Skip to content
Home » MT Articles » অর্জুন গাছ এর ছাল ও পাতার উপকারিতা জানলে অবাক হবেন আপনিও!

অর্জুন গাছ এর ছাল ও পাতার উপকারিতা জানলে অবাক হবেন আপনিও!

অর্জন গাছ

অর্জুন গাছ

অর্জুন গাছ (Terminalia arjuna) হল টারমিনালিয়া গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে পাওয়া যায়।অর্জুন গাছ পত্রঝরা, মধ্যম বা বৃহৎ আকৃতির বৃক্ষ, যা প্রায় ২০-২৫ মিটার উঁচু হতে পারে। এর পাতা লম্বাটে, ডিম্বাকৃতির, ৮-২০ সেমি দীর্ঘ এবং ৩-১২ সেমি চওড়া। ফুলগুলি ছোট, সাদা বা হলুদ রঙের, এবং স্পাইক আকারে সাজানো থাকে। ফলগুলি ডিম্বাকৃতির, ৩-৫ সেমি দীর্ঘ এবং ১-২ সেমি চওড়া। অর্জুন গাছ ঔষধি গুণাবলীর জন্য বিখ্যাত। এর ছাল, বীজ এবং পাতা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

অর্জুন গাছের ছালের পুষ্টিগুণ:

অর্জুন গাছের ছালে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নীচে একটি টেবিল দেওয়া হল যাতে অর্জুন গাছের ছালের 100 গ্রামে কতগুলি পুষ্টি উপাদান থাকে তা দেখানো হল:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ (গ্রাম/100 গ্রাম)
জল10.2
প্রোটিন2.4
চর্বি0.2
কার্বোহাইড্রেট78.4
তন্তু23.0
খনিজ পদার্থ3.8
ক্যালসিয়াম180 মিলিগ্রাম
ফসফরাস120 মিলিগ্রাম
আয়রন2.5 মিলিগ্রাম
ভিটামিন
ভিটামিন এ10 মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন বি1 (থায়ামিন)0.1 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি2 (রিবোফ্লাভিন)0.2 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি3 (নিয়াসিন)1.5 মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি10 মিলিগ্রাম

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান:

  • গ্যালিক অ্যাসিড: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  • এলাজিক অ্যাসিড: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • ট্যানিন: অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যৌগ।
  • স্টেরল: কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

মনে রাখবেন যে এই তথ্য শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে এবং কোনও চিকিৎসা পেশাদারের পরামর্শের বিকল্প নয়।

অর্জুন গাছ এর পাতার উপকারিতা:

অর্জুন গাছের পাতা বেশ কিছু ঔষধি গুণাবলী সমৃদ্ধ।

কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা নীচে দেওয়া হল:

  • আমাশয়ের সমস্যা: অর্জুন গাছের পাতা আমাশয়ের প্রদাহ, পেট খারাপ এবং অতিসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাতাগুলির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ডায়রিয়াল গুণাবলী পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস: অর্জুন গাছের পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে অর্জুন পাতার নির্যাস ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় জটিলতা: অর্জুন গাছের পাতা গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্লাম্পসিয়া (উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রস্রাবের মধ্যে প্রোটিন) প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: অর্জুন গাছের পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  • ত্বকের যত্ন: অর্জুন গাছের পাতা ত্বকের জন্য উপকারী। এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণাবলী থাকে যা ত্বকের সংক্রমণ এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
অর্জুন গাছ এর পাতার উপকারিতা

অর্জুন গাছের পাতা ব্যবহারের উপায়:

  • চা: অর্জুন গাছের শুকনো পাতা দিয়ে চা তৈরি করা যায়। এই চা পান করলে আমাশয়ের সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা: অর্জুন গাছের তাজা পাতা কাঁচা খাওয়া যায়। এটি রক্ত ​​পরিশোধন করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • গুঁড়ো: অর্জুন গাছের শুকনো পাতা গুঁড়ো করে তাও ব্যবহার করা যায়। এই গুঁড়া দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় অথবা ত্বকের সংক্রমণের উপর প্রয়োগ করা যায়।

অর্জুন গাছের পাতা ব্যবহারের পূর্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী বা অন্য কোনও ঔষধ সেবন করেন।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা:

হৃদরোগ:

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: অর্জুন গাছের ছালে কোয়ারসেটিন নামক এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তনালীকে প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: অর্জুন গাছের ছাল LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং HDL (ভাল) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • হৃৎপিণ্ডের পেশী শক্তিশালী করে: অর্জুন গাছের ছাল হৃৎপিণ্ডের পেশীকে শক্তিশালী করতে এবং হৃদস্পন্দন নিয়মিত করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস:

