শিশুর দুধ দাঁতের যত্ন নেওয়া কেন গুরুত্ত্বপূর্ণ:
শিশুর দুধ দাতের স্থায়িত্বকাল অল্প হলেও এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। দুধদাঁতের শিকড়ের নিচে স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়। কাজেই দুধদাঁতের সংক্রমণ স্থায়ী দাঁতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ ছাড়া স্পস্ট উচ্চারণ, চোয়ালের গঠন ও মুখের আকৃতি ঠিক রাখা এবং স্থায়ী দাঁত সঠিক জায়গায় গজানোর বিষয়টিও দুধদাঁতের ওপর নির্ভরশীল। শিশুর স্মৃতিশক্তি, আত্মবিশ্বাস, প্রাণচঞ্চলতা, লেখাপড়ায় মনোনিবেশসহ মানসিক বিকাশেও দুধ-দাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সব সময় শিশুর দাতেঁর যত্নে সচেতন থাকতে হবে ।অনেকে মনে করেন, শিশুর দুধ-দাঁতের স্থায়ীত্বকাল কম বলে যত্নের প্রয়োজন নেই। গবেষণা বলছে, শিশুদের দুধ-দাঁতগুলো পড়ে যাওয়ার পরও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যত্ন নিতে হবে। কারণ-
১. যথাযথ পুষ্টি পেতে সাহায্য করে :
সুস্থ দাঁত খাদ্যকে উপযুক্ত চর্বণের মাধ্যমে হজমোপযোগী করে, খাবারের ইচ্ছা ও রুচিকে স্বাভাবিক রাখে।
২. স্থায়ী দাঁতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব :
দুধদাঁতের শিকড়ের নিচে স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়। দুধদাঁতের সংক্রমণ স্থায়ী দাঁতকে ক্ষতি করতে পারে। আবার স্থায়ী দাঁত এলোমেলো বা উঁচু-নিচু হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ দুধদাঁত আগে বা পরে পড়া।
৩. স্পষ্ট উচ্চারণ ও মুখমণ্ডলের আকৃতি :
স্বাভাবিক কথা বলা, কবিতা আবৃত্তি বা গান গাওয়া, চোয়ালের গঠন ও মুখের আকৃতি ঠিক রাখতে দুধদাঁতের সুস্থতা বেশ জরুরি। স্থায়ী দাঁতকে ঠিক স্থানে আনার দিকনির্দেশনাও দেয় দুধদাঁত।
৪. শিশুর মানসিক বিকাশ :
শিশুর মানসিক বিকাশ, স্মৃতিশক্তি, আত্মবিশ্বাস, প্রাণচঞ্চলতা, লেখাপড়ায় মনোনিবেশসহ মানসিক বিকাশে অস্থায়ী দুধদাঁতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কিভাবে দুধ-দাঁতের যত্ম নিবেন?
শিশুদের দুধদাঁতকে বলে প্রাইমারি টুথ। সাধারণত ছয় বছর বয়সের দিকে এই দুধদাঁত পড়ে যায় এবং এর জায়গায় নতুন স্থায়ী দাঁত ওঠে। মেয়েদের দাঁত সাধারণত ছেলেদের আগেই পড়ে। আর এই দুধদাঁত ক্রমিক হারে পড়ে যে ক্রমে প্রথম উঠেছিল।সচেতনতার অভাবে প্রাথমিক দাঁত বা শিশুর দুধ-দাঁত অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।তাই সঠিক ভাবে দুধ-দাতের যত্ম নেওয়া খুবই জরুরী।
শিশুর দাঁত ওঠার আগের সময় :
সঠিক পরিচর্যার অভাবে ও অপুষ্ট শিশুর জিহ্বা, মাড়ি বা চোয়ালের অংশে প্রায়ই ছত্রাক সংক্রমণ দেখা যায়। এতে শিশুর জিহ্বায় সাদা দইয়ের মতো প্রলেপ পড়ে, শিশু খেতে চায় না, বিরক্ত করে ও কান্না করে। এ সমস্যা থেকে উপশম পেতে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করতে হবে, পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে ও প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
দাঁত ওঠার আগে অনেক বাচ্চা ‘টিথিং’ নামে সাত-আট দিনের একটি জটিলতায় ভোগে। লক্ষণ হিসাবে বিরক্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মাড়ির ফোলাভাব বা প্রদাহ, লালা ঝরানো, ক্ষুধা কমে যাওয়া, মুখের চারপাশে ফুসকুড়ি, হালকা তাপমাত্রা, ডায়রিয়া, কামড় বেড়ে যাওয়া বা মাড়ি ঘষা দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে মাড়ি ম্যাসাজ, সতর্কতার সঙ্গে ঠান্ডা কোনো ফল বা শক্ত খাবার চিবানোর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শিশু যেন অপরিষ্কার কিছু মুখে না দেয় বা কিছু খেয়ে না ফেলে। অতিরিক্ত আঙুল চোষা রোধেও সচেতন থাকতে হবে। সাধারণভাবে ছয় মাসের দিকে, নিচের সামনের দাঁত ওঠা শুরু করলেও ক্ষেত্র বিশেষে বাচ্চা দাঁত নিয়ে জন্মাতে পারে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শে তা ফেলে দিতে হয়।
আরোও পড়ুন
শিশুদের দাঁতব্রাশ কত বছর বয়স থেকে শুরু করা উচিৎ?
শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই, এতে মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় অতিজরুরি উপাদান আছে। যেসব মায়েদের নিরুপায় হয়ে ফিডারে খাওয়াতে হয় তাদের শিশুর মুখের যত্নে অধিক সচেতন হতে হবে। ফিডারে রাতে দুধ খাওয়ানোর সময় দুটি বোতল ব্যবহার করা উচিত। একটিতে দুধ ও অন্যটিতে পানি। কিছুক্ষণ পর পর দুধ ও পানি পরিবর্তন করে খাওয়ালে শিশুদের মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এমনিতেই মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন অণুজীব সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুকূল পরিবেশ পেলে এরা সক্রিয় হয়ে নানা রোগের সৃষ্টি করে। শিশুদের দাঁত ওঠার আগে টুথপেস্টের পরিবর্তে পরিষ্কার সুতি কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে আঙুলে পেঁচিয়ে মাড়ি ও জিহ্বা নিয়মিত সকালে ও রাতে খাবার পর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
শিশুর দাঁত ওঠার পরের সময়:
বাচ্চাদের স্বভাব মিষ্টি খাবারের প্রতি লোভ। এ জাতীয় খাবারে অভ্যস্থ করা, অভিভাবকের অবহেলা যা দুধদাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয় রোগ সৃষ্টি করে। বেবি টুথপেস্টের গুণগত মান নিশ্চিত না হয়ে বা খেয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকলে পেস্ট না দিয়ে নরম বেবি টুথব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে দিতে হবে।
বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়, তাই অভিভাবকরা তাদের সামনেই ব্রাশ করা উচিত। এতে বাচ্চারাও দাঁতের যত্নের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বাইরের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে তাজা ফলমূলের জুস, শাকসবজি, সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ক্ষতিকর ফাস্টফুড, চিপস্, কোমল পানীয়, কৃত্রিম জুস, ক্যান্ডি ইত্যাদি চিনি জাতীয় খাদ্য থেকে যতদুর সম্ভব শিশুদের বিরত রাখতে হবে। যেসব শিশুর দীর্ঘ সময় আঙুল চোষা অভ্যাস আছে, সেটাও বন্ধ করতে হবে।
দুধ-দাঁতের চিকিৎসা:
দুধদাঁত আক্রান্ত হলে এটি পড়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রক্ষা করার সর্বাধুনিক নিরাপদ চিকিৎসা এখন দেশের অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকরা নিয়মিত দিচ্ছেন। তবে রোগের শুরুতে চিকিৎসা নিলে পদ্ধতি হয় সহজ। শিশুরা সহযোগিতা না করলেও আছে নানা কার্যকর চিকিৎসাব্যবস্থা। অযথা ভয়ে রোগকে পুষে রেখে বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ দিয়ে জটিলতা বাড়ানো যাবে না। এক্ষেত্রে বেশকিছু রোগের উপসর্গ মুখ গহ্বরে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন-জন্মগত হৃদরোগ, অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, ডায়াবেটিস টাইপ-১ ও শ্বাসকষ্ট।