Skip to content
Home » MT Articles » জাম এর  উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ। জাম কেন খাবেন ?

জাম এর  উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ। জাম কেন খাবেন ?

জাম

জাম

গ্রীষ্মের অন্যতম  মৌসুমি ফল জাম। দেখতে ছোট এই ফলটি খেতে বেশ সুস্বাদু। জামের কিন্তু অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা। জাম খেলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জাম গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এটি জুন, জুলাই বা আগস্ট মাসেও পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন, খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ এবং এতে অনেক ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর অনন্য রঙ এবং টক-মিষ্টি স্বাদের জন্য অনেকের কাছেই এটি প্রিয়। এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম, কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর। এই ফলের  বীজ, পাতা ও ছালের ঔষধি গুন রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতে ব্যবহার করা হয়। এই ফল বেশ সহজলভ্য আমাদের দেশে। 

জামের পুষ্টিগুণ:

জাম একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। এটি ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ উৎস।এখানে জামের পুষ্টি উপাদানগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল :

  • ক্যালোরি: 46
  • কার্বোহাইড্রেট: 10 গ্রাম
  • প্রোটিন: 1 গ্রাম
  • ফ্যাট: 0.2 গ্রাম
  • ফাইবার: 2.4 গ্রাম
  • ভিটামিন সি: 25 মিলিগ্রাম (31% দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
  • ভিটামিন এ: 250 আইইউ (50% দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
  • ক্যালসিয়াম: 11 মিলিগ্রাম (1% দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
  • আয়রন: 0.2 মিলিগ্রাম (1% দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)
  • পটাসিয়াম: 186 মিলিগ্রাম (4% দৈনিক চাহিদা পূরণ করে)

জাম এর  উপকারিতা:

১. ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে জাম:

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এটি বেশ কার্যকরী।ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম খুবই উপকারী। কারণ, এতে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রোপার্টিজ-এর কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যা স্টার্চ ও চিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরে শক্তির যোগান দেয়। আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে জামের বীজ ৩০%-এর বেশি পরিমাণে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।

জামের বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে

২. হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে জাম:

জাম ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ক্যালসিয়াম হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অস্টিওপরোসিস (হাড় ক্ষয়ে যাওয়া ) রোগীদের ও বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু ফলটি রাখা উচিত।

৩. ইনফেকশন দূর করতে সাহয্য করে:

এতে ম্যালিক অ্যাসিড, গ্যালিক অ্যাসিড,অক্সালিক অ্যাসিড এবং ট্যানিনস এর মতো যৌগ রয়েছে। একইসাথে এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ আছে। শরীর থেকে টক্সিন এলিমেন্টস ও ইনফেকশন দূর করতে জামের ভূমিকা অতুলনীয়।

৪. হজমে সাহায্য করে:

হজমের সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে এই ফলটি। এতে রয়েছে উচ্চ ফাইবার ও পানি। ফলে এটি হজমের উন্নতি এবং অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি পেট ফাঁপা হওয়ার মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে।

আরোও পড়ুন

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ভালোমত জানুন। নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।

৫. মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে জাম:

জাম খেলে মাড়ির রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। এটি মাড়ির প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।জামের পাতায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। তাই এটি মুখের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে।

৬. জন্ডিস ও অ্যানিমিয়া নিরাময়ে সাহয্য করে:

আয়রন জামের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে একটি। যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কম, তাদের জন্য এটি বেশ উপকারী। জামে থাকা আয়রন অ্যানিমিয়া ও জন্ডিস নিরাময় করে এবং রক্ত স্বল্পতাজনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুব উপকারী।

জাম

৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে জাম:

জামের কেমো প্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা হয়েছে। জে. সি. জ্যাগেটিয়া ও তার কলিগদের একটি গবেষণা অনুযায়ী এই ফলের নির্যাসে প্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য আছে, যা প্রমাণ করে যে এই ফলের নির্যাস ক্যান্সার কোষকে প্রিভেন্ট করে। এটি ফ্রি রেডিক্যালসকে নিউট্রিলাইজ করতেও ভূমিকা রাখে।

৮. ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে জাম:

এই ফলটি দেহের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। এতে থাকা ভিটামিন-সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট  সিজনাল ফ্লু এর বিরুদ্ধে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট আপ করে। সেই সাথে এটি মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। এটি স্কিনের জন্যও বেশ উপকারী।

৯. ত্বক কোমল রাখতে সাহয্য করে:

জামে আছে ভিটামিন এ, বি এবং সি। এর পাশাপাশি রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। জাম খাওয়ার ফলে ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ত্বক হয়ে ওঠে আরও কোমল। তাই তারুণ্যের উজ্জ্বলতা বাড়াতে জামের ভূমিকা অপরীহার্য।

১০. হার্ট ভাল রাখতে সাহয্য করে:

জামে আছে অ্যালজিনিক অ্যাসিড বা অ্যালজিট্রিন, অ্যান্থোসিয়ানিন ও অ্যান্থোসায়ানাডিনস এর  মতো পুষ্টিসমূহ যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং এই যৌগগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসসমৃদ্ধ যা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ রাখতে অসামান্য অবদান রাখে। এছাড়াও জামে থাকে পটাসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে, এবং হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি কমায়।

১১. ওজন কমাতে সাহয্য করে:

জামে ফাইবারের পরিমাণ বেশি আর ক্যালোরির পরিমাণ কম। এটি তৃপ্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে ওজন রাখে নিয়ন্ত্রণে। জাম মুখরোচক কিন্তু স্বাস্থ্যকর যা ক্ষুধা নিবারণ করে এবং ক্ষুধা কমিয়ে রাখে।

error: Content is protected !!