রুপচাঁদা মাছ
রুপচাঁদা মাছ (Pomfret fish) বা পমফ্রেট মাছ (Pomfret fish) হলো এক ধরণের সামুদ্রিক মাছ যা হিন্দ মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণমণ্ডলীয় এবং উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় জলে পাওয়া যায়। এটি বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং চীনের মতো এশিয়ার অনেক দেশে জনপ্রিয়।
রুপচাঁদা মাছ তার চ্যাপ্টা, ডিম্বাকৃতির শরীর এবং রুপালী রঙের চামড়ার জন্য পরিচিত। এটি একটি মাঝারি আকারের মাছ হতে পারে, যার দৈর্ঘ্য ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। রুপচাঁদা মাছের দুটি পাখনা, দুটি পেটের পাখনা এবং একটি লেজের পাখনা থাকে।
রুপচাঁদা মাছের বৈশিষ্ট্য:
- এটি একটি সামুদ্রিক মাছ যা হিন্দ মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণমণ্ডলীয় এবং উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় জলে পাওয়া যায়।
- এটি একটি চ্যাপ্টা, ডিম্বাকৃতির শরীর এবং রুপালী রঙের চামড়া সহ একটি মাঝারি আকারের মাছ।
- এটিতে দুটি পাখনা, দুটি পেটের পাখনা এবং একটি লেজের পাখনা থাকে।
- এটি প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজের একটি ভালো উৎস।
- এটি সাধারণত ভাজা, পোড়া, ঝোল, রস, এবং তরকারিতে রান্না করা হয়।
রুপচাঁদা মাছ এর পুষ্টিগুণ:
রুপচাঁদা মাছের পুষ্টিউপাদান টেবিল (প্রতি ১০০ গ্রাম)
পুষ্টিউপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালোরি | ১০০ |
প্রোটিন | ২০ গ্রাম |
চর্বি | ৩ গ্রাম |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ০.৫ গ্রাম |
আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ২.৫ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ০ গ্রাম |
ফাইবার | ০ গ্রাম |
চিনি | ০ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৭০ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৩০০ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৩০ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ২৫ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ২৫০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৫০০ আইইউ |
ভিটামিন ডি | ৫০ আইইউ |
ভিটামিন বি১ | ০.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি২ | ০.২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৩ | ৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১২ | ১ মাইক্রোগ্রাম |
লোহা | ১ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ১ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ২৫ মাইক্রোগ্রাম |
দ্রষ্টব্য:
- এই টেবিলটি কেবলমাত্র একটি গাইডলাইন হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। পুষ্টিউপাদানের পরিমাণ মাছের প্রজাতি, আকার এবং উৎসের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

রূপচাঁদা মাছ এর উপকারিতা:
১) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
- রূপচাঁদা মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে এবং HDL (“ভালো”) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
- রূপচাঁদা মাছ রক্তচাপ কমাতে এবং রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতেও সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে:
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষের ঝিল্লিকে গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে।
- রূপচাঁদা মাছে ভিটামিন বি১২ এবং কোলিনও থাকে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আরোও পড়ুন
বাগদা চিংড়ির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।
৩) চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে:
- রূপচাঁদা মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং অন্যান্য চোখের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৪) প্রদাহ কমায়:
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, যা গেঁটেবাত, রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৫) ওজন কমাতে সাহায্য করে:
- রূপচাঁদা মাছে প্রোটিন এবং ক্যালোরি কম থাকে, যা এটিকে ওজন কমানোর জন্য একটি ভালো খাবার করে তোলে।
- প্রোটিন আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করে এবং ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে পারে।
৬) হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে:
- রূপচাঁদা মাছে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৭) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
- রূপচাঁদা মাছে ভিটামিন এ এবং সিলেনিয়াম থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
৮) পুষ্টি:
- রূপচাঁদা মাছ প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজের একটি ভালো উৎস।
- এতে ক্যালোরি এবং চর্বিও কম থাকে।

রূপচাঁদা মাছ এর অপকারিতা:
মাছের অ্যালার্জি:
যাদের মাছ এ অ্যালার্জি আছে তাদের রূপচাঁদা মাছ এড়িয়ে চলা উচিত। এলার্জির প্রতিক্রিয়া হালকা থেকে তীব্র হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট এবং এমনকি অ্যানাফিল্যাক্সিসও।
অতিরিক্ত চর্বি:
রূপচাঁদা মাছের ত্বকে এবং পেটের অংশে অতিরিক্ত চর্বি থাকতে পারে। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এই অংশগুলি পরিমিতভাবে খাওয়া বা এড়িয়ে চলা উচিত।
পারদ:
সমস্ত সামুদ্রিক মাছের মতো, রূপচাঁদা মাছেও সামান্য পরিমাণে পারদ থাকতে পারে। উচ্চ মাত্রার পারদ গ্রহণ গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলা, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
রূপচাঁদা মাছের রেসিপি:
রূপচাঁদা মাছের ভুনা:
উপকরণ:
- রূপচাঁদা মাছ – ১ টি (মাঝারি আকারের)
- পেঁয়াজ কুচি – ১/২ কাপ
- আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
- তেল – ভাজার জন্য
- ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য (ঐচ্ছিক)

