পানি ফল:
পানি ফল (Pani ফল) একটি জলজ উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Trapa natans। এটি Trapaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। বাংলায় এটিকে পানিফল বা শিংড়া নামে ডাকা হয়। এর ফল শিং-এর মতো বাঁকানো হওয়ায় সম্ভবত এমন নাম।
পানি ফল এর পুষ্টিগুণ:
পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা পানিফলে):
- ক্যালোরি: ৯৭
- ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ২৩.৯ গ্রাম
- ফাইবার: ৩ গ্রাম
- প্রোটিন: ২ গ্রাম
- পটাশিয়াম: দৈনিক চাহিদার ১৭%
- ম্যাঙ্গানিজ: দৈনিক চাহিদার ১৭%
- কপার: দৈনিক চাহিদার ১৬%
- ভিটামিন বি৬: দৈনিক চাহিদার ১৬%
- রাইবোফ্লাভিন: দৈনিক চাহিদার ১২%
পানি ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা:

স্বাস্থ্য উপকারিতা:
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। এটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সহায়ক।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: পানিফলে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে।
- হজমক্ষমতা বাড়ায়: উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ায় এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: এতে ফেরুলিক অ্যাসিড, গ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট, এপিক্যাটেচিন গ্যালেট এবং ক্যাটেচিন গ্যালেটের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে পানিফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরের শক্তি বাড়ায়: এতে থাকা ভিটামিন বি৬ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরকে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
আরোও পড়ুন
ব্রিকেট মাছ: মিঠা পানির সুস্বাদু একটি মাছ।
পানি ফলের অপকারিতা:

পানি ফল সাধারণত একটি নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর কিছু অপকারিতা বা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
১. হজমের সমস্যা:
- কাঁচা বা অতিরিক্ত পরিমাণে এই ফল খেলে কিছু মানুষের পেটে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়া হতে পারে। এর কারণ হল এতে উচ্চ মাত্রার ফাইবার থাকে। তাই ধীরে ধীরে এবং অল্প পরিমাণে এটি খাওয়া উচিত।
- বিশেষ করে যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তাদের পানি ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
২. অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া:
- কিছু মানুষের পানি ফলে অ্যালার্জি থাকতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ফোলাভাব বা শ্বাসকষ্ট। এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে পানি ফল খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
৩. কীটনাশক বা দূষণের ঝুঁকি:
- যেহেতু এই ফল জলাভূমিতে জন্মায়, তাই পানিতে থাকা কীটনাশক বা অন্যান্য দূষকের দ্বারা দূষিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ভালোভাবে ধুয়ে এবং প্রয়োজন হলে হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে এটি খাওয়া উচিত।
৪. গ্লাইসেমিক ইনডেক্স:
- পানি ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (Glycemic Index) মাঝারি ধরনের। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং খাওয়ার আগে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. ঔষধি মিথস্ক্রিয়া:
- পানি ফলে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান থাকতে পারে যা কিছু ওষুধের সাথে interaction করতে পারে। আপনি যদি কোনো বিশেষ ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে পানি ফল খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
৬. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সতর্কতা:
- যদিও কিছু গবেষণায় গর্ভাবস্থায় পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বা অ্যালার্জি থাকলে সমস্যা হতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের পানি ফল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।