Skip to content
Home » MT Articles » তরমুজের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। তরমুজ কেন খাবেন?

তরমুজের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। তরমুজ কেন খাবেন?

তরমুজের

তরমুজ

গরমে লাল টকটকে এক ফালি তরমুজ দেবে শীতল অনুভূতি। তাই তো সতেজ থাকতে গরমে তরমুজের এই ফলের চাহিদা সব থেকে বেশি। কেবল প্রশান্তি পেতেই নয়, স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায়ও তরমুজ এগিয়ে। তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পানি। রূপচর্চায় ব্যবহার বা খাওয়া—দুভাবেই তরমুজের উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।তরমুজের ইংরেজি নাম Watermelon.

তরমুজের পুষ্টিগুন

তরমুজের পুষ্টিগুণ:

তরমুজ একটি পুষ্টিকর ফল যা প্রচুর পরিমাণে জল, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এটি একটি নিম্ন ক্যালোরিযুক্ত খাবার যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
তরমুজের পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রামে নিম্নরূপ:

  • জল: ৯২.১ গ্রাম
  • ক্যালোরি: ৪৬ কিলোক্যালরি
  • প্রোটিন: ০.৯ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ১১ গ্রাম
  • চিনি: ৯.৪ গ্রাম
  • আঁশ: ০.৬ গ্রাম
  • ভিটামিন সি: ১২.১ মিলিগ্রাম (১৫% দৈনিক মূল্য)
  • ভিটামিন এ: ২১৬ মাইক্রোগ্রাম (২৮% দৈনিক মূল্য)
  • পটাশিয়াম: ৪৬২ মিলিগ্রাম (১০% দৈনিক মূল্য)
  • ম্যাগনেসিয়াম: ১৪ মিলিগ্রাম (৪% দৈনিক মূল্য)
  • ফাইবার: ০.৬ গ্রাম (২% দৈনিক মূল্য)

তরমুজে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ম্যাগনেসিয়াম পেশী এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
তরমুজ একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর ফল যা গ্রীষ্মের জন্য একটি দুর্দান্ত বিকল্প। এটি একটি নিম্ন ক্যালোরিযুক্ত খাবার যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। তরমুজকে সতেজভাবে খাওয়া যায় বা জুস, সালাদ বা অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

তরমুজের উপকারিতা:

তরমুজের উপকারিতা

১.উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে তরমুজ:

তরমুজের বীজ ম্যাগনেসিয়ামের খুব ভালো উৎস। এটা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদ স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও হৃদগতির ছন্দ ধরে রাখতে এটা বেশ উপকারী।

২.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তরমুজ:

জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তরমুজের বীজে রয়েছে এ উপাদান। এটা সংক্রমণসহ অন্যান্য অসামঞ্জস্যতার বিরুদ্ধে কাজ করতে সহায়তা করে।

৩.ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখায় সহায়ক হতে পারে তরমুজ:

তরমুজে থাকা ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘সি’ ত্বক সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভিটামিন ‘সি’ ত্বককে কোমল ও চুল শক্ত রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে ভিটামিন ‘এ’ ত্বকে নতুন কোষ গজানোর পাশাপাশি কোষের ক্ষতিপূরণে সহায়তা করে।

৪.হজমে সাহায্য করে তরমুজ:

তরমুজের বীজে রয়েছে আঁশ এবং অপরিশোধিত চর্বি; যা হজমে সহায়তা করে। ফলে পেট পরিষ্কার থাকে।

৫.ত্বক ও চুল ভালো রাখে তরমুজ:

তরমুজের মাস্ক যেমন ত্বক সতেজ রাখে; একইভাবে এর বীজ ত্বক ও চুলের উপকার করে। তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এটা প্রদাহ ও ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।

৬.ক্যালসিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস:

তরমুজের বীজে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় সুস্থ ও সবল রাখতে সহায়তা করে। হাড় ছাড়াও পেশির কার্যকারিতা বাড়াতে ও স্নায়ু সচল রাখতে এটা খুব উপকারী।

৭.পানির চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে তরমুজ:

অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ঠিকমতো কাজ করতে দরকার শরীরে পর্যাপ্ত পানির জোগান বা শরীরকে সিক্ত রাখা। শরীরের তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম, কোষে পুষ্টি প্রবেশের মতো বিষয়গুলো নির্ভর করে পর্যাপ্ত পানি বা তরল গ্রহণের ওপর।এই তরলযুক্ত ফল থেকে আসতে পারে পর্যাপ্ত পানির জোগান, যা শরীরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করতে পারে।তরমুজে ৯২ শতাংশ পানি রয়েছে, যা দেহের দৈনিক তরলের চাহিদা পূরণে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

