দই:
দই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর দুগ্ধজাত খাবার। এটি দুধের গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। দইয়ের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে এবং এটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়।
দই এর পুষ্টিগুণ:
প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ের পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি: ৬১ কিলোক্যালরি
- জলীয় অংশ: ৮৮ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৪.৭ গ্রাম
- প্রোটিন: ৩.৫ গ্রাম
- ফ্যাট: ৩.৩ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ১২১ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম: ১৪১ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি১২: ০.৮ মাইক্রোগ্রাম
- রাইবোফ্লাভিন (বি২): ০.১৪ মিলিগ্রাম
দইয়ের অন্যান্য পুষ্টি উপাদান:
- দইতে ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়ামও রয়েছে।
- দই প্রোবায়োটিকের একটি ভালো উৎস।
দই খাওয়ার উপকারিতা:

- হজম সহায়ক:
- দইতে প্রোবায়োটিক থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
- দইতে থাকা প্রোবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- এটি শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
- হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:
- এটি ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।
- অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
- দইতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ:
- এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, যা অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বকের জন্য উপকারী:
- এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
- এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন ব্রণ ও রোদে পোড়াভাব কমাতে সাহায্য করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
- এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ইহা একটি বহুমুখী খাবার, যা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। এটি প্রাতঃরাশ, দুপুরের খাবার বা রাতের খাবারের সাথে খাওয়া যেতে পারে।
আরোও পড়ুন
আম খাওয়ার উপকারিতা ও আমের পুষ্টিগুণ।
দই খাওয়ার অপকারিতা:
ইহা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে এর কিছু অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
- ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা:
- দুধের মতো দইতেও ল্যাকটোজ থাকে।
- যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা আছে, তাদের দই খেলে পেটে গ্যাস, ফোলাভাব, ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে।
- অ্যালার্জি:
- কিছু মানুষের দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি থাকে।
- তাদের দই খেলে ত্বকে র্যাশ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট বা বমি হতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্যালোরি:
- মিষ্টি বা ফ্লেভারড দইতে চিনি এবং চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে এই ধরনের দই খেলে ওজন বাড়তে পারে।
- কিডনির সমস্যা:
- দইতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
- যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ইহা খাওয়া উচিত।
- ঠাণ্ডা লাগা:
- আয়ুর্বেদ অনুসারে, ইহা কফের দোষ বাড়ায়। তাই এটি হাঁপানি, সাইনাস কনজেশন বা সর্দি এবং কাশির মতো স্বাসযন্ত্রের সমস্যাযুক্ত লোকদের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে।
- অ্যাসিডিটি:
- দই রাতে খাওয়া উচিত নয় ৷ কারণ এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং শরীর স্বাভাবিকভাবেই রাতে হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় । তাই রাতে এটি খেলে বদহজম, অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং বুকজ্বালা বাড়তে পারে ।

সতর্কতা:
- যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বা দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি আছে, তাদের দই খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা থাকলে ইহা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- অতিরিক্ত পরিমাণে এটি খাওয়া উচিত নয়।