সরিষার তেল:
সরিষার তেল বা সর্ষের তেল সরিষার বীজ নিষ্পেষণ করে প্রস্তুত করা হয়। এই তেল রান্নার জন্য এবং গায়ে মাখা বা মালিশ করার কাজেও ব্যবহার করা হয়। সরিষার তেলের ঝাঁঝের জন্য এই তেলে রান্না করা খাবারের একটি আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট নামক একটি উদ্বায়ী গন্ধকযুক্ত রাসায়নিক যৌগ সরিষার তেলের ঝাঁঝের কারণ।
সরিষার তেল এর পুষ্টিগুণ:
প্রতি ১০০ গ্রাম সরিষার তেলে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদানগুলি থাকে:
- ক্যালোরি: ৮৮৪ কিলোক্যালোরি
- মোট ফ্যাট: ১০০ গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: প্রায় ১২ গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট: প্রায় ৫৯ গ্রাম
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: প্রায় ২১ গ্রাম
- ভিটামিন ই
- ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড
- বিটা ক্যারোটিন
- মিনারেলস (যেমন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম)
সরিষার তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা:

১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
- সরিষার তেলে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
- এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
২. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:
- সরিষার তেলে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- এটি ধমনীতে প্লাক জমা প্রতিরোধ করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরোও পড়ুন
নারিকেল: নারিকেলের তেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য সত্যিই কি উপকারী?
৩. চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:
- এই তেল চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া কমায়।
- এটি চুলের অকালপক্বতা রোধ করে এবং চুলকে ঘন ও উজ্জ্বল করে।
- সরিষার তেল মাথার ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং খুশকি দূর করে।
৪. ত্বকের যত্নে উপকারী:
- সরিষার তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
- এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্কতা দূর করে।
- এই তেল ত্বকের দাগ কমাতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে:
- সরিষার তেলে গ্লুকোসিনোলেট নামক একটি উপাদান থাকে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- এটি কোলন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৬. হজমক্রিয়া উন্নত করে:
- এই তেল হজমক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- এটি পেটের গ্যাস এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।
৭. ব্যথা কমাতে সাহায্য করে:
- সরিষার তেল ম্যাসাজ করলে মাংসপেশীর ব্যথা এবং জয়েন্টের ব্যথা কমে।
- এটি আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
- সরিষার তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- এটি শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
৯. শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা কমায়:
- সরিষার তেল শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, যেমন- কাশি এবং সর্দি কমাতে সাহায্য করে।
- এটি বুকে জমে থাকা কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
১০. দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:
- সরিষার তেল দাঁতের ব্যথা এবং মাড়ির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং দাঁতকে সাদা রাখতে সাহায্য করে।
সরিষার তেলের অপকারিতা:

সরিষার তেলের যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনই কিছু অপকারিতাও রয়েছে। নিচে সরিষার তেলের কিছু অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
১. ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি:
- সরিষার তেলে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায়, অতিরিক্ত পরিমাণে এটি গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য গেঁটে বাত বা গাউটের মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
২. অ্যালার্জির ঝুঁকি:
- কিছু মানুষের সরিষার তেলে অ্যালার্জি থাকতে পারে।
- অ্যালার্জির কারণে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট এবং বমি হতে পারে।
৩. এরিউসিক অ্যাসিডের উপস্থিতি:
- সরিষার তেলে এরিউসিক অ্যাসিড নামক একটি উপাদান থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- এরিউসিক অ্যাসিড ফুসফুসের ক্যান্সার ও অ্যানিমিয়ার জন্যও দায়ী হতে পারে।
- দীর্ঘকাল ধরে এরিউসিক অ্যাসিড গ্রহণ করলে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে এক ধরনের রোগের সৃষ্টি করে, যার নাম মায়োকার্ডিয়াল লিপিডোসিস।
৪. ভেজালের ঝুঁকি:
- বাজারে ভেজাল সরিষার তেল পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
- ভেজাল তেল ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রোগ হতে পারে, যেমন- পেট খারাপ, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
৫. ত্বকের সংবেদনশীলতা:
- কিছু মানুষের ত্বক সরিষার তেলের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে।
- ত্বকে সরিষার তেল লাগালে জ্বালাপোড়া, লাল হয়ে যাওয়া এবং ফুসকুড়ি হতে পারে।