রান্না প্রণালী:
- রূপচাঁদা মাছ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। লবণ এবং হলুদ দিয়ে মাখিয়ে রাখুন ১৫ মিনিটের জন্য।
- একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
- পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া এবং ধনে গুঁড়া দিয়ে কষিয়ে নিন।
- মসলা কষানো হয়ে গেলে অল্প পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন।
- ঝোল ঘন হয়ে এলে মাছগুলো দিয়ে ঢেকে দিন এবং মাঝারি আঁচে রান্না করুন।
- মাছ সেদ্ধ হয়ে গেলে এবং ঝোল ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন।
- ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন রুটি, ভাত বা খিচুড়ির সাথে।
পরিবেশন:
গরম গরম রূপচাঁদা মাছের ভুনা পরিবেশন করুন রুটি, ভাত বা খিচুড়ির সাথে। লেবুর রস বা সবজি সালাদ দিয়ে আরও সুস্বাদু করে খেতে পারেন।
টিপস:
- আপনি চাইলে ঝোলে কাঁচা মরিচ, টমেটো, আলু বা অন্যান্য সবজি যোগ করতে পারেন।
- ঝাল পছন্দ করলে মরিচ গুঁড়ার পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
- রূপচাঁদা মাছের ত্বক পছন্দ করলে তা খোসা ছাড়াই রান্না করতে পারেন।
- মাছ ভাজার সময় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
রূপচাঁদা মাছ ভাজা:
উপকরণ:
- রূপচাঁদা মাছ – ২ টি (মাঝারি আকারের)
- হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া – ১/৪ চা চামচ
- ধনে গুঁড়া – ১/৪ চা চামচ
- লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
- তেল – ভাজার জন্য
- লেবুর রস – ১ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)

রান্না প্রণালী:
- রূপচাঁদা মাছ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
- একটি পাত্রে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া এবং লবণ মিশিয়ে নিন।
- মাছগুলোতে মশলা মিশ্রণ মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
- একটি কড়াইতে তেল গরম করুন।
- তেল গরম হয়ে গেলে মাছগুলো দিয়ে ভেজে নিন।
- মাছ দুপাশ লালচে বাদামী এবং মুচমুচে না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
- ভাজা হয়ে গেলে লেবুর রস (ঐচ্ছিক) ছিটিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
পরিবেশন:
গরম গরম রূপচাঁদা মাছ ভাজা পরিবেশন করুন ভাত, রুটি, খিচুড়ি বা আপনার পছন্দের যেকোনো খাবারের সাথে।
টিপস:
- আপনি চাইলে মশলা মিশ্রণে আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা যোগ করতে পারেন।
- ঝাল পছন্দ করলে মরিচ গুঁড়ার পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
- মাছ ভাজার সময় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
- রূপচাঁদা মাছের ত্বক পছন্দ করলে তা খোসা ছাড়াই রান্না করতে পারেন।
- লেবুর রসের পরিবর্তে আপনি টমেটো সস বা ধনেপাতা কুচি ব্যবহার করতে পারেন।
রূপচাঁদা মাছের ঝোল:
উপকরণ:
- রূপচাঁদা মাছ – ২ টি (মাঝারি আকারের)
- পেঁয়াজ কুচি – ১/২ কাপ
- আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- মসুর ডাল – ১/২ কাপ
- টমেটো কুচি – ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক)
- লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
- তেল – রান্নার জন্য
- ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য (ঐচ্ছিক)

রান্না প্রণালী:
- রূপচাঁদা মাছ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। লবণ এবং হলুদ দিয়ে মাখিয়ে রাখুন ১৫ মিনিটের জন্য।
- একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
- পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া এবং ধনে গুঁড়া দিয়ে কষিয়ে নিন।
- মসলা কষানো হয়ে গেলে টমেটো কুচি (ঐচ্ছিক) দিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন।
- ঝোল ঘন হয়ে এলে মসুর ডাল, লবণ এবং পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন।
- ডাল সেদ্ধ হয়ে গেলে মাছগুলো দিয়ে ঢেকে দিন এবং মাঝারি আঁচে রান্না করুন।
- মাছ সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।
- ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মসুর ডালের সাথে।
পরিবেশন:
গরম গরম রূপচাঁদা মাছের ঝোল পরিবেশন করুন মসুর ডালের সাথে। ভাত, রুটি বা খিচুড়ির সাথেও খেতে পারেন।
টিপস:
- আপনি চাইলে ঝোলে কাঁচা মরিচ, আলু, বা অন্যান্য সবজি যোগ করতে পারেন।
- ঝাল পছন্দ করলে মরিচ গুঁড়ার পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
- রূপচাঁদা মাছের ত্বক পছন্দ করলে তা খোসা ছাড়াই রান্না করতে পারেন।
- মাছ ঝোলে দীর্ঘক্ষণ রান্না না করলে ভালো থাকে, কারণ বেশি রান্না করলে মাছ শক্ত হয়ে যেতে পারে।
- ধনেপাতা কুচির পরিবর্তে আপনি লেবুর রস বা সবজি সালাদ ব্যবহার করতে পারেন।
This article is written with the help of Gemini