কাজু বাদাম
কাজু বাদাম একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার। কাজু বাদামের ইংরেজী নাম Goa-almond। এটি একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বীজ। বীজের নাম অনুযায়ী এই গাছকে কাজু বাদাম গাছ ডাকা হয়। এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো Anacardiaceae পরিবারের একটি বৃক্ষ। এ গাছের রসালো ফলের অভ্যন্তরে ৩-৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বীজ থাকে যা পরিপক্ব ফল থেকে বের করে নিয়ে সরাসরি বা ভেজে খাওয়া হয়। কাজু বাদাম একটি উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে।
কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ:
কাজুবাদাম একটি পুষ্টিকর খাবার যা প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। একটি আউন্স (২৮.৩ গ্রাম) কাজুবাদাম থেকে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়:
- ক্যালোরি: ১৫৭
- প্রোটিন: ৫.২ গ্রাম
- ফ্যাট: ১২.৪ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৮.৬ গ্রাম
- ফাইবার: ০.৯ গ্রাম
- চিনি: ১.৭ গ্রাম
- ভিটামিন ই: ১৭%
- সেলেনিয়াম: ৪০%
- ম্যাগনেসিয়াম: ৩৫%
- পটাসিয়াম: ১৪%
- তামা: ৭৩%
- ম্যাঙ্গানিজ: ৪০%
- ফসফরাস: ২৩%
- আয়রন: ৮%
- ভিটামিন বি৬: ১৩%
কাজু বাদামের উপকারিতা:

১) হৃদ স্বাস্থ্যের উন্নতি:
কাজুবাদাম ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস। ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদয় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি রক্তচাপ কমাতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
২) রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
কাজুবাদামে ফাইবার এবং প্রোটিন রয়েছে, যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৩) ওজন কমাতে সাহায্য:
কাজুবাদামে প্রোটিন এবং ফাইবার রয়েছে, যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি ওজন কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৪) ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি:
আরোও পড়ুন
কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।
কাজুবাদাম ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। ভিটামিন ই ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি ত্বকের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং ত্বকের বয়সকে ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
৫) চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি:
কাজুবাদাম ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি চুলের বৃদ্ধি এবং পুনর্জন্মকে উৎসাহিত করতে পারে।
৬) স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে:
কাজুবাদাম সেলেনিয়ামের একটি ভালো উৎস। সেলেনিয়াম একটি খনিজ যা স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৭) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে:
কাজুবাদাম অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
৮) ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে:
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কাজুবাদাম ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
কাজুবাদামের অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

- ওজন বৃদ্ধি: কাজুবাদাম একটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার। প্রতি আউন্স কাজুবাদাম (২৮.৩ গ্রাম)-এ ১৫৭ ক্যালোরি থাকে। তাই, অতিরিক্ত কাজুবাদাম খাওয়া ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
- অ্যালার্জি: কাজুবাদাম একটি সাধারণ অ্যালার্জেন। কাজুবাদাম খেলে কারো কারো অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে চুলকানি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট এবং অ্যানাফিল্যাক্সিস।
- গ্যাস এবং ফুলে যাওয়া: কাজুবাদাম ফাইবার সমৃদ্ধ। ফাইবার হজমে সাহায্য করে, তবে এটি গ্যাস এবং ফুলে যাওয়ার কারণও হতে পারে।
- কিডনি পাথর: কাজুবাদাম অক্সালেট সমৃদ্ধ। অক্সালেট কিডনি পাথরের একটি উপাদান। তাই, কিডনি পাথরের সমস্যা থাকলে কাজুবাদাম খাওয়া এড়ানো উচিত।
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম:
- কাজু বাদাম কাঁচা খাওয়ার চেয়ে সেদ্ধ বা ভাজা কাজু বাদাম খাওয়া ভালো। সেদ্ধ বা ভাজা কাজু বাদাম হজম করা সহজ হয়।
- কাজু বাদাম বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। প্রতিদিন 25-30 গ্রাম কাজু বাদাম খাওয়া যেতে পারে।
- কাজু বাদাম খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
- কাজু বাদাম খাওয়ার সময় বেশি করে চিবানো উচিত। এতে কাজু বাদামের পুষ্টি উপাদানগুলো ভালোভাবে শোষিত হয়।