৮.ক্যান্সারবিরোধী ভূমিকা রাখতে পারে তরমুজ:

আরোও পড়ুন

আপেলের উপকারিতা ও অপকারিতা :

তরমুজে লাইকোপেন ও কিউকারবিটাসিন ই নামের উপাদান আছে, যেগুলোর ক্যান্সারবিরোধী ভূমিকা হয়তো থাকতে পারে। গবেষণায় মিশ্র ফল পাওয়া গেলেও লাইকোপেন প্রোস্টেট বা মলদ্বারের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।তরমুজে থাকা কিউকারবিটাসিন ই ক্যানসারযুক্ত কোষগুলোকে অপসারণ করে টিউমারের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। যদিও এ বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার।

৯.হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে তরমুজ:

তরমুজে থাকা বেশ কিছু উপাদান হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়ক হতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, তরমুজে থাকা লাইকোপেন কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে বেশ সহায়তা করতে পারে।

১০.প্রদাহ কমাতে পারে তরমুজ:

শরীরে দীর্ঘমেয়াদি অনেক রোগের কারণ প্রদাহ। তরমুজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপেন ও ভিটামিন ‘সি’ প্রদাহ কমাতে সহায়তা করতে পারে।

১১.দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে তরমুজ:

তরমুজে থাকা উপাদান লাইকোপেন চোখের উপকারে আসতে পারে। বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি লোপ একটি সাধারণ সমস্যা যা থেকে বয়স্করা অন্ধত্বের শিকার হতে পারেন।লাইকোপেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী হিসেবে ভূমিকা রাখায় এটি বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি লোপ হওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

১২.পেশির ব্যথা উপশমে তরমুজ:

তরমুজে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড সিট্রুলিন ব্যায়ামের পারফরম্যান্সের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে। এটি একই সঙ্গে পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

তরমুজের অপকারিতা:

তরমুজের অপকারিতা

তরমুজ একটি পুষ্টিকর ফল যা সাধারণত নিরাপদভাবে খাওয়া যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
তরমুজের অপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে:

হজমের সমস্যা:

তরমুজে প্রচুর পরিমাণে জল এবং ফাইবার রয়েছে, যা কিছু লোকের ক্ষেত্রে হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যাগুলির মধ্যে ডায়রিয়া, গ্যাস এবং পেট ফাঁপা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

পানি বিষাক্ততা:

অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে পানি বিষাক্ততা হতে পারে। পানি বিষাক্ততা হল যখন রক্ত ​​প্লাজমায় পটাসিয়ামের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয়ে যায়। এটি পেশী দুর্বলতা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে।

চোখের সমস্যা:

তরমুজের বীজে সেরিন নামক একটি রাসায়নিক থাকে যা কিছু লোকের ক্ষেত্রে চোখের জ্বালা এবং চোখের জল বৃদ্ধি করতে পারে।

অ্যালার্জি:

তরমুজ একটি অ্যালার্জেন হতে পারে। তরমুজ খেয়ে যদি আপনার শ্বাস কষ্ট, ত্বকের ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্ট হয় তবে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলির জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নিন।

তরমুজ খাওয়ার সময় এই বিষয়গুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:

অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খাবেন না। একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য, প্রতিদিন ৪-৫ কাপ তরমুজ খাওয়া নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়।
তরমুজ খাওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। এটি পানি বিষাক্ততা প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
যদি আপনার তরমুজ খেয়ে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হয় তবে তরমুজ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
সাধারণভাবে, তরমুজ একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর ফল যা বেশিরভাগ লোকের জন্য উপভোগ করা যেতে পারে

সম্পর্কিত:

চালতার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। চালতার আচারের রেসিপি।

September 20, 2023

ধনেপাতার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

September 3, 2023

বিউলির ডাল এর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

May 6, 2024

আইড় মাছ: অনন্য সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি মিঠা পানির মাছ।

December 8, 2024

তেলাপিয়া মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

January 29, 2024

শাপলা: বাংলাদেশের জাতীয় ফুল।

April 26, 2025

করলা কি? করলার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 9, 2023

সাগুদানা কি? সাগুদানার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

December 9, 2023

মটর ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

September 19, 2023

পাবদা মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

May 12, 2024
error: Content is protected !!