লবঙ্গ
লবঙ্গ হল একটি মসলা যা লবঙ্গ গাছের ফুলের কুঁড়িকে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। লবঙ্গের আদি বাস ইন্দোনেশিয়ায়, তবে বর্তমানে এটি পৃথিবীর সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার ও তাঞ্জানিয়া লবঙ্গের বৃহত্তম উৎপাদক দেশ।লবঙ্গ একটি শক্তিশালী গন্ধযুক্ত মসলা। এটি রান্নায় ব্যবহার করা হয়। লবঙ্গের স্বাদ ঝাল এবং তেতো। এটি মাংস, মাছ, সবজি, স্যুপ এবং বিভিন্ন মিষ্টি খাবারে ব্যবহার করা হয়।
লবঙ্গের প্রকারভেদ:
লবঙ্গের প্রধানত দুটি প্রকারভেদ রয়েছে:
- সাদা লবঙ্গ: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের লবঙ্গ। এটি হালকা হলুদ বা সাদা রঙের হয়। সাদা লবঙ্গের স্বাদ হালকা এবং সুগন্ধি। এটি রান্নায় এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- কালো লবঙ্গ: এটি একটি শক্তিশালী গন্ধযুক্ত মসলা। এটি বাদামী বা কালো রঙের হয়। কালো লবঙ্গের স্বাদ ঝাল এবং তেতো। এটি মাংস, মাছ, সবজি, স্যুপ এবং বিভিন্ন মিষ্টি খাবারে ব্যবহার করা হয়।
লবঙ্গের অন্যান্য জাতও রয়েছে। যেমন:
- বেঙ্গল লবঙ্গ: এটি সাদা লবঙ্গের মতো দেখতে হয়, তবে এটির স্বাদ আরও তীব্র।
- চিনি লবঙ্গ: এটি সাদা লবঙ্গের মতো দেখতে হয়, তবে এটির স্বাদ আরও মিষ্টি।
- জাপানি লবঙ্গ: এটি সাদা লবঙ্গের মতো দেখতে হয়, তবে এটির স্বাদ আরও ঝাল।
লবঙ্গের পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
ক্যালোরি | 22 |
প্রোটিন | 2.2 গ্রাম |
ফ্যাট | 0.9 গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | 4.5 গ্রাম |
ফাইবার | 2.3 গ্রাম |
ভিটামিন সি | 1 মিলিগ্রাম |
আয়রন | 0.2 মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | 25 মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | 20 মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | 140 মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | 0.3 মিলিগ্রাম |
ম্যাঙ্গানিজ | 0.2 মিলিগ্রাম |
কপার | 0.02 মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | 1 মাইক্রোগ্রাম |
লবঙ্গের উপকারিতা:

১) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
লবঙ্গ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি ক্যান্সার, হৃদরোগ, আলঝেইমার রোগ এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২) অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি:
লবঙ্গ অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থারাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
৩) অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল:
লবঙ্গ অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সর্দি-কাশি, জ্বর, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
লবঙ্গের অ্যান্টি-ইনসুলিন প্রভাব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৫) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:
লবঙ্গের ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং HDL (ভাল) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬) হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো:
আরোও পড়ুন
জিরা কি? জিরার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।জিরা কেন খাবেন?
লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-কোলেস্টেরল গুণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তনালীগুলোকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৭) হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি:
লবঙ্গের ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এবং অম্বলের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৮) ওজন কমানো:
লবঙ্গের ফাইবার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
৯) মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি:
লবঙ্গের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির প্রদাহ এবং মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
১০) ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি:
লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
লবঙ্গ এর অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

লবঙ্গ একটি নিরাপদ মসলা, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। লবঙ্গের কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা হল:
- পেট ব্যথা: লবঙ্গের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য পেট ব্যথার কারণ হতে পারে।
- অম্বল: লবঙ্গের অ্যাসিডিক প্রকৃতি অম্বলের কারণ হতে পারে।
- বমি বমি ভাব: লবঙ্গের অ্যাসিডিক প্রকৃতি বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
- হজম সমস্যা: লবঙ্গের অ্যাসিডিক প্রকৃতি হজম সমস্যার কারণ হতে পারে।
- অনিদ্রা: লবঙ্গের অ্যান্টিসাইকোটিক বৈশিষ্ট্য অনিদ্রা হতে পারে।
- ত্বকের সমস্যা: লবঙ্গের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ত্বকের সমস্যা, যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি এবং লালভাব হতে পারে।