আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি
আয়রন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ পদার্থ। এটি রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করে, শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে, শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সকলের নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ। আয়রনের অভাব হলে আমাদের শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আয়রনের অভাব হলে কি হয়?
লৌহ বা আয়রন আমাদের শরীরের অন্যতম অতি প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান।এটি রক্তের লোহিত কণিকা তৈরির কাঁচামাল। আয়রন এর অভাবে লোহিত কণিকা তৈরি হতে পারে না। রক্তশূন্যতার অন্যতম প্রধান কারণ আয়রনের ঘাটতি। আয়রন শুধু রক্তকণিকা তৈরি করে না, দেহের শক্তি উৎপাদন থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের স্নায়ুপ্রবাহও নির্ভর করে পর্যাপ্ত আয়রনের উপস্থিতির ওপর। তাই দেহে আয়রনের ঘাটতি হলে দেখা দিতে পারে নানারকম সমস্যা।
- রক্তশূণ্যতা: আয়রনের অভাবের সবচেয়ে সাধারণ একটি রোগ।
- শারীরিক দুর্বলতা।
- মাথাব্যথা/মাথা ঘোরানো।
- মনোযোগ কমে যাওয়া।
- স্মরণশক্তির ঘাটতি।
- মাংসপেশিতে ব্যথা।
- অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
- চুল পড়ে যাওয়া।
- বুক ধড়ফড় করা বা বুক ভার হয়ে থাকা।
- শ্বাসকষ্ট।
- স্থূলতা।
- চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার এর তালিকা:
আপনার রোজকার খাবারে নিম্নলিখিত খাবারগুলো যোগ করে আপনি সহজেই শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করতে পারেন:

মাংসজাত পণ্য:
- গরুর মাংস: গরুর মাংসের লাল মাংসে আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
- খাসির মাংস: খাসির মাংসেও গরুর মাংসের মতো আয়রন পাওয়া যায়।
- মুরগির মাংস: মুরগির মাংস, বিশেষ করে ডার্ক মিটে আয়রন থাকে।
- মাছ: স্যামন, টুনা, ম্যাকেরেল ইত্যাদি মাছে আয়রন পাওয়া যায়।
ডাল এবং শস্য:
- মসুর ডাল: মসুর ডালে ভেজিটেবল আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
- ছোলা: ছোলায়ও ভেজিটেবল আয়রন পাওয়া যায়।
- মুগ ডাল: মুগ ডালে আয়রনের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও থাকে।
- ওটস: ওটসে আয়রনের পাশাপাশি ফাইবারও থাকে।
সবুজ শাকসবজি:
- পালং শাক: পালং শাক আয়রনের একটি ভাল উৎস।
- বেট: বেটে আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন এও থাকে।
- চুচুন্দর: চুচুন্দরে আয়রনের পাশাপাশি অন্যান্য খনিজ পদার্থও থাকে।
- কলমি শাক: কলমি শাকে আয়রনের পাশাপাশি ফাইবারও থাকে।
শুকনো ফল:
- কিসমিস: কিসমিসে আয়রনের পাশাপাশি পটাশিয়ামও থাকে।
- খেজুর: খেজুরে আয়রনের পাশাপাশি অন্যান্য খনিজ পদার্থও থাকে।
- আখরোট: আখরোটে আয়রনের পাশাপাশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডও থাকে।
বিজ:
- তিল: তিলে আয়রনের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামও থাকে।
- সূর্যমুখীর বিজ: সূর্যমুখীর বিজে আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন ইও থাকে।
- কুমড়ার বিজ: কুমড়ার বিজে আয়রনের পাশাপাশি জিঙ্কও থাকে।
অন্যান্য:
- ডিম: ডিমের হলুদে আয়রন পাওয়া যায়।
- জাম: জামে আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন সিও থাকে।
আয়রন শোষণ বাড়ানোর উপায়:
- ভিটামিন সি: ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে লেবু, কমলালেবু বা অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাওয়া উচিত।
- অক্সালিক এসিড কম খাওয়া: চা, কফি, পালং শাকের মতো কিছু খাবারে অক্সালিক এসিড থাকে যা আয়রন শোষণে বাধা দেয়। তাই এইসব খাবার আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার আগে বা পরে খাওয়া উচিত নয়।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন:
- যদি আপনার শরীরে আয়রনের অভাবের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- ডাক্তার আপনার জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্ট লিখে দিতে পারেন।
মনে রাখবেন:
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে আপনি শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করতে পারবেন।
- কোনো ধরনের খাদ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আশা করি এই তথ্য আপনার জন্য উপকারী হবে।