Skip to content
Home » MT Articles » বাসক পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

বাসক পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

বাসক পাতা

বাসক পাতা (basuku) হচ্ছে একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা বাংলাদেশ সহ ভারত উপমহাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।বাসক পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Justicia adhatoda।বাসক পাতা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাতায় থাকা ভাস্কিন নামক উপাদান কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট
সহ শ্বাসনালীর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়াও, বাসকের পাতার নির্যাস জীবাণু নাশক হিসেবে কাজ করে এবং
চর্ম রোগ নিরাময়েও উপকারী।

বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য:

উদ্ভিদ শাস্ত্রের নাম: Justicia adhatoda

পরিবার: Acanthaceae

উৎপত্তি: ভারত উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

বৈশিষ্ট্য:

  • আকার: বাসক গাছ একটি ছোট ঝোঁপ, যা সাধারণত ১-২ মিটার উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়।
  • কাণ্ড: কাণ্ডটি সোজা, বাদামী রঙের এবং শাখা-প্রশাখাযুক্ত।
  • পাতা: পাতাগুলি লম্বাটে-বর্শাকার, সরল, সুক্ষ্মভাবে দাঁতযুক্ত এবং চকচকে সবুজ রঙের।
  • ফুল: ফুলগুলি ছোট, সাদা বা হালকা বেগুনি রঙের এবং শীর্ষস্থ স্পাইকগুলিতে থোকায় থোকায় থাকে।
  • ফল: ফলগুলি ছোট, গোলাকার এবং কালচে বাদামী রঙের।
বাসক পাতার পুষ্টিগুণ

বাসক পাতার পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ (প্রতি 100 গ্রাম)
ক্যালোরি52
জল71.3 গ্রাম
প্রোটিন3.2 গ্রাম
চর্বি1.1 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট23.4 গ্রাম
আঁশ5.9 গ্রাম
চিনি4.1 গ্রাম
ভিটামিন এ102 আন্তর্জাতিক ইউনিট
ভিটামিন সি27 মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম175 মিলিগ্রাম
আয়রন2.4 মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম27 মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম448 মিলিগ্রাম
জিঙ্ক1.2 মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ0.2 মিলিগ্রাম
থায়ামিন (B1)0.07 মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাবিন (B2)0.12 মিলিগ্রাম
নায়াসিন (B3)1.7 মিলিগ্রাম
প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (B5)0.15 মিলিগ্রাম
ভিটামিন B60.12 মিলিগ্রাম
ফোলেট (B9)13 মাইক্রোগ্রাম

উল্লেখ্য:

  • এই তালিকাটি কেবলমাত্র একটি অনুমান। পুষ্টি উপাদানগুলির পরিমাণ জাত, জমি, চাষের পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

বাসক পাতার উপকারিতা/ঔষধি গুণাগুন:

শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা:

  • কাশি, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট: বাসক পাতার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল গুণাবলী শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • শ্বাসনালীর প্রদাহ: বাসক পাতার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলী শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো অবস্থার জন্য উপকারী।
  • অ্যালার্জি: বাসক পাতা হিস্টামাইন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে, যা অ্যালার্জির লক্ষণগুলি উপশম করতে পারে।

আরোও পড়ুন

শতমূলী গাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, বৈশিষ্ট্য ও খাওয়ার নিয়ম।

অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা:

  • জ্বর: বাসক পাতার অ্যান্টিপাইরেটিক গুণাবলী জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
  • হজমশক্তি: বাসক পাতা হজমশক্তি উন্নত করতে এবং অজীর্ণ, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফোলাভাবের মতো সমস্যাগুলি উপশম করতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: বাসক পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • চামড়ার রোগ: বাসক পাতার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী চামড়ার সংক্রমণ, যেমন একজিমা ও সোরিয়াসিসের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
  • মুখের স্বাস্থ্য: বাসক পাতা দাঁতের ব্যথা, মাড়ির রক্তপাত ও মুখের ঘা সারাতে সাহায্য করতে পারে।
বাসক পাতার উপকারিতা

বাসক পাতার অপকারিতা:

যদিও বাসক পাতার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, কিছু সম্ভাব্য অপকারিতাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:

অতিরিক্ত মাত্রা:

  • অতিরিক্ত পরিমাণে বাসক পাতা গ্রহণ বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা এবং মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
  • এটি রক্তচাপ কমাতে পারে এবং রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের বাসক পাতা এড়ানো উচিত কারণ এর নিরাপত্তা সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।

অ্যালার্জি:

  • কিছু লোকের বাসক পাতার প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যার ফলে ফুসকুড়ি, চুলকানি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • আপনি যদি অ্যালার্জির প্রতি সংবেদনশীল হন তবে বাসক পাতা ব্যবহার করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
বাসক পাতার অপকারিতা

ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া:

  • বাসক পাতা কিছু ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে রক্ত ​​পাতলাকারক, ডায়াবেটিসের ঔষধ এবং রক্তচাপের ঔষধ।
  • আপনি যদি কোনও ঔষধ সেবন করেন তবে বাসক পাতা ব্যবহার করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

সাধারণভাবে, বাসক পাতা নিরাপদ বলে বিবেচিত হয় যখন পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। তবে, উপরে তালিকাভুক্ত সম্ভাব্য অপকারিতাগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী হন, অ্যালার্জি থাকে বা ঔষধ সেবন করেন তবে বাসক পাতা ব্যবহার করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম:

বাসক পাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়।

চা:

  • 0সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল বাসক পাতার চা তৈরি করা।
  • 1-2 টি বাসক পাতা 1 কাপ গরম জলে 5-10 মিনিট ফুটিয়ে নিন।
  • ছেঁকে মধু বা লেবুর রস দিয়ে গরম গরম পান করুন।
  • দিনে 2-3 বার পান করা যেতে পারে।

ক্যাপসুল:

  • বাসক পাতার গুঁড়ো ক্যাপসুল আকারেও পাওয়া যায়।
  • নির্দেশাবলী অনুসারে সেবন করুন।

সিরাপ:

  • বাসক পাতা নির্যাস দিয়ে তৈরি বাসক সিরাপ পাওয়া যায়।
  • 1 চা চামচ সিরাপ 1 কাপ জলে মিশিয়ে দিনে 2-3 বার পান করুন।

মলম:

  • ত্বকের সংক্রমণের জন্য বাসক পাতার মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • প্রভাবিত এলাকায় দিনে 2-3 বার প্রয়োগ করুন।

পাউডার:

  • বাসক পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে তালাশ তৈরি করা যেতে পারে।
  • জল বা দুধের সাথে মিশিয়ে পান করুন।

খাবারে মিশিয়ে:

  • বাসক পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে স্যুপ, তরকারি, ডাল বা অন্যান্য খাবারে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
ফুল

কিছু টিপস:

  • তাজা বাসক পাতা ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো, তবে শুকনো পাতাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • বাসক পাতা কেনার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি ভালো মানের এবং ধুলোমুক্ত।
  • দীর্ঘ সময় ধরে বাসক পাতা সংরক্ষণ করা এড়িয়ে চলুন।
  • আপনি যদি গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী হন, অ্যালার্জি থাকে বা ঔষধ সেবন করেন তবে বাসক পাতা ব্যবহার করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

মনে রাখবেন, বাসক পাতা ঐতিহ্যবাহী ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

This article is written with the help of Gemini

error: Content is protected !!