Skip to content
Home » MT Articles » কাগজী লেবুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা, জাত ও চাষ পদ্ধতি।

কাগজী লেবুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা, জাত ও চাষ পদ্ধতি।

কাগজী লেবু

কাগজী লেবু 

কাগজী লেবু বা পাতি লেবু হল একটি টক স্বাদের সাইট্রাস ফল। কাগজী লেবুর ইংরেজি নাম Lemon। এটি একটি ছোট আকারের লেবু যা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়। কাগজী লেবুর খোসা পাতলা এবং সবুজ রঙের হয়। এর ভেতরের শাঁস হালকা হলুদ রঙের হয় এবং এর রস টক স্বাদের হয়।

 লেবু

কাগজী লেবুর পুষ্টিগুণ:

প্রতি ১০০ গ্রাম কাগজী লেবুতে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
ক্যালোরি২৮
প্রোটিন০.৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট৯ গ্রাম
ফাইবার২.৪ গ্রাম
চর্বি০.২ গ্রাম
ভিটামিন সি৩০ মিলিগ্রাম (৪১% দৈনিক চাহিদার পরিমাণ)
ভিটামিন কে০.২ মিলিগ্রাম (২% দৈনিক চাহিদার পরিমাণ)
পটাশিয়াম১৬০ মিলিগ্রাম (৪% দৈনিক চাহিদার পরিমাণ)
ম্যাগনেসিয়াম১০ মিলিগ্রাম (২% দৈনিক চাহিদার পরিমাণ)
ফসফরাস১৪ মিলিগ্রাম (২% দৈনিক চাহিদার পরিমাণ)
ক্যালসিয়াম১৩ মিলিগ্রাম (২% দৈনিক চাহিদার পরিমাণ)
আয়রন০.৩ মিলিগ্রাম (২% দৈনিক চাহিদার পরিমাণ)

কাগজী লেবুর জাত:

কাগজী লেবুর এর জাত

এর অনেক জাত আছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতের মধ্যে রয়েছে:

  • বাংলা লেবু: এই জাতটি বাংলাদেশের স্থানীয়। এটি ছোট আকারের এবং এর খোসা পাতলা। এর রস টক স্বাদের এবং এর খোসাও খাওয়া যায়।
  • এলাচী লেবু: এই জাতটিও বাংলাদেশের স্থানীয়। এটি বাংলা লেবুর মতোই দেখতে, তবে এর খোসাতে এলাচের মতো গন্ধ থাকে।
  • বারি লেবু-১: এই জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) দ্বারা উদ্ভাবিত। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত যা বছরে দুবার ফল দেয়।
  • বারি লেবু-২: এই জাতটিও BARI দ্বারা উদ্ভাবিত। এটি একটি ঝোপের মতো গাছ যা সারা বছর ফল দেয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কাগজী লেবুর অনেক জাত রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় জাত হল:

  • ইতালিয়ান লেবু: এই জাতটি ইতালিতে উৎপন্ন হয়। এটি বড় আকারের এবং এর খোসা পুরু। এর রস টক স্বাদের এবং এর খোসাও খাওয়া যায়।
  • ফ্রেঞ্চ লেবু: এই জাতটি ফ্রান্সে উৎপন্ন হয়। এটি ছোট আকারের এবং এর খোসা পাতলা। এর রস টক স্বাদের এবং এর খোসাও খাওয়া যায়।
  • স্প্যানিশ লেবু: এই জাতটি স্পেনে উৎপন্ন হয়। এটি মাঝারি আকারের এবং এর খোসা পুরু। এর রস টক স্বাদের এবং এর খোসাও খাওয়া যায়।

কাগজী লেবুর জাতগুলি তাদের আকার, রঙ, স্বাদ এবং ফলনশীলতার ক্ষেত্রে পৃথক হয়। নির্দিষ্ট জাত নির্বাচন করার সময় এই বৈশিষ্ট্যগুলি বিবেচনা করা উচিত।

কাগজী লেবুর চাষ পদ্ধতি:

লেবুর চাষ পদ্ধতি

এটি একটি সাইট্রাস ফল যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। কাগজী লেবুর চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। কাগজী লেবুর চাষের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:

আরোও পড়ুন

তেঁতুলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।তেঁতুল কেন খাবেন?

