জিরা
জিরা একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটিতে ছোট, ত্রিকোণ আকৃতির বাদামী বীজ হয়। জিরার বীজই এর মূল ভোগ্য অংশ। জিরার বীজকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জিরার বীজ থেকে তেলও তৈরি করা হয়। জিরার তেল রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, জিরার তেল ঔষধি গুণসম্পন্ন। এটি নানা ধরনের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
জিরার প্রকারভেদ:
জিরা সাধারণত দুটি প্রকার: সাদা জিরা এবং কালো জিরা।
সাদা জিরা হল সবচেয়ে সাধারণ ধরণের জিরা। এটি হালকা হলুদ বা সাদা রঙের হয়। সাদা জিরার স্বাদ হালকা এবং সুগন্ধি। এটি রান্নায় এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কালো জিরা হল একটি শক্তিশালী গন্ধযুক্ত মসলা। এটি বাদামী বা কালো রঙের হয়। কালো জিরার স্বাদ ঝাল এবং তেতো। এটি রান্নায় এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জিরার কিছু অন্যান্য জাতও রয়েছে। যেমন:
- বেঙ্গল জিরা: এটি সাদা জিরার মতো দেখতে হয়, তবে এটির স্বাদ আরও তীব্র।
- চিনি জিরা: এটি সাদা জিরার মতো দেখতে হয়, তবে এটির স্বাদ আরও মিষ্টি।
- জাপানি জিরা: এটি সাদা জিরার মতো দেখতে হয়, তবে এটির স্বাদ আরও ঝাল।
জিরার পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে) |
ক্যালোরি | 375 |
প্রোটিন | 14.9 গ্রাম |
ফ্যাট | 25.4 গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | 34.4 গ্রাম |
ফাইবার | 25.7 গ্রাম |
ভিটামিন এ | 15% |
ভিটামিন বি১ | 10% |
ভিটামিন বি২ | 15% |
ভিটামিন বি৩ | 20% |
ভিটামিন বি৬ | 15% |
ভিটামিন সি | 10% |
ক্যালসিয়াম | 20% |
আয়রন | 100% |
ম্যাগনেসিয়াম | 50% |
ফসফরাস | 70% |
পটাসিয়াম | 20% |
জিঙ্ক | 100% |
জিরার উপকারিতা:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ:
জিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি ক্যান্সার, হৃদরোগ, আলঝেইমার রোগ এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ:
আরোও পড়ুন
হলুদের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।
জিরার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থারাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ:
জিরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি সর্দি-কাশি, জ্বর, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ:
জিরার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ ছত্রাকজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি পায়ের ছত্রাক, ত্বকের ছত্রাক এবং অন্যান্য ছত্রাকজনিত সংক্রমণের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
জিরার অ্যান্টি-ইনসুলিন প্রভাব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:
জিরার ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং HDL (ভাল) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো:
জিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-কোলেস্টেরল গুণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তনালীগুলোকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি:
জিরার ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এবং অম্বলের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
ওজন কমানো:
জিরার ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
জিরা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মসলা। এটি রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, জিরার ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি নানা ধরনের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
জিরা এর কিছু নির্দিষ্ট উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হল:
- জিরার তেল মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- জিরার তেল অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- জিরার তেল মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
- জিরার তেল চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।
- জিরার তেল ত্বকের ব্রণ এবং অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
জিরা এর অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

- হজম সমস্যা: জিরার ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এবং অম্বলের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- রক্তচাপ কমে যাওয়া: জিরার অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ প্রভাব রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। তাই, রক্তচাপ কমে যাওয়ার সমস্যা থাকলে জিরা গ্রহণের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: জিরার অ্যান্টিহাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের জিরা গ্রহণের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য: গর্ভবতী মহিলাদের জিরা গ্রহণের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
জিরার তেল অতিরিক্ত ব্যবহার করলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
জিরার তেলের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হল:
- চোখ, ত্বক বা শ্বাসযন্ত্রের সংস্পর্শে আসলে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদানকালে ব্যবহার করা উচিত নয়।
জিরার অপকারিতা এড়াতে, এটি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।