Skip to content
Home » MT Articles » কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি ? প্রতিদিন কলা কেন খাবেন ?

কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি ? প্রতিদিন কলা কেন খাবেন ?

কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা এমনই একটি খাবার যা দামে কম কিন্তু মানে সেরা এবং খেতেও সুস্বাদু। কলা অনেকেরই প্রিয় ফল।এই ফলটি আঁশ ও ভিটামিনে ভরপুর।কলা খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন বিবেচনায় একে একটি সুপারফুড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি যথা মিনারেল, ফাইবার ইত্যাদি রয়েছে। এসব উপাদান দেহের সুস্থতার জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা ও পাকা দুই রকমের কলাতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। কলা দিয়ে বানানো যায় ঝাল ও মিষ্টিজাতীয় খাবার। কাঁচকলা দিয়ে চিপসও তৈরি করা যায়, যা আলুর চিপসের চেয়েও বেশি স্বাস্থ্যকর।

কলাকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল বলা হয়। একটি জরিপে দেখা গেছে, সকালের নাশতায় সবচেয়ে বেশি খাওয়া খাবারের মধ্যে ডিমের পরই কলার অবস্থান।  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় এই ফল এখন বিশ্বের সব উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে চাষ করা হয়। কলা হজমশক্তি বৃদ্ধি, হৃদস্বাস্থ্যের সুস্থতায় ও ওজন কমাতে অনেক সহায়ক।

কলার গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান:

কলা একটি পুষ্টিকর ফল যা ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি একটি ভাল কার্বোহাইড্রেটের উৎস যা শক্তির জন্য প্রয়োজনীয়। কলাতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ভিটামিন বি৬
  • পটাসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ফাইবার

কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি?

জেনে নিন কলার খাওয়ার উপকারিতা কি কি ও প্রতিদিন অন্তত একটি কলা কেন খাবেন!

কলা খাওয়ার উপকারিতা

 কিডনি ভাল রাখতে কলা:

কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কিডনির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে। মার্কিন গবেষকদের করা ১৩ বছরের একটি দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীরা সপ্তাহে ২-৩টি কলা খেয়েছে, তাদের কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে ৩৩ শতাংশ। অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, যারা সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন কলা খায়, তাদের কিডনির অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা, যারা করা না থায় তাদের থেকে ৫০ শতাংশ কম। একটি মাঝারি আকারের কলাতে রয়েছে তিন গ্রাম ফাইবার। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। কলায় দুই রকমের ফাইবার পাওয়া যায়। পেকটিন ও রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ। রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ হজম হয় না। এটি বৃহদন্ত্রে গিয়ে পেটের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাদ্যে পরিণত হয়। অন্যদিকে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পেকটিন কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। নিয়মিত কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পাকস্থলীর আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া যায় ।

কলা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর:

ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। কলাও এর ব্যতিক্রম নয়। এতে ক্যাটিচিন ও ডোপামিনের (এর সঙ্গে মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোনের কোনো সম্পর্ক নেই) মতো আরও অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ, এটি হৃদরোগ, ক্যানসারের মতো ঘাতক ব্যাধি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কলা খাওয়ার উপকারিতা:

কলা নিয়মিত খাওয়ার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই উপকারী ফলটি হাইপারটেনশন রোগও নিয়ন্ত্রন করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং কিডনির কাজকর্ম ভালো রাখার জন্য পটাশিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নিয়মিত কলা খেলে আমদের কিডনির কার্যক্রম ভালো রাখা সম্ভব। এক গবেষণায় লক্ষ্য করা হয়েছে যে সপ্তাহে ৪-৬ টি কলা খাওয়ার ফলে কিডনি রোগের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

হার্ট সুস্থ রাখার জন্য জরুরী কলা: 

কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা আমাদের হার্ট সুস্থ রাখার জন্য জরুরী। নিয়মিত একটি কলা খাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। তাই নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা কম হয়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত কলা খান তাদের হার্টের সমস্যা অন্যদের থেকে কম হয় এবং হজম ক্ষমতা বেশি।

কাঁচকলা ইনসুলিন সেনসিটিভ:

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স টাইপ টু ডায়বেটিসসহ বিশ্বের মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে থাকে। কলার রেজিস্ট্যান্স ফাইবার ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়। কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫-৩০ গ্রাম রেজিস্ট্যান্স ফাইবার প্রতিদিন গ্রহণ করলে মাত্র ৪ সপ্তাহের মধ্যে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ। আর কাঁচকলা রেজিস্ট্যান্স ফাইবারের সবচেয়ে ভালো উৎস।

ত্বকের সুস্থতায় কলা খাওয়ার উপকারিতা:

একটি মাঝারি আকারের কলায় যে পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ আছে, তা আমাদের দৈনিক ম্যাঙ্গানিজের চাহিদার ১৩ শতাংশ পূরণ করে থাকে। এটি ত্বকের কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে এবং ত্বক ও অন্যান্য কোষকে ফ্রি র‍্যাডিকেলজনিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