  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: অর্জুন গাছের ছাল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা উন্নত করে এবং শরীরের গ্লুকোজ ব্যবহারের ক্ষমতা বাড়ায়।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অন্যান্য উপকারিতা:

  • অ্যালার্জি: অর্জুন গাছের ছাল অ্যালার্জির লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সাহায্য করে। এটি হিস্টামিনের মুক্তি রোধ করে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।
  • জ্বর: অর্জুন গাছের ছাল জ্বর কমাতে সাহায্য করে। এতে অ্যান্টি-পাইরেটিক গুণাবলী থাকে যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: অর্জুন গাছের ছাল দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে নিরাময় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
  • অস্টিওপোরোসিস: অর্জুন গাছের ছাল হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় জটিলতা: অর্জুন গাছের ছাল গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্লাম্পসিয়া (উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রস্রাবের মধ্যে প্রোটিন) প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
  • ত্বকের যত্ন: অর্জুন গাছের ছাল ত্বকের জন্য উপকারী। এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণাবলী থাকে যা ত্বকের সংক্রমণ এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহারের নিয়ম:

  • চা: অর্জুন গাছের শুকনো ছাল ভেজে চা তৈরি করা যায়। এই চা পান করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অ্যালার্জির উপকার পাওয়া যায়।
  • কাঁচা: অর্জুন গাছের তাজা ছাল কাঁচা খাওয়া যায়। তবে, এটি স্বাদে তেতো হতে পারে।
  • গুঁড়ো: অর্জুন গাছের শুকনো ছাল গুঁড়ো করে তাও ব্যবহার করা যায়। এই গুঁড়া দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় অথবা জলে মিশিয়ে পান করা যায়।
  • ক্যাপসুল: অর্জুন গাছের ছালের তৈরি ক্যাপসুল বাজারে সহজলভ্য।

অর্জুন গাছ এর ছালের অপকারিতা:

অর্জুন গাছ এর ছাল ঔষধি গুণাবলীর জন্য বিখ্যাত, তবে কিছু সম্ভাব্য অপকারিতাও রয়েছে যা ব্যবহারের পূর্বে অবগত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা নীচে দেওয়া হল:

আরোও পড়ুন

লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা, অপকারিতা ও ব্যবহার।
  • গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য: গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ এর নিরাপত্তা সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।
  • রক্তচাপের ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: অর্জুন গাছের ছাল রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি রক্তচাপের ওষুধ খান তবে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত কারণ এটি রক্তচাপকে অনেক বেশি কমিয়ে দিতে পারে।
  • শল্যচিকিৎসার আগে: অর্জুন গাছের ছাল রক্ত ​​জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমাতে পারে। আপনি যদি শল্যচিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হন তবে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার বন্ধ করা উচিত, সাধারণত শল্যচিকিৎসার দুই সপ্তাহ আগে।
  • অন্যান্য ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: অর্জুন গাছের ছাল অন্যান্য ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং রক্ত ​​পাতলাকারক। আপনি যদি অন্য কোনও ওষুধ খান তবে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
  • অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া: কিছু লোক অর্জুন গাছের ছালের প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফোলাভাব, চুলকানি, লালভাব এবং শ্বাসকষ্ট। আপনি যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে অবিলম্বে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার বন্ধ করুন এবং একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
গুড়া

সাধারণভাবে, অর্জুন গাছের ছাল বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তবে, উপরে তালিকাভুক্ত সম্ভাব্য অপকারিতাগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং আপনি যদি কোনও ওষুধ খান বা কোনও চিকিৎসাগত অবস্থা থাকে তবে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।

This article is written with the help of Gemini

সম্পর্কিত:

সয়াবিন তেল: সয়াবিন তেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

March 19, 2025

কিডনি সুস্থ রাখতে ১০ টি খাবার।

October 15, 2023

বরবটির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

September 3, 2023

আলুর কি ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। আলু খেলে কি কি উপকার ও অপকার হতে পারে?

September 2, 2023

সাগুদানা কি? সাগুদানার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

December 9, 2023

থানকুনি পাতার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

February 25, 2024

সরিষার তেল: সরিষা তেলের পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা।

March 16, 2025

পুঁই শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

February 22, 2024

কমলি শাকের পুষ্টিউপাদান, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

June 12, 2024

মধুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। মধু কেন খাবেন?

August 31, 2023
error: Content is protected !!