Skip to content
Home » MT Articles » জ্বর কী, কেন হয়, কাদের বেশি হয় ? জ্বর কত প্রকার ?

জ্বর কী, কেন হয়, কাদের বেশি হয় ? জ্বর কত প্রকার ?

জ্বর

জ্বর কী ?

শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করলে বা শরীরের উচ্চ তাপমাত্রাকে জ্বর বলা হয়।

চিকিৎসকরা বলেন, জ্বর আসলে কোন রোগ নয়, বরং এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। ফলে জ্বর হওয়াকে শরীরের ভেতরের কোনো রোগের সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে।

অনেক সময় সেটা সর্দিকাশির মতো সাধারণ সংক্রমণের কারণে হতে পারে, আবার অনেক সময় গুরুতর কোনো রোগের উপসর্গও হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শরীরের ভেতরে যখন কোনো জীবাণু আক্রমণ করে, সেটা ঠেকাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভিন্ন কোষ থেকে পাইরোজেন নামক এক ধরনের পদার্থ নিঃসরণ করে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে লড়াই করতে শুরু করে। এ কারণে জ্বরের অনুভূতি হয়।

মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শরীরের তাপমাত্রা এর বেশি হলেই তখন তাকে জ্বর বলা হয়ে থাকে।

জ্বর কেন হয়?

অনেকগুলো কারণে জ্বর হতে পারে। সবচেয়ে সাধারন কারণ হলো ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হওয়া বা সর্দি-কাশির কারণে জ্বর হওয়া।

এর বাইরে শরীরের ভেতরে কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ হলে, অর্থাৎ ইনফেকশন হলে জ্বর হতে পারে। প্রোটোজোয়া বা ফাঙ্গাস ইনফেকশনের কারণেও জ্বর হতে পারে।

যেকোনো ধরনের ম্যালিগনেন্সি বা ক্যান্সারের কারণেও জ্বর হতে পারে।

টিকা নিলে, ফোঁড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে।

করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগেরও প্রাথমিক লক্ষণ হলো জ্বর।

জ্বর কাদের বেশি হয় ?

যাঁদের মূলত  অন্যান্য কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাঁদের এই ভাইরাল ফিভারে আক্রান্তের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে অ্যাজমা, ক্রনিক ব্রংকাইটিস, হার্টের অসুখ ও ডায়াবেটিস থাকলে এই ভাইরাস খুব সহজে আক্রমণ করে। যারা শারীরিক অসুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ খায় তাঁদের এই জ্বরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ এক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এই জ্বর শরীরকে খুব দুর্বল করে দেয়। যা থেকে জ্বরের পাশাপশি সংক্রমণের সম্ভাবনাও দ্বিগুণ বেড়ে য়ায়। বিশেষ করে চেস্ট ইনফেকশন এক্ষেত্রে বেশি হয়। এই জ্বর থেকে নিউমোনিয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।জ্বর ছেড়ে গেলেও যদি কারও দীর্ঘদিন সর্দি-কাশি, দুর্বলতা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে  অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।  

জ্বর কত প্রকার ?

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় জ্বরকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

১. কন্টিনিউড জ্বর:

কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ২৪ ঘণ্টায় যখন শরীরের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১.৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত তারতম্য হয়, কিন্তু তাপমাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় আসে না, সেটাকে বলা হয় কন্টিনিউড জ্বর।

২. রেমিটেন্ট জ্বর:

যখন ২৪ ঘণ্টায় জ্বরের মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে তারতম্য হয়, তখন সেটাকে বলে রেমিট্যান্ট জ্বর।

৩. ইন্টারমিটেন্ট:

যখন জ্বর দৈনিক কয়েক ঘণ্টা করে শরীরে থাকে, আসে এবং যায়, তখন তাকে ইন্টারমিটেন্ট জ্বর বলা হয়।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ?

