কাঠ বাদাম
কাঠ বাদাম একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার। কাঠ বাদামের ইংরেজি নাম Almond। এটি একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বীজ। বীজের নাম অনুযায়ী এই গাছকে কাঠ বাদাম গাছ ডাকা হয়। এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো লেডউড জাতীয় Combretaceae পরিবারের একটি বৃক্ষ। এ গাছের রসালো ফলের অভ্যন্তরে ৩-৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বীজ থাকে যা পরিপক্ব ফল থেকে বের করে নিয়ে সরাসরি বা ভেজে খাওয়া হয়।
কাঠ বাদাম একটি উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। কাঠ বাদাম খেলে শরীরের বিভিন্ন উপকার হয়।
কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) |
ক্যালরি | ৬৬০ |
প্রোটিন | ২৫.৬ গ্রাম |
চর্বি | ৫৩.৬ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ১৮.৮ গ্রাম |
আঁশ | ১৬.৬ গ্রাম |
ভিটামিন ই | ২৬.৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি২ | ০.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৩ | ৪.৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.৬ মিলিগ্রাম |
ফলিক অ্যাসিড | ৩৯ মাইক্রোগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪০০ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৭০০ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৪০ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ৪ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ৪ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ৭৭ মাইক্রোগ্রাম |
কপার | ০.৭ মিলিগ্রাম |
কাঠ বাদামের উপকারিতা:

১) হৃদস্বাস্থ্য:
কাঠ বাদাম রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কাঠ বাদামে থাকা মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তনালীগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
২) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য:
আরোও পড়ুন
চিনাবাদাম কি? চিনাবাদামের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।
কাঠ বাদাম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কাঠ বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।
৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা:
কাঠ বাদাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কাঠ বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৪) ত্বকের স্বাস্থ্য:
কাঠ বাদাম ত্বকের কোষের পুনর্জন্ম ঘটায় এবং ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ করে তোলে। কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, কাঠ বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৫) অন্যান্য উপকারিতা:
কাঠ বাদাম অন্যান্য উপকারিতাও প্রদান করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে, রক্তচাপ কমাতে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কাঠ বাদামের অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

- ওজন বৃদ্ধি: কাঠ বাদামতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং চর্বি রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠ বাদাম খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
- অ্যালার্জি: কাঠ বাদামতে উপস্থিত কিছু উপাদান অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাই কাঠ বাদাম খেয়ে যদি কারো অ্যালার্জি হয়, তাহলে তাকে আর কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত নয়।
- খাদ্য বিষক্রিয়া: কাঠ বাদামতে কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক থাকতে পারে। তাই কাঠ বাদাম খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
- গ্যাস এবং পেট ফাঁপা: কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠ বাদাম খেলে গ্যাস এবং পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে।
কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম:
কাঠ বাদাম একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। প্রতিদিন ৩-৪ টি কাঠ বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কাঠ বাদাম ভেজে বা শুকনো খাওয়া যায়। কাঠ বাদাম ভেজে খাওয়ার সময় অল্প লবণ এবং মরিচ দিয়ে ভেজে নিতে পারেন।