষ্টিকারী রোগ থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ ডাক্তার সম্মত হন যে, স্বভাবিক মাত্রার বা নেগেটিভ ডি-ডাইমার সবচেয়ে দরকারী, যখন কম-ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত রোগীদের উপর পরীক্ষাটি করা হয়। উপসর্গের কারণ হিসাবে রক্ত জমাট বাধার কারনটিকে নাকোচ করে দিতে সাহায্য করার জন্য পরীক্ষাটি ব্যবহৃত হয়।

ডি-ডাইমার পরীক্ষাটিকে একটি ‘অতিরিক্ত পরীক্ষা’ হিসাবে সুপারিশ করা হয়। এটি একটি রোগ বা অবস্থা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত সুনির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নয়। উচ্চ এবং স্বাভাবিক উভয় মাত্রার ডি-ডাইমার এর জন্য ফলো-আপের প্রয়োজন হতে পারে এবং আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

D-dimer Test সম্পর্কে জানা দরকার এমন আর কিছু কি আছে?

অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট থেরাপির ফলে একটি মিথ্যা নেগেটিভ ডি-ডাইমার এর ফলাফল দেখা যেতে পারে। ডি-ডাইমার পরীক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বেশিরভাগ ডি-ডাইমার পরীক্ষা যেগুলিতে পরিমাণগত ফলাফল দেয় (Quantitative D-dimer Test) তা হাসপাতালের ল্যাবে করা হয়। যেগুলিতে গুণগত ফলাফল দেয় (Qualitative D-dimer Test) সেগুলি রোগীর বিছানাতেই করা যেতে পারে।

বয়স্কদের মধ্যে ডি-ডাইমারের ঘনত্ব বাড়তে পারে। উচ্চ মাত্রার রিউমাটয়েড ফ্যাক্টর (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগীদের মধ্যে দেখা যায় এমন একটি প্রোটিন) এর উপস্থিতির জন্য মিথ্যা পজিটিভ দেখা যেতে পারে। লাইপেমিয়া (পরীক্ষার আগে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে রক্তে প্রচুর পরিমাণে চর্বি) এবং উচ্চমাত্রার বিলিরুবিনের উপস্থিতিতেও মিথ্যা পজিটিভ D-dimer দেখা যেতে পারে। ভুল ও অসতর্কভাবে রক্তের নমুনা সংগ্রহের এবং হ্যান্ডলিং এর কারণে হেমোলাইসিস (লাল রক্তকণিকা ফেটে যাওয়া) হতে পারে। হেমোলাইসিস এর ফলেও মিথ্যা পজিটিভ D-dimer দেখা যেতে পারে।

error: Content is protected !!