 অনেক সময় জ্বরের কারণ রোগী নিজেই বুঝতে পারেন। যেমন বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর এলে, ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বর থাকলে-সেটা কয়েকদিন পরেই ভালো হয়ে যায়। এ ধরনের জ্বরে সর্দি, কাশি বা ঠাণ্ডা থাকে, সাধারণ জ্বর থাকে। এরকম জ্বরে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

জ্বর , (ছবি-Vecteezy.com)

কিন্তু কোনো কোনো জ্বরের কিছু আলাদা উপসর্গ দেখা যায়। হয়তো রোগীর ঘনঘন প্রস্রাব হচ্ছে বা প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া হচ্ছে, পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হচ্ছে, তখন আমরা ধারণা করতে পারি, তার কিডনি বা প্রস্রাবের নালিতে হয়তো সংক্রমণ হয়েছে। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম, কারও যদি প্রচণ্ড জ্বর থাকে, পেছনে সরাসরি ব্যথা, চোখ লাল- তখন হয়তো ডেঙ্গুর আশঙ্কা থাকে। এরকম অনেক উপসর্গ দেখে জ্বরের চিকিৎসা করতে হয়।

কিন্তু আপাত দৃশ্যমান কোন কারণ ছাড়াই যদি কারও জ্বর হয়, তখন সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। কারণ সেটা গুরুতর কোন রোগের উপসর্গ হতে পারে। যদি দেখা যায় যে, একটানা অনেকদিন জ্বর থাকছে অথবা শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে, তখন কোনো রকম দেরি না করে, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ডেঙ্গুর মতো কিছু রোগের ক্ষেত্রে জ্বর হলে যতটা দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত । কারণ এই রোগে রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়। ফলে আক্রান্ত হওয়ার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দিতে হয়।

ক্যান্সার বা টিউমারের মতো সমস্যায় চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জ্বরের কারণ বের করেন।

জ্বরের সাথে ঘাড় বা শরীরের ব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা, বমি করা বা খাবার খেতে না পারা, তিনদিনের বেশি জ্বর থাকা, শুধু রাতে জ্বর আসা, শরীরে র‍্যাশ বের হওয়া, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, খিচুনি হওয়া-ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া কতটা ঠিক ?

নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া

বাংলাদেশে এটা একটা নিয়মিত প্রবণতা যে, জ্বর হলে নিজে নিজে প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ অনেকেই কিনে খেতে শুরু করেন।

জ্বরের প্রথমদিকে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অনেক সময় চিকিৎসকরা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ কোন ক্রমেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

এছাড়া জ্বর তিনদিনের বেশি থাকলে অথবা জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

অনেক সময় টিবি বা লিম্ফোমার জন্য শুধুমাত্র রাতের বেলায় জ্বর আসতে পারে। এরকম দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সম্পর্কিত:

এইচএমপিভি কি ভয়ঙ্কর? কিভাবে ছড়ায় এবং কি কি সতর্কতা নেবেন।

January 19, 2025

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কি? এই অ্যানিমিয়ার লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।

March 27, 2024

মাল্টিপল মায়েলোমা, একটি বিরল রক্তের ক্যান্সার।

March 31, 2024

থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে আপনার যা কিছু জানা প্রয়োজন।

July 11, 2023

ভাইরাল জ্বর কি, এর লক্ষণ কি কি ? ভাইরাল জ্বর হলে করণীয় কি ?

July 19, 2023

যক্ষা রোগ কি? যক্ষা রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা।

September 16, 2023

রক্তের চর্বি কি? রক্তের চর্বি বৃদ্ধির কারণ ও কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।

October 29, 2024

টাইফয়েড জ্বর কেন হয়? এর লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা।

July 18, 2023

নিপাহ ভাইরাস কি? এটি কিভাবে ছড়ায় ? প্রতিরোধে করনীয় কি?

January 13, 2024

শিশুদের দাঁতব্রাশ কত বছর বয়স থেকে শুরু করা উচিৎ?

August 24, 2023
error: Content is protected !!