চিনাবাদাম
চিনাবাদাম (ইংরেজি: Peanut) হল এক ধরনের বাদাম যা লেগাম পরিবারের অন্তর্গত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Arachis hypogaea। চিনাবাদামের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকো। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশ, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মধ্য আফ্রিকা, মাদাগাস্কারসহ আরো অনেক উষ্ণমন্ডলীয় দেশে চীনাবাদামের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে।
চীনাবাদাম গাছ একটি লতানো গুল্ম, যা ৩০ সেমি থেকে ৫০সেমি (১ ফুট থেকে ১.৫ ফুট) দীর্ঘ হয়। এর পাতাগুলি সরল, লম্বাটে এবং পাতার ডগা ক্রমশ সরু হয়ে তীক্ষ্ম হয়। এর ফুলগুলি হলুদ রঙের হয় এবং মাটির উপরে ফোটে। ফুল ফোটার পর ডিম্বাশয়টি মাটির নিচে প্রবেশ করে এবং সেখানেই ফল পরিপক্ক হয়।
চিনাবাদামের পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) |
ক্যালোরি | 567 |
প্রোটিন | 25.8 গ্রাম |
চর্বি | 49 গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | 40.6 গ্রাম |
ফাইবার | 8.5 গ্রাম |
চিনি | 1.9 গ্রাম |
ভিটামিন ই | 37.4 মিলিগ্রাম (৪৪%) |
ম্যাগনেসিয়াম | 288 মিলিগ্রাম (৫১%) |
ফসফরাস | 326 মিলিগ্রাম (৩৮%) |
পটাশিয়াম | 630 মিলিগ্রাম (২৭%) |
আয়রন | 6.7 মিলিগ্রাম (৩২%) |
ক্যালসিয়াম | 90 মিলিগ্রাম (৯%) |
জিঙ্ক | 3.1 মিলিগ্রাম (৩১%) |
চিনাবাদামের উপকারিতা:

১) হৃদরোগ প্রতিরোধ:
চিনাবাদামে থাকা মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এগুলি শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে:
চিনাবাদামে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন রোধ করে। এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৩) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে:
চিনাবাদামে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তনালীকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং সোডিয়াম শোষণ কমায়। এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
আরোও পড়ুন
জাম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ। জাম কেন খাবেন ?
৪) ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে:
চিনাবাদামে থাকা ফাইবার এবং ম্যাগনেসিয়াম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৫) স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে:
চিনাবাদামে থাকা ভিটামিন ই স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৬) ওজন কমাতে সাহায্য করে:
চিনাবাদামে থাকা প্রোটিন ও ফাইবার ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রোটিন ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
চিনাবাদাম এর অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

- অ্যালার্জি: চিনাবাদামে অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুলকানি, ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব এবং বমি।
- ওজন বৃদ্ধি: চিনাবাদামে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি। তাই অতিরিক্ত চিনাবাদাম খাওয়া ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
- পাচক সমস্যা: চিনাবাদামে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। তাই অতিরিক্ত চিনাবাদাম খাওয়া পাচক সমস্যা যেমন গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
- ত্বকের সমস্যা: চিনাবাদামে অ্যালার্জির কারণে ত্বকের সমস্যা যেমন চুলকানি, ফোলাভাব এবং লালভাব দেখা দিতে পারে।