জলবায়ু ও মাটি:

এ ফলটি চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। কাগজী লেবুর চাষের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হল ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাগজী লেবুর চাষের জন্য হালকা দোঁ-আশ বা বেলে দোঁ-আশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটির pH ৫-৬ হলে ভালো হয়।

জাত নির্বাচন:

এর অনেক জাত রয়েছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতের মধ্যে রয়েছে:

  • বাংলা লেবু: এই জাতটি বাংলাদেশের স্থানীয়। এটি ছোট আকারের এবং এর খোসা পাতলা। এর রস টক স্বাদের এবং এর খোসাও খাওয়া যায়।
  • এলাচী লেবু: এই জাতটিও বাংলাদেশের স্থানীয়। এটি বাংলা লেবুর মতোই দেখতে, তবে এর খোসাতে এলাচের মতো গন্ধ থাকে।
  • বারি লেবু-১: এই জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) দ্বারা উদ্ভাবিত। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত যা বছরে দুবার ফল দেয়।
  • বারি লেবু-২: এই জাতটিও BARI দ্বারা উদ্ভাবিত। এটি একটি ঝোপের মতো গাছ যা সারা বছর ফল দেয়।

চারা রোপণ:

সাধারণত কাগজী লেবুর চারা বীজ বা কলমের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হলে গাছটি ফল দেওয়া শুরু করতে অনেক সময় লাগে। কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হলে গাছটি দ্রুত ফল দেওয়া শুরু করে।

বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে হলে প্রথমে বীজকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজটি যখন ফোটে তখন তা মাটিতে রোপণ করতে হবে। কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করতে হলে প্রথমে একটি সুস্থ গাছ থেকে কলম কাটতে হবে। কলমটিকে মাটিতে রোপণ করার পর তাকে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।

পরিচর্যা:

গাছে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। কাগজী লেবুর গাছকে নিয়মিত সার দিতে হবে। বছরে দুইবার সার দেওয়া ভালো। প্রথমবার গাছ লাগানোর পর এবং দ্বিতীয়বার ফল আসলে সার দেওয়া যেতে পারে।

রোগবালাই:

বিভিন্ন রোগবালাই দ্বারা কাগজী লেবুর গাছ আক্রান্ত হতে পারে। কাগজী লেবুর গাছের সাধারণ রোগগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • লেবুর পাতায় দাগ: এই রোগটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি গাছের পাতায় দাগ সৃষ্টি করে।
  • লেবুর গাছের পোকামাকড়: লেবুর গাছের বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে। এই পোকামাকড় গাছের পাতা, ফুল এবং ফল নষ্ট করতে পারে।

এ গাছের রোগবালাই দমনের জন্য নিয়মিত পরিদর্শন করা এবং প্রয়োজনে কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফল সংগ্রহ:

সাধারণত কাগজী লেবুর ফল গাছে পাকলে সংগ্রহ করা হয়। কাগজী লেবুর ফল পাকলে এর খোসা হলুদ হয়ে যায়। কাগজী লেবুর ফল সংগ্রহ করার পর তাকে ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত।

কাগজী লেবু এর উপকারিতা:

 লেবু এর উপকারিতা

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে: 

এ লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে, যা ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়ায়: 

ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই কাগজী লেবু খেলে সর্দি-কাশি, জ্বর এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।

হজমশক্তি বাড়ায়: 

এ লেবুতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: 

কাগজী লেবুতে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: 

কাগজী লেবুতে থাকা ফাইবার ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ত্বকের জন্য উপকারী: 

ত্বকের জন্য খুব উপকারী এ লেবুর রস। এটি ত্বকের ব্রণ, দাগ এবং অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

চুলের জন্য উপকারী: 

চুলের জন্য উপকারী কাগজী লেবুর রস। এটি চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকে উজ্জ্বল করে তোলে।

কাগজী লেবুর অপকারিতা:

অপকারিতা কাগজী লেবুর

কাগজী লেবু একটি পুষ্টিকর ফল যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে কাগজী লেবু খেলে কিছু অপকারিতাও হতে পারে।

কাগজী লেবুর অপকারিতাগুলি হল:

  • অ্যাসিডিটি বাড়ানো: কাগজী লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা পেটে অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে, যাদের ইতিমধ্যেই গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বা পাকস্থলীর আলসার আছে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি হতে পারে।
  • দাঁতের ক্ষয়: কাগজী লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। তাই লেবু খাওয়ার পর অবশ্যই ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • ত্বকের ক্ষতি: এ লেবুর রস ত্বকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বকের শুষ্কতা বাড়াতে পারে।

এ ফলটি খাওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:

  • লেবু খাওয়ার পর অবশ্যই ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • যদি আপনার গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বা পাকস্থলীর আলসার থাকে, তাহলে লেবু খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • যদি আপনার ত্বকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া থাকে, তাহলে লেবুর রস ব্যবহার না করাই ভালো।
  • ত্বকের শুষ্কতা কমাতে লেবুর রস ব্যবহারের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

কাগজী লেবু এর উপকারিতা পেতে সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। প্রতিদিন ১ থেকে ২টি লেবু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

error: Content is protected !!