ঘেট কচু বা ঘেটকোল
ঘেট কচু (Typhonium trilobatum) Araceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। ঘেট কচুর পাতাগুলি বড়, ত্রিপত্রী, ডিম্বাকৃতি বা হৃদয়াকার এবং ৩০-৬০ সেমি লম্বা এবং ২০-৪০ সেমি প্রশস্ত হতে পারে। এটি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ওশেনিয়ার স্থানীয়।ঘেট কচু একটি বহুবর্ষী উদ্ভিদ।
ঘেট কচুর পুষ্টিউপাদান:
পুষ্টিউপাদান | পরিমাণ (প্রতি 100 গ্রাম) |
---|---|
ক্যালোরি | 54 |
চর্বি | 0.1 গ্রাম |
প্রোটিন | 1.1 গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | 12.9 গ্রাম |
খনিজ পদার্থ | 0.9 গ্রাম |
ফাইবার | 2.1 গ্রাম |
ভিটামিন এ | 120 মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি | 20 মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | 30 মিলিগ্রাম |
আয়রন | 1.2 মিলিগ্রাম |

দ্রষ্টব্য:
- এই টেবিলটি কাঁচা ঘেট কচুর পুষ্টিউপাদানের তথ্য প্রদান করে। রান্নার পর কিছু পুষ্টিউপাদানের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
- ঘেট কচুর পুষ্টিউপাদানের পরিমাণ বিভিন্ন জাতের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
ঘেট কচুর উপকারিতা:
খাদ্য হিসেবে:
- পুষ্টি: ঘেট কচু ভিটামিন এ, সি, কে, এবং খনিজ পদার্থ যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফসফরাসের ভালো উৎস। এতে ক্যালোরি ও চর্বি কম থাকে।
- হজম: ঘেট কচুর খনিজ পদার্থ ও ফাইবার হজম প্রক্রিয়া সুগম করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভিটামিন এ ও সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- চোখের স্বাস্থ্য: ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো: পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ: ঘেট কচুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- মধুমেহ নিয়ন্ত্রণ: ঘেট কচু রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- ওজন কমানো: ক্যালোরি ও চর্বি কম থাকায় ঘেট কচু ওজন কমানোর জন্য উপকারী।
আরোও পড়ুন
হেলেঞ্চা শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।
ওষুধি ব্যবহার:
- কাশি ও সর্দি: এই কচুর রস কাশি ও সর্দি উপশমে সাহায্য করে।
- জ্বর: ঘেট কচুর রস জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
- পেটের সমস্যা: এই কচুর রস অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা, এবং ডায়রিয়ার মতো পেটের সমস্যা উপশমে সাহায্য করে।
- ব্যথা ও প্রদাহ: এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- চামড়ার সমস্যা: এই কচুর রস ত্বকের সংক্রমণ ও জ্বালাপোড়া উপশমে সাহায্য করে।

ঘেট কচুর অপকারিতা:
সাধারণভাবে, ঘেট কচু একটি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এর অপকারিতা খুবই কম। তবে, কিছু বিরল পরিস্থিতিতে, এটি কিছু অপকারিতা সৃষ্টি করতে পারে:
অতিরিক্ত খাওয়া:
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য অতিরিক্ত ঘেট কচু খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। এতে থাকা অ্যালকালয়েডগুলি গর্ভপাত বা জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- কিডনি বা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত ঘেট কচু খাওয়া তাদের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে।
অ্যালার্জি:

- কিছু লোকের ঘেট কচুতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুলকানি, ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট এবং বমি বমি ভাব।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
- কিছু লোকেদের ঘেট কচু খাওয়ার পর পেট খারাপ, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, এবং মাথাব্যথার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া:
- কিছু ওষুধের সাথে ঘেট কচুর মিথস্ক্রিয়া হতে পারে। যদি আপনি কোনও ওষুধ খাচ্ছেন, তাহলে ঘেট কচু খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
সতর্কতা:
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী হলে ঘেট কচু খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে ঘেট কচু খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- আপনার যদি অ্যালার্জি থাকে বলে মনে হয় তাহলে ঘেট কচু খাওয়া বন্ধ করে দিন এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ঘেট কচু খাওয়া বন্ধ করে দিন এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
উল্লেখ্য: ঘেট কচুর অপকারিতা সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন।