লাউ
লাউয়ের ইংরেজি নাম “gourd”। লাউ একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। বাংলাদেশে জনপ্রিয় সবজির অন্যতম লাউ, যেটি এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই সবজি ঝোল, নিরামিষ, ভাজি, ভর্তা কিংবা সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। এর খোসা, শাঁস, পাতা সবই খাওয়া যায়।
লাউয়ের পুষ্টিগুণ:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ ( প্রতি ১০০ গ্রামে) |
শক্তি | ১৫ কিলোক্যালরি |
কার্বোহাইড্রেট | ২ গ্রাম |
প্রোটিন | ২ গ্রাম |
ভিটামিন
* ভিটামিন সি: ৪৭ মিলিগ্রাম
* ভিটামিন বি১: ০.০৬ মিলিগ্রাম
* ভিটামিন বি২: ০.০৫ মিলিগ্রাম
* ভিটামিন বি৩: ০.৩ মিলিগ্রাম
* ভিটামিন বি৫: ০.১২ মিলিগ্রাম
* ভিটামিন বি৬: ০.১ মিলিগ্রাম
* ভিটামিন বি৯: ৪৩ মাইক্রোগ্রাম |
খনিজ
* পটাসিয়াম: ৪৭৯ মিলিগ্রাম
* ক্যালসিয়াম: ১২ মিলিগ্রাম
* আয়রন: ১ মিলিগ্রাম
* ম্যাগনেসিয়াম: ১৯ মিলিগ্রাম
* ফসফরাস: ৬১ মিলিগ্রাম
* জিঙ্ক: ০.৩ মিলিগ্রাম
লাউের উপকারিতা:

শরীর ঠান্ডা রাখে:
লাউয়ের ৯৬%ই পানি। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই গরমের দিনে লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
লাউয়ের ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। ডায়েটারি ফাইবার খাবার হজম করতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত লাউ খেলে ওজন কমাতে সাহায্য হয়।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:
লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। দ্রবণীয় ডায়েটারি ফাইবার খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। অদ্রবণীয় ডায়েটারি ফাইবার খাবারের সাথে পানি শোষণ করে এবং বর্জ্য পদার্থকে নরম করে। তাই নিয়মিত লাউ খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
রক্তের কোলেস্টেরল কমায়:
লাউয়ে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও ফাইবার। ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার শোষণ করতে বাধা দেয়। তাই নিয়মিত লাউ খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য হয়।
আরোও পড়ুন
গাজরের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহকে ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করে। তাই নিয়মিত লাউ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী:
লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও পটাশিয়াম রয়েছে। ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। ভিটামিন এ ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। পটাশিয়াম ত্বককে ব্রণ ও অন্যান্য সমস্যা থেকে রক্ষা করে। লাউয়ের রস চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত লাউ খেলে ত্বক ও চুলের জন্য উপকার হয়।
জন্ডিস ও কিডনি সমস্যায় উপকারী:
লাউয়ের পানি ও পটাশিয়াম জন্ডিস ও কিডনি সমস্যায় উপকারী। পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে। পটাশিয়াম কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত লাউ খেলে জন্ডিস ও কিডনি সমস্যায় উপকার হয়।
অন্যান্য উপকারিতা:
লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। তাই এটি ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
লাউয়ের অপকারিতা:

লাউয়ের অপকারিতা খুবই কম। তবে, কিছু ক্ষেত্রে লাউ খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন:
- লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। তাই কিডনি রোগীদের লাউ বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে।
- লাউয়ের বীজগুলিতে কিছু ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে। তাই লাউয়ের বীজ ফেলে দিয়ে খেতে হবে।
লাউয়ের অপকারিতা এড়াতে, লাউ বেশি খেতে হবে না। লাউয়ের বীজ ফেলে দিয়ে খেতে হবে।