Skip to content
Home » MT Articles » কালিবাউশ: জেনেনিন কালিবাউশ মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

কালিবাউশ: জেনেনিন কালিবাউশ মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

কালিবাউশ

কালিবাউশ:

কালিবাউশ (Labeo calbasu), যা কালবোস নামেও পরিচিত, কার্প পরিবারের (Cyprinidae) একটি গুরুত্বপূর্ণ মাছ। এটি দেখতে অনেকটা রুই মাছের মতো। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপাল, দক্ষিণ চীন এবং মায়ানমারে এই মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এটি বাউস, কালাবাউস, বাউগনি, কালবাসু এবং কলিয়া ইত্যাদি স্থানীয় নামে পরিচিত।

এই মাছের বৈশিষ্ট্য:

  • শারীরিক আকার ও গঠন:
    • কালিবাউশ মাছের দেহ লম্বাটে এবং অনেকটা রুই মাছের মতো দেখতে।
    • পৃষ্ঠদেশ (পিঠ) তুলনামূলকভাবে বেশি উত্তল বা বাঁকা হয়।
    • প্রাপ্তবয়স্ক মাছ প্রায় ৭১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং ৫.৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতে দেখা যায়।
  • রঙ:
    • সাধারণত দেহের উপরিভাগ বা পিঠের দিক গাঢ় কালো বা ধূসর রঙের হয়।
    • দেহের নিচের অংশ বা পেট হালকা বর্ণের হয়।
    • কিছু মাছের দেহের পাশের মাঝের আঁশগুলোতে উজ্জ্বল লাল বা কালো দাগ দেখা যায়।
    • মাথার নিচের দিকটা হলুদাভ হতে পারে, বিশেষ করে অল্প বয়স্ক মাছে।
  • মুখ ও ঠোঁট:
    • মুখ তুলনামূলকভাবে ছোট এবং নিচের দিকে নামানো।
    • ঠোঁট পুরু এবং এদের কিনারা খাজকাটা বা ঝালরযুক্ত হয়।
    • মুখের পাশে দুই জোড়া গোঁফ থাকে।
  • আঁশ:
    • কালিবাউশ মাছের সারা দেহ আঁশ দিয়ে ঢাকা থাকে। আঁশগুলো সাধারণত ঘন কালো বা ধূসর বর্ণের হয়।
  • আবাসস্থল ও অভ্যাস:
    • এরা মূলত স্বাদু পানির মাছ এবং নদী, খাল, বিল, হাওর ও প্লাবনভূমিতে বাস করে।
    • সাধারণত পানির নিচের স্তরে থাকতে পছন্দ করে।
    • অল্প স্রোতযুক্ত বা স্থির পানিতে এদের বেশি পাওয়া যায়।
    • এরা omnivorous, অর্থাৎ জলজ উদ্ভিদ, শ্যাওলা, ডায়াটম, শামুক, ঝিনুক এবং তলদেশের জৈব পদার্থ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
  • প্রজনন:
    • সাধারণত বর্ষাকালে প্লাবিত অগভীর পানিতে প্রজনন করে।
    • অনুকূল পরিবেশে ৩-৪ বছরেই প্রজননের উপযোগী হয়।

আরোও পড়ুন

চুইঝাল: খুলনার বিখ্যাত মুখরোচক মসলা।স্বাদে ও গুণে অতুলনীয়।

কালিবাউশ মাছের পুষ্টিগুণ:

কালিবাউশ মাছের পুষ্টিগুণ
কালিবাউশ মাছ

কালিবাউশ মাছের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রাম ভোজ্য অংশে আনুমানিক)

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ (আনুমানিক)একক
জলীয় অংশ৭৩-৭৭গ্রাম
প্রোটিন১৫-১৮গ্রাম
ফ্যাট০.৫-৩.৫গ্রাম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড০.১-০.৪গ্রাম
ক্যালসিয়াম৫৬-৩৯৪মিলিগ্রাম
লোহা (আয়রন)০.৫-১.৫মিলিগ্রাম
ফসফরাস৩৯৫মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ৪.৫-১৩মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন বি১২উল্লেখযোগ্য পরিমাণমাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন ডিউল্লেখযোগ্য পরিমাণমাইক্রোগ্রাম
সেলেনিয়াম৬৫-৫৮৬মাইক্রোগ্রাম
জিঙ্ক০.৬-২.০মিলিগ্রাম

কালিবাউশ মাছের উপকারিতা:

কালিবাউশ মাছের  উপকারিতা
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কালিবাউশ মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তনালীতে ব্লক তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা হ্রাস পায়।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। এটি মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য।
  • শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠনে সহায়ক: কালিবাউশ মাছ উচ্চ মানের প্রোটিনের একটি excelente উৎস। প্রোটিন শরীরের কোষ, পেশী, টিস্যু এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনে ও মেরামতে অপরিহার্য। এটি শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।
  • হাড় ও দাঁত মজবুত করে: এই মাছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান থাকে যা হাড় ও দাঁতের গঠন এবং মজবুত রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: কালিবাউশে ভিটামিন এ থাকে যা দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখতে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এতে থাকা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, ফলে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ: কালিবাউশ মাছে থাকা সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে কোষকে সুরক্ষা প্রদান করে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
  • রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক: কালিবাউশে লোহা (আয়রন) থাকে যা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে essential এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • সহজে হজম হয়: অন্যান্য মাংসের তুলনায় মাছ সহজে হজম হয়, তাই এটি পরিপাকতন্ত্রের উপর বেশি চাপ ফেলে না।
  • কম ক্যালোরিযুক্ত: যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য কালিবাউশ মাছ একটি ভালো বিকল্প কারণ এতে ক্যালোরি তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

error: Content is protected !!