কলা চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে:

কলাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাছাড়াও কলায় থাকা ভিটামিন বি-6 এবং ভিটামিন সি চুলের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে এবং চুলকে মজবুত করে তোলে।

শরীর থেকে ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে কলা :

কলায় কোলিনসহ সকল ধরনের ভিটামিন B রয়েছে যা শরীরে চর্বি জমতে দেয় না। তাছাড়া কলায় সহজে হজমযোগ্য শর্করা থাকে এবং এই শর্করা পরিপাকতন্ত্রতে খাদ্য সহজে হজম করতে সাহায্য করে।

আরোও পড়ুন

আনারসের পুষ্টিগুন। আনারস (Pineapple) কেন খাবেন ?

ওজন হ্রাসে কলা খাওয়ার উপকারিতা:

কলা ওজন কমাতে সহায়তা করে । একটি বড় আকারের কলায় মাত্র ১২০ ক্যালরি এনার্জি খাকে। কলার রেজিস্ট্যান্স ও পেকটিন ফাইবার হজম হতে দেরি হয় বলে কলা খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। এ জন্য যারা ওজন কমাতে চায়, তাদের সারা দিনে অন্তত একটি কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদেরা।

খেলোয়াড়দের জন্য কলা খাওয়ার উপকারিতা:

কলা খেলোয়াড়দের জন্য একটি আদর্শ খাবার। খেলাধুলা বা শরীরচর্চার ফলে সৃষ্ট মাসল ক্র্যাম্প, পেশিতে টান ধরা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরচর্চার পর কলা খেলে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকে।

হাড়কে শক্ত করতে কার্যকরী কলা: 

কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। আমাদের দেহে পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে হলে প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া উচিত। দেহে দুর্বলতা দেখা দিলে এই ফল খেলে শরীরে শক্তি পাওয়া যাবে। কলায় পটাশিয়ামের পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। উক্ত দুই উপাদানই আমাদের দেহের হাড়কে শক্ত করতে কার্যকরী।

কলা খাওয়ার ক্ষতিকর কিছু দিক:

কলা খাওয়ার উপকারিতা যেমন অনেক বেশি তেমনি কলা খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।

=> কলায় অনেক বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে। তাই অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং আমাদের পরিমান মতোই কলা খাওয়া উচিৎ। এক দিনে ২ টি কলা খাওয়া যথেষ্ট, এর বেশি না খাওয়াই ভালো।

=> কলা একটি নরম এবং কিছুটা আঠালো ধরনের খাবার। ভাই কলা খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করে নেওয়া উচিত, তা না হলে দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যেতে পারে।

কলা সংরক্ষণ পদ্ধতি:

কলা সংরক্ষণ করতে গিয়ে অনেকে বেশ ঝামেলায় পড়েন। এটি সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি অনেকেরই  অজানা। কলা সাধারণত ঠান্ডা-শুকনা জায়গায় রাখতে হয়। ফ্রিজের ভেতর রাখলে কলা পাকবে না। কলা কখনোই আপেলের মতো অন্যান্য ফলের সঙ্গে রাখা যাবে না। তাহলে দ্রুত পেকে যাবে।পাকা কলা ঝুলিয়ে রাখুন, এতে কলা দীর্ঘ সময় ভাল থাকবে। প্লাস্টিক ব্যাগে রাখা যাবে না। রাখলে এটি নষ্ট হয়ে যাবে আর তখন ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

দেহের শক্তি যোগাতে ও সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। অত্যন্ত সহজলভ্য ও সস্তা এই ফল আপনার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর সাথে সাথে ক্ষুধা মেটাতেও সহায়তা করে। পাশাপাশি কাঁচা কলাও এক সহজলভ্য সবজি যা খাবার তালিকায় রাখলে সহজেই আপনার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। নিয়মিত কলা খান ও সুস্থ থাকুন।

সম্পর্কিত:

আমড়া খাওয়ার ৯ টি উপকারিতা।আমড়ার পুষ্টিগুণ।

August 16, 2023

চিনা বাদামের পুষ্টিগুণ। ভিটামিন ই এর অসাধারণ উৎস চিনা বাদাম।

November 5, 2024

মৃগেল মাছের সুস্বাদু যত সব রেসিপি।

January 25, 2024

কচুর লতির পুষ্টিউপাদান, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

June 6, 2024

লাউয়ের যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। লাউ কেন খাবেন?

September 2, 2023

সজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। সজনে পাতা গুড়া তৈরি ও খাওয়ার নিয়ম।

April 18, 2024

টাকি মাছ: টাকি মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

November 16, 2024

রসুনের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। রসুন কেন খাবেন?

August 30, 2023

করলা কি? করলার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 9, 2023

মাল্টার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। মাল্টা কেন খাবেন?

September 23, 2023
error: Content is protected !!