Skip to content
Home » MT Articles » টক পালং শাক: জেনেনিন টক পালং শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও রেসিপি।

টক পালং শাক: জেনেনিন টক পালং শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও রেসিপি।

টক পালং শাক

টক পালং শাক

টক পালং শাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Rumex acetosa) এক প্রকার শাক। এটি Polygonaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। টক পালং শাক বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা প্রায় সারা বিশ্বেই পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ।

বৈশিষ্ট্য:

  • পাতা: টক পালং শাকের পাতা অনেকটা ডিম্বাকৃতির বা বল্লম আকৃতির হয়। এর পাতা পুরু এবং রসালো হয়। এর স্বাদ টক হয়।
  • ফুল: এর ফুল ছোট এবং সবুজ বা লালচে রঙের হয়।
  • ফল: এর ফল ছোট এবং বাদামী রঙের হয়।

টক পালং শাকের পুষ্টিগুণ:

প্রতি ১০০ গ্রাম টক পালং শাকে প্রায়:

  • ক্যালোরি: ২৩ কিলোক্যালরি
  • জলীয় অংশ: ৯১.৪ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ৩.৬ গ্রাম
  • প্রোটিন: ২.২ গ্রাম
  • ফ্যাট: ০.৪ গ্রাম
  • ফাইবার: ২.২ গ্রাম
  • ভিটামিন এ: ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ৫৯%)
  • ভিটামিন সি: ২৮ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ৩৪%)
  • ভিটামিন কে: ৪৮৩ মাইক্রোগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ৪৬০%)
  • ফোলেট (বি৯): ১৯৪ মাইক্রোগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ৪৯%)
  • ক্যালসিয়াম: ৯৯ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ১০%)
  • আয়রন: ২.৭ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ২১%)
  • পটাশিয়াম: ৫৫৮ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ১২%)
  • ম্যাগনেসিয়াম: ৫৭ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ১৪%)

এছাড়াও, টক পালং শাকে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ই, বি১, বি২, বি৩ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানও রয়েছে।

টক পালং শাকের উপকারিতা:

টক পালং শাকের উপকারিতা

১. ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ: টক পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৯ (ফোলেট), আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম থাকে। এই উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা যেমন রোগ প্রতিরোধ, হাড়ের স্বাস্থ্য, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হজমক্ষমতাকে সঠিক রাখতে সহায়ক।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: টক পালং শাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের ফ্রি র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আরোও পড়ুন

লেটুস পাতা: পুষ্টির ভান্ডার।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

৪. হাড়ের স্বাস্থ্য: ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।

৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৬. হজমক্ষমতা বৃদ্ধি: ফাইবার হজমক্ষমতাকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

৭. ত্বকের জন্য ভালো: ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

৮. চোখের স্বাস্থ্য: ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে টক পালং শাকে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

টক পালং শাকের রেসিপি:

টক পালং শাক একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু শাক। এটি বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। নিচে এর কয়েকটি রেসিপি দেওয়া হলো:

১. টক পালং শাকের ভাজি:

উপকরণ:

  • টক পালং শাক – ২৫০ গ্রাম
  • পেঁয়াজ কুচি – ১টি (বড়)
  • রসুন কুচি – ২ কোয়া
  • সরিষার তেল – ২ টেবিল চামচ
  • শুকনো লঙ্কা – ২-৩টি
  • সর্ষে – ১ চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদমতো

প্রণালী:

১. প্রথমে টক পালং শাক ভালো করে ধুয়ে নিন এবং ছোট ছোট করে কেটে নিন। ২. একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করুন। তেল গরম হলে শুকনো লঙ্কা ও সর্ষে দিয়ে দিন। ৩. সর্ষে ফুটে উঠলে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে হালকা ভাজুন। ৪. পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ ভাজুন। ৫. এরপর কেটে রাখা টক পালং শাক দিয়ে দিন এবং লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ৬. শাক নরম হয়ে এলে আঁচ কমিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ ঢেকে রান্না করুন। ৭. শাক সেদ্ধ হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে দিন এবং জল শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ভাজুন। ৮. জল শুকিয়ে গেলে নামিয়ে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

টক পালং শাকের অপকারিতা
টক পালং শাক

২. টক পালং শাকের ঝোল:

উপকরণ:

  • টক পালং শাক – ২৫০ গ্রাম
  • আলু – ২টি (মাঝারি)
  • পেঁয়াজ কুচি – ১টি (বড়)
  • রসুন বাটা – ১ চা চামচ
  • আদা বাটা – ১/২ চা চামচ
  • সরিষার তেল – ২ টেবিল চামচ
  • পাঁচ ফোড়ন – ১/২ চা চামচ
  • শুকনো লঙ্কা – ২-৩টি
  • হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদমতো
  • জল – পরিমাণ মতো

প্রণালী:

১. প্রথমে টক পালং শাক ভালো করে ধুয়ে নিন এবং ছোট ছোট করে কেটে নিন। ২. আলু কেটে নিন। ৩. একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করুন। তেল গরম হলে পাঁচ ফোড়ন ও শুকনো লঙ্কা দিয়ে দিন। ৪. পাঁচ ফোড়ন ফুটে উঠলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা ভাজুন। ৫. পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে রসুন বাটা ও আদা বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। ৬. এরপর আলু দিয়ে দিন এবং হালকা ভাজুন। ৭. হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ ভাজুন। ৮. কেটে রাখা টক পালং শাক দিয়ে দিন এবং লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ৯. জল দিয়ে ঢেকে দিন এবং আলু ও শাক সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। ১০. সেদ্ধ হয়ে গেলে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

৩. টক পালং শাকের ভর্তা:

উপকরণ:

  • টক পালং শাক – ২৫০ গ্রাম
  • পেঁয়াজ কুচি – ১টি (বড়)
  • রসুন কুচি – ২ কোয়া
  • সরিষার তেল – ২ টেবিল চামচ
  • শুকনো লঙ্কা – ২-৩টি
  • লবণ – স্বাদমতো

প্রণালী:

১. প্রথমে টক পালং শাক ভালো করে ধুয়ে নিন এবং ছোট ছোট করে কেটে নিন। ২. একটি পাত্রে জল গরম করুন এবং শাক সেদ্ধ করে নিন। ৩. শাক সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে নিন। ৪. কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করুন। তেল গরম হলে শুকনো লঙ্কা ভেজে তুলে নিন। ৫. ওই তেলে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে হালকা ভাজুন। ৬. সেদ্ধ করা শাক, ভাজা পেঁয়াজ, রসুন এবং লবণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন। ৭. শুকনো লঙ্কা ভেঙে ভর্তার সাথে মিশিয়ে নিন। ৮. গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

error: Content is protected !!