Skip to content
Home » MT Articles » তেঁতুলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।তেঁতুল কেন খাবেন?

তেঁতুলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।তেঁতুল কেন খাবেন?

তেঁতুলের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা

তেঁতুল

তেঁতুল একপ্রকার টক ফল বিশেষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tamarindus indica। এটি Fabaceae পরিবারের Tamarindus গণের অন্তর্ভুক্ত। তেঁতুল গাছ দীর্ঘজীবী এবং বৃহৎ আকারের হয়। গাছের উচ্চতা সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ ফুট হয়ে থাকে। তেঁতুলের আদি নিবাস আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল। তবে সুদান থেকে বীজের মাধ্যমে তেঁতুল বাংলাদেশে বংশবিস্তার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ দেশের সব জেলাতে তেঁতুল গাছ থাকলেও রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও পঞ্চগড় জেলায় বেশি দেখা যায়।

এই ফলটি সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পাকে। এর ফল গোলাকার বা ডিম্বাকার, লম্বায় প্রায় ৫-৬ সেমি এবং চওড়ায় প্রায় ৩-৪ সেমি। কাঁচা তেঁতুল খেতে টক, পাকা তেঁতুল টক-মিষ্টি। তেঁতুলের বীজ বাদামী রঙের, গোলাকার বা ডিম্বাকার, লম্বায় প্রায় ২-৩ সেমি। তেঁতুলের পাতা লম্বা ও সরু, লম্বায় প্রায় ১০-১২ সেমি এবং চওড়ায় প্রায় ৫-৬ সেমি। তেঁতুলের ফুল ছোট, সাদা বা গোলাপি রঙের।

খাবারের স্বাদ বাড়াতে তেঁতুল ব্যবহৃত হয়। এটি মাংসের রোস্ট, পোলাও, খিচুড়িতে ব্যবহার হয়। তেঁতুলের টক, ভর্তা, ডাল অনেকের প্রিয়। এছাড়া তৈরি করা যায় আচার, সস, জ্যাম, চাটনিসহ আরো খাবার। তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তেঁতুল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্ত পরিষ্কার করে, ত্বক ভালো রাখে, চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ইহা একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর ফল। এটি বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা হয় এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

তেঁতুলে কোন অ্যাসিড থাকে?

এতে টারটারিক অ্যাসিড থাকে। টারটারিক অ্যাসিড একটি জৈব অ্যাসিড যা সাদা এবং স্ফটিকাকার হয়। এটি আঙ্গুর, কলা, তেঁতুল ইত্যাদি অনেক ফলের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। এই অ্যাসিডটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে খাদ্যে থাকে এবং এটি বিশেষ কষা বা টক স্বাদযুক্ত হয়। টারটারিক অ্যাসিড একটি উত্তম অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং বৃক্কের জন্যও উপকারী। এটি শরীরে খনিজ শোষণে সহায়তা করে। এটি শরীরে গ্যাস সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।

ইহাতে টারটারিক অ্যাসিডের পরিমাণ প্রায় 10%। এই অ্যাসিডই তেঁতুলকে তার টক স্বাদ দেয়। তেঁতুলকে গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে তেঁতুলের রস তৈরি করা হয়। এই রসে টারটারিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। তেঁতুলের রস বিভিন্ন খাবার রান্না এবং মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

তেঁতুলের পুষ্টিগুণ:

এটি একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
খাদ্যশক্তি২৮৩ কিলোক্যালরি
আমিষ৩.১ গ্রাম
চর্বি০.১ গ্রাম
শর্করা৬৬.৪ গ্রাম
আঁশ৬.৪ গ্রাম
ক্যালসিয়াম১৭০ মিলিগ্রাম
আয়রন১০.৯ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম৬৬০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম৬০ মিলিগ্রাম
ফসফরাস১৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১০.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২০.০৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৩১.৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৫০.২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬০.২ মিলিগ্রাম
ফোলেট১৪ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন এ৩০ আইইউ
লুটেইন-জিক্সানথিন৬০ মাইক্রোগ্রাম

ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তেঁতুলে। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম পেশী এবং স্নায়ুর স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফসফরাস হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তেঁতুলের উপকারিতা:

তেঁতুলের  উপকারিতা

হজমশক্তি বাড়ায়: 

প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে তেঁতুলে যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তেঁতুলের টক স্বাদ পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়ায়, যা হজমক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এছাড়াও, তেঁতুলের ট্যানিন এবং অ্যাসিড মলকে শক্ত করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: 

তেঁতুলের ট্যানিন এবং অ্যাসিড ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া হলে তেঁতুলের টক শরবত পান করলে পেট শান্ত হয় এবং ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তেঁতুলের পাকা টুকরো চিবিয়ে খেলে মল নরম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

রক্ত পরিষ্কার করে তেঁতুল:

এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং রক্তের প্রবাহকে উন্নত করে।

ত্বক ভালো রাখে তেঁতুল: 

এ ফলে ভিটামিন সি রয়েছে যা ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ত্বককে সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে।

চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে:

এর ভিটামিন সি এবং আয়রন চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে। আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে, যা চুল পড়ার অন্যতম কারণ।

আরোও পড়ুন

বরই বা কুল কেন খাবেন। এতে কি কি পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়ছে?

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: 

তেঁতুলে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তনালীকে শিথিল করে এবং রক্তচাপ কমায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে:

তেঁতুলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে: 

তেঁতুলে পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রের কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

তেঁতুলের অপকারিতা:

তেঁতুলের  অপকারিতা

তেঁতুল একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর ফল হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এর কিছু অপকারিতাও হতে পারে। তেঁতুলের অপকারিতা নিম্নরূপ:

  • অ্যাসিডিটি বাড়ায়: তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে, যা অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারে। অ্যাসিডিটি হলে বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
  • গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে: তেঁতুলে থাকা অ্যাসিড ওষুধের কার্যকারিতা কমাতে পারে। তাই গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের তেঁতুল খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে: তেঁতুলে থাকা পটাশিয়াম কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কিডনি রোগীদের তেঁতুল খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

তেঁতুল একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল হলেও, এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। প্রতিদিন ২ থেকে ৩টি তেঁতুল খাওয়াই যথেষ্ট।

error: Content is protected !!