Skip to content
Home » MT Articles » হরিতকির উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

হরিতকির উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

হরিতকি

হরিতকি

হরিতকি, যা কালো হরিতকি বা চেবুলিক মাইরোবালান নামেও পরিচিত, এটি একটি ভেষজ উদ্ভিদ। হরিতকির ইংরেজি নাম black- or chebulic myrobalan। এটি ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও এটি বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং টাঙ্গাইল অঞ্চলে। হরিতকি গাছের ফল, বীজ এবং পাতা সবই ঔষধি গুণাবলি সমৃদ্ধ।হরিতকির ফল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এবং রন্ধনশিল্পে বহুল ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক ঔষধে হরিতকি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রচলিত আছে যে, প্রতি সকালে এক কাপ হরিতকি ভেজানো পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। হরিতকি, আমলকি এবং বহেরা এই তিনটি ফলের মিশ্রণকে ত্রিফলা বলা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য বহু উপকারী বলে বিবেচিত হয়।

হরিতকির উপকারিতা

হরিতকির উপকারিতা/ভেষজ গুণ:

১. হজমশক্তি বৃদ্ধি:

হরিতকি আমাদের হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি খাদ্য দ্রুত পাচন করতে এবং অম্বল, বদহজম এবং গ্যাসের মতো হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।

২. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:

হরিতকি একটি প্রাকৃতিক রেচক, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রের পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মল ত্যাগ প্রক্রিয়া কে সহজ করে।

আরোও পড়ুন

থানকুনি পাতার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

হরিতকি ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কার্যকর।

৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে:

হরিতকি চর্বি জ্বালাতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি আপনার পরিপাক তন্ত্র কে উন্নত করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৫. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী:

হরিতকি ত্বক এবং চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের ব্রণ, দাগ এবং চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি চুল পড়া রোধ করে এবং চুল কে ঘন এবং সুন্দর করে তোলে।

৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:

হরিতকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তনালী কে প্রসারিত করে এবং রক্ত প্রবাহ কে উন্নত করে।

৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে:

হরিতকি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিসের জটিলতা প্রতিরোধ করতে কার্যকর।

৮. মুখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:

হরিতকি মুখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করে।

হরিতকির অপকারিতা:

হরিতকির অপকারিতা

অতিরিক্ত ব্যবহারে পেট খারাপ: হরিতকি তেতো এবং রেচক গুণসম্পন্ন। অতিরিক্ত ব্যবহারে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।

ডিহাইড্রেশন: হরিতকি রেচক হিসেবে কাজ করে, যা শরীর থেকে পানিশূন্যতা ঘটাতে পারে। হরিতকি ব্যবহারের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ।

রক্তচাপ কমাতে পারে: হরিতকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যাদের রক্তচাপ কম, তাদের হরিতকি ব্যবহারের পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

অ্যালার্জির ঝুঁকি: কিছু লোকের হরিতকিতে অ্যালার্জি হতে পারে। হরিতকি ব্যবহারের পরে যদি কোন অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে ব্যবহার বন্ধ করুন এবং ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

হরিতকির ব্যবহার ও খাওয়ার নিয়ম:

হরিতকি ব্যবহার ও খাওয়ার নিয়ম

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে:

  • গুঁড়ো: এক চা চামচ হরিতকি গুঁড়ো এক গ্লাস গরম জলের সাথে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খান।
  • চূর্ণ: এক চা চামচ হরিতকি চূর্ণ এক গ্লাস দুধের সাথে সকালে খালি পেটে খান।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে:

  • কাশায়: এক চা চামচ হরিতকি কাশায় এক গ্লাস জলের সাথে খাবারের পরে খান।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে:

  • আরিষ্ট: এক চা চামচ হরিতকি আরিষ্ট এক গ্লাস জলের সাথে দিনে দুবার খান।

ত্বক ও চুলের জন্য:

  • মুখ প্যাক: হরিতকি গুঁড়ো পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
  • চুলের প্যাক: হরিতকি গুঁড়ো দই বা ডিমের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগান এবং ৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।

হরিতকি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়:

সরাসরি খাওয়া:

  • শুকনো হরিতকি:
    • 2-3 টি শুকনো হরিতকি ভালো করে ধুয়ে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
    • সকালে খালি পেটে ভেজা হরিতকি ও পানি খেয়ে ফেলুন।
  • তাজা হরিতকি:
    • তাজা হরিতকির বীজ বাদ দিয়ে খোসা ভালো করে ধুয়ে পাতলা করে কেটে নিন।
    • মধু অথবা গুড়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

চূর্ণ হিসেবে:

  • শুকনো হরিতকি ভালো করে গুঁড়ো করে নিন।
  • 1/2 চা চামচ চূর্ণ 1 গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • মধু অথবা গুড়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।

ক্বাথ হিসেবে:

  • 4-5 টি শুকনো হরিতকি ভালো করে ধুয়ে 1 গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিন।
  • পানি অর্ধেক হয়ে গেলে নামিয়ে ছেঁকে খেতে পারেন।
  • মধু অথবা গুড়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।

কাশির জন্য:

  • 2 টি শুকনো হরিতকি, 2 টি এলাচ, 1/2 চা চামচ মৌরি, 1/2 চা চামচ জাফরান ভালো করে গুঁড়ো করে নিন।
  • 1/2 চা চামচ চূর্ণ 1 গ্লাস গরম দুধে মিশিয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেতে পারেন।

সম্পর্কিত:

শাপলা মাছ কি খাওয়ার উপযুক্ত? এর কি কোন স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে?

November 20, 2024

সজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। সজনে পাতা গুড়া তৈরি ও খাওয়ার নিয়ম।

April 18, 2024

ওটস কি? ওটসের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

October 1, 2024

তরমুজের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। তরমুজ কেন খাবেন?

August 26, 2023

তেলাপিয়া মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

January 29, 2024

পটলের কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে? পটল খেলে কি কি উপকার ও অপকার হতে পারে?

September 2, 2023

পেস্তা বাদাম কি? পেস্তা বাদামের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 14, 2023

বোয়াল মাছ "শরীরের জন্য পুষ্টির ভান্ডার"

November 20, 2024

বাঙ্গি ফল: বাঙ্গি ফলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

March 22, 2025

তালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। তাল ফল কেন খাবেন?

August 28, 2023
error: Content is protected !!