খেসারি ডাল
খেসারি ডাল হল এক ধরনের হলুদ বর্ণ উদ্ভিজ্জ বীজ বা কালাই যা ডাল হিসাবে চিহ্নিত। খেসারি ডালের ইংরেজি নাম Grass pea।খেসারি কালাই একটি শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম Lathyrus sativus। খেসারির ডাল বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে প্রধান খাদ্যের অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ বিভিন্ন রীতিতে খেসারির ডাল খেয়ে থাকে। পশু খাদ্য হিসেবেও এর ব্যবহার ব্যাপক।
বৈজ্ঞানিক বর্ণনা:
খেসারি কালাই একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা গড়ে ৪০-৬০ সেমি উঁচু হয়। এর পাতা ত্রিপত্রক, প্রতিটি পাতায় ৩টি পাতা থাকে। ফুলগুলি বেগুনি বা সাদা রঙের হয় এবং ছোট ছোট গুচ্ছ আকারে থাকে। ফলগুলি শুঁটি জাতীয় হয়, যার মধ্যে ৬-১০টি বীজ থাকে। বীজগুলি হলুদ বা সাদা রঙের হয়।
খেসারি ডাল রান্নার উপায়:
খেসারি ডাল একটি জনপ্রিয় ডাল যা বিভিন্নভাবে রান্না করা যেতে পারে। এখানে একটি সহজ উপায় রয়েছে খেসারি ডাল রান্নার:
উপকরণ:
- ১ কাপ খেসারি ডাল
- ৪ কাপ পানি
- ১ টেবিল চামচ তেল
- ১/২ চা চামচ জিরা
- ১/২ চা চামচ আদা বাটা
- ১/২ চা চামচ রসুন বাটা
- ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
- ১/২ চা চামচ মরিচ গুঁড়া
- ১/২ চা চামচ ধনে গুঁড়া
- ১/২ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়া
- স্বাদমতো লবণ
রান্না প্রণালী:
১. খেসারি ডাল ভালো করে ধুয়ে ৪-৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।

২. একটি কড়াইতে তেল গরম করে জিরা ফোড়ন দিন।
৩. জিরা ফোটার পর আদা বাটা এবং রসুন বাটা দিয়ে হালকা করে ভাজুন।
৪. এবার হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, এবং গরম মশলা গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।
৫. কষানো মশলার মধ্যে ভিজিয়ে রাখা খেসারি ডাল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
৬. এবার পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
৭. ডাল সিদ্ধ হয়ে এলে স্বাদমতো লবণ দিয়ে নামিয়ে নিন।
টিপস:
- খেসারি ডাল রান্না করার সময় বেশি পানি দেওয়া উচিত নয়। কারণ ডাল ফুলে গেলে পানি কমে যাবে।
- ডাল সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। তাহলে ডাল আরও সুস্বাদু হবে।
- আপনার পছন্দমতো অন্যান্য মশলাও যোগ করতে পারেন। যেমন, পেঁয়াজ কুচি, টমেটো কুচি, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি।
খেসারি ডালের অন্যান্য রান্নার উপায়:
- খেসারি ডাল দিয়ে ডাল ভুনা
- খেসারি ডাল দিয়ে তরকারি
- খেসারি ডাল দিয়ে পোলাও
- খেসারি ডাল দিয়ে সুজির হালুয়া
- খেসারি ডাল দিয়ে মুড়ি
আপনার পছন্দমতো উপায়ে খেসারি ডাল রান্না করে উপভোগ করুন।
খেসারি ডালের পুষ্টিগুণ:
খেসারি ডাল একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম খেসারি ডালে রয়েছে:
- ক্যালোরি: ৩৪৫
- প্রোটিন: ২৮ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৫৬ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৩ গ্রাম
- ভিটামিন সি: ১০ মিলিগ্রাম
- আয়রন: ৯ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ৯০ মিলিগ্রাম
এছাড়াও, খেসারি ডালে রয়েছে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, ফলিক অ্যাসিড, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ।
খেসারি ডালের উপকারিতা:
আরোও পড়ুন
মুগ ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।
রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে:
প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে,খেসারি ডালে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে:
খেসারি ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে:
খেসারি ডাল রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে:
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে খেসারি ডালে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে:
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে খেসারি ডালে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে:
এই ডালে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
অরুচি দূর করতে সাহায্য করে:
খেসারি ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ক্যালোরি রয়েছে, যা অরুচি দূর করতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে:
খেসারি ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে:
খেসারি ডাল একটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার, যা শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:
খেসারি ডালে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ত্বকের জন্য উপকারী:
খেসারি ডালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা ত্বকের জন্য উপকারী।
খেসারি ডালের অপকারিতা:

খেসারি ডাল একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে কিছু অপকারিতা হতে পারে। খেসারি ডালের অপকারিতাগুলি হল:
- বিষক্রিয়া: এতে উচ্চ মাত্রায় গ্লাইকোপ্রোটিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা খেসারি ডালের বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। এই বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলি হল:
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- পেট ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- বমি
- ডায়রিয়া
- ত্বকে ফুসকুড়ি
এই ডালের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচার জন্য খেসারি ডাল রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। ডাল রান্না করার সময় বেশি পরিমাণে পানি ব্যবহার করতে হবে। ডাল করে সিদ্ধ করার পর পানিটুকু ঝরিয়ে ফেলে আবার কিছুক্ষণ পর রান্না করতে হবে।
- গ্যাস এবং পেট ফাঁপা: এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা গ্যাস এবং পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: ইহা একটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
- অ্যালার্জি: কিছু লোকের খেসারি ডালের প্রতি অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলি হল:
- চোখ, নাক, মুখ এবং গলায় চুলকানি
- শ্বাসকষ্ট
- ত্বকে ফুসকুড়ি
- বমি বমি ভাব
- বমি
এই অপকারিতাগুলো এড়াতে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।