হেলেঞ্চা শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

হেলেঞ্চা শাক

হেলেঞ্চা শাক, যা হিঞ্চা শাক নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় শাকসবজি। হেলেঞ্চা শাকের পাতা লম্বাটে, ডিম্বাকৃতির এবং কিনারা খাঁজকাটা। এটি একটি জলজ লতা যা পুকুর, বিল, খাল ও ধানক্ষেতে জন্মে। এর ফুল ছোট ও সাদা রঙের।

হেলেঞ্চা শাকের পুষ্টিগুণ:

প্রতি 100 গ্রাম হেলেঞ্চা শাকে:

পুষ্টিউপাদান	পরিমাণ (গ্রাম)
জল	86.8
প্রোটিন	2.4
চর্বি	0.4
কার্বোহাইড্রেট	2.8
খনিজ পদার্থ	2.6
ফাইবার	3.0
ভিটামিন এ	3120 আইইউ
ভিটামিন সি	40 মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে	100 মাইক্রোগ্রাম
ক্যালসিয়াম	75 মিলিগ্রাম
আয়রন	2.5 মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম	35 মিলিগ্রাম
ফসফরাস	50 মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম	400 মিলিগ্রাম
জিঙ্ক	0.5 মিলিগ্রাম

দ্রষ্টব্য:

• এই টেবিলটি কেবলমাত্র একটি গাইডলাইন। হেলেঞ্চা শাকের পুষ্টিউপাদান বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন জাত, জমি, আবহাওয়া এবং রান্নার পদ্ধতি।

হেলেঞ্চা শাকের উপকারিতা:

১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

• হেলেঞ্চা শাক ভিটামিন এ, সি এবং কে-এর একটি ভাল উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
• এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

আরোও পড়ুন

শিমের বিচির পুষ্টি উপাদান, উপকারিতা ও অপকারিতা।

২) হজম উন্নত করে:

• হেলেঞ্চা শাক ফাইবার সমৃদ্ধ, যা হজম উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
• এটি পেটের প্রদাহ কমাতে এবং পেটের আলসারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

৩) ত্বক ও চুলের জন্য ভালো:

• হেলেঞ্চা শাক ভিটামিন এ এবং সি-এর একটি ভাল উৎস, যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
• এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও সমৃদ্ধ যা ত্বকের বয়সের লক্ষণগুলি দেরি করাতে এবং চুলের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

৪) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:

• হেলেঞ্চা শাক পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
• এটি রক্ত ​​​​নালীর প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

৫) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:

• হেলেঞ্চা শাক ফাইবার সমৃদ্ধ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
• এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে।

৬) ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে:

• হেলেঞ্চা শাক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ফ্রি র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে কোষকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
• এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পড়াও রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

৭) ওজন কমাতে সাহায্য করে:

• হেলেঞ্চা শাক ক্যালোরি কম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা আপনাকে পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করতে পারে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৮) অন্যান্য উপকারিতা:

• হেলেঞ্চা শাক লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, রক্ত ​​​​পরিশোধন করতে সাহায্য করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে পারে।

হেলেঞ্চা শাক এর অপকারিতা:

সম্ভাব্য অপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে:

• গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য ঝুঁকি: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে হেলেঞ্চা শাক গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই সময়ের মধ্যে এটি এড়িয়ে চলা ভালো।
• অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া: কিছু লোকের হেলেঞ্চা শাকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফোলাভাব, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট এবং পেটে ব্যথা। আপনি যদি এই লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা সহায়তা নিন।
• ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: হেলেঞ্চা শাক কিছু ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে। আপনি যদি কোনও ওষুধ খান তবে হেলেঞ্চা শাক খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
• অতিরিক্ত সেবন: যেকোনো খাবারের মতো, অতিরিক্ত হেলেঞ্চা শাক খাওয়া কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

তবে, মনে রাখবেন যে এই অপকারিতাগুলি বিরল এবং বেশিরভাগ লোকের জন্য হেলেঞ্চা শাক নিরাপদে খাওয়া যায়। আপনি যদি হেলেঞ্চা শাক খাওয়ার পরে কোনও অস্বস্তি অনুভব করেন তবে খাওয়া বন্ধ করে দিন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

হেলেঞ্চা শাকের রেসিপি:

এখানে দুটি জনপ্রিয় রেসিপি দেওয়া হল:

১) হেলেঞ্চা শাকের তরকারি:

উপকরণ:

• হেলেঞ্চা শাক – 500 গ্রাম
• পেঁয়াজ কুচি – 1 টি মাঝারি
• রসুন কুচি – 1 টেবিল চামচ
• আদা বাটা – 1 টেবিল চামচ
• হলুদ গুঁড়ো – 1/2 চা চামচ
• মরিচ গুঁড়ো – 1/2 চা চামচ
• জিরা গুঁড়ো – 1/4 চা চামচ
• ধনে গুঁড়ো – 1/4 চা চামচ
• লবণ – স্বাদমতো
• তেল – 2 টেবিল চামচ
• ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য

রান্না প্রণালী:

1. হেলেঞ্চা শাক ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
2. একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
3. রসুন কুচি, আদা বাটা, হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো এবং ধনে গুঁড়ো দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন।
4. হেলেঞ্চা শাক দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ঢেকে দিন।
5. মাঝারি আঁচে 5-7 মিনিট রান্না করুন, মাঝে মাঝে নাড়ুন।
6. লবণ দিয়ে স্বাদমতো মশলা করুন।
7. ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

২) হেলেঞ্চা শাকের ভর্তা:

উপকরণ:

• হেলেঞ্চা শাক – 500 গ্রাম
• পেঁয়াজ কুচি – 1 টি মাঝারি
• রসুন কুচি – 1 টেবিল চামচ
• আদা বাটা – 1 টেবিল চামচ
• হলুদ গুঁড়ো – 1/2 চা চামচ
• মরিচ গুঁড়ো – 1/2 চা চামচ
• লবণ – স্বাদমতো
• তেল – 2 টেবিল চামচ
• ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য

রান্না প্রণালী:

1. হেলেঞ্চা শাক ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
2. একটি পাত্রে হেলেঞ্চা শাক, পানি এবং লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন।
3. পানি ঝরিয়ে হেলেঞ্চা শাক ঠান্ডা করে নিন।
4. একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
5. রসুন কুচি, আদা বাটা, হলুদ গুঁড়ো এবং মরিচ গুঁড়ো দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন।
6. সেদ্ধ হেলেঞ্চা শাক হাত দিয়ে ভালো করে চটকে নিন।
7. কষানো মশলায় চটকে নেওয়া হেলেঞ্চা শাক দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
8. লবণ দিয়ে স্বাদমতো মশলা করুন।
9. ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

This article is written with the help of Gemini