শাপলা পাতা মাছ
শাপলা মাছ বা ইংরেজিতে স্টিংরে, সমুদ্রের এক অদ্ভুত ও রহস্যময় প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম মাইলিওবাটোয়েডই। শাপলা পাতার মতো চ্যাপ্টা দেহের কারণেই এর নামকরণ করা হয়েছে। এই মাছটি নাতিশীতোষ্ণ সমুদ্রের অগভীর জলে বসবাস করে এবং বেশিরভাগ সময়ই সমুদ্রের বালিতে পুঁতে থাকে।
শাপলা মাছের চেহারা:
শাপলা মাছের দেহ চ্যাপ্টা ও গোলাকার। এর চোখ ও নাকের ছিদ্র মাথার উপরের দিকে অবস্থিত। মুখ এবং ফুলকা পেটের নিচে থাকে। এর লেজটি চাবুকের মতো লম্বা এবং খুবই শক্ত। লেজের ডগায় একটি বিষাক্ত কাঁটা থাকে যা শিকারীদের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করে।
আরোও পড়ুন
পুঁটি মাছ: স্বাদ আর পুষ্টির সমাহার। পুঁটি মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
শাপলা মাছের জীবনযাপন:
শাপলা মাছ মূলত মাংসাশী। এরা ছোট ছোট মাছ, কাঁকড়া, এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী খেয়ে জীবন ধারণ করে। শিকার ধরার সময় এরা নিজের শরীরকে বালির নিচে লুকিয়ে রাখে এবং শিকারের উপর থেকে হঠাৎ করে আক্রমণ করে।
শাপলা মাছ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
- বিষাক্ত লেজ: শাপলা মাছের লেজের কাঁটা খুব বিষাক্ত। যদি কেউ এই কাঁটায় আঘাত পায় তাহলে তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
- লরেঞ্জিনির অ্যাম্পুলা: শাপলা মাছের শরীরের চারপাশে লরেঞ্জিনির অ্যাম্পুলা নামক একটি বিশেষ ধরনের সেন্সর থাকে। এই সেন্সরের সাহায্যে এরা শিকারের অবস্থান এবং তড়িৎ ক্ষেত্র অনুভব করতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট: শাপলা মাছ গিলের সাহায্যে শ্বাস নেয়। তাই এদেরকে পানির উপরে রাখলে শ্বাসকষ্ট হয়ে মারা যেতে পারে।
শাপলা মাছের উপকারিতা:

শাপলা মাছের কোনো খাদ্য উপকারিতা নেই বরং এর বিষাক্ত লেজ মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
কেন এই ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে?
- স্থানীয় বিশ্বাস: কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে যেখানে শাপলা মাছ পাওয়া যায়, সেখানে এটি সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে।
- অতিরঞ্জিত দাবি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মধ্যে শাপলা মাছের অতিরঞ্জিত উপকারিতা সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
- বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাব: শাপলা মাছের খাদ্য উপকারিতা সম্পর্কে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা প্রমাণ নেই।
শাপলা পাতা মাছের অপকারিতা:

শাপলা মাছের ক্ষতিকর দিকগুলি
- বিষাক্ত লেজ: শাপলা মাছের লেজের ডগায় একটি বিষাক্ত কাঁটা থাকে। যদি কেউ এই কাঁটায় আঘাত পায় তাহলে তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, এমনকি অজ্ঞানও হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুও হতে পারে। বিখ্যাত প্রকৃতিবিজ্ঞানী স্টিভ আরউইন এই কাঁটায় আঘাত পেয়েই মারা গিয়েছিলেন।
- স্বাস্থ্য ঝুঁকি: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শাপলা মাছে মার্কারি থাকতে পারে। এই মার্কারি মানবদেহে গিয়ে ক্যানসার, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি, স্মৃতিভ্রম, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- আইনগত জটিলতা: বাংলাদেশে শাপলা মাছ ধরা এবং বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ এই মাছ সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
উপসংহার:
শাপলা মাছকে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর বিষাক্ত লেজ মানুষের জন্য মারাত্মক হতে পারে। আমাদেরকে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করা উচিত এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
This article is written with the help of Geminihttps://gemini.google.com/app