Skip to content
Home » MT Articles » তপসে মাছ: তপসে মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

তপসে মাছ: তপসে মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

তপসে মাছ

তপসে মাছ:

তপসে মাছ (Topse Mach) মূলত প্যারাডাইস থ্রেডফিন (Paradise Threadfin) নামে পরিচিত একটি সামুদ্রিক মাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Polynemus paradiseus। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং এর একটি মিষ্টি স্বাদ আছে।

তপসে মাছ এর বৈশিষ্ট্য:

  • এই মাছ লম্বাটে এবং কিছুটা চ্যাপ্টা আকৃতির হয়ে থাকে।
  • এর পাখনা লম্বা সুতার মতো দেখতে হয়, যা একে অন্যান্য মাছ থেকে আলাদা করে তোলে।
  • তপসে মাছ সাধারণত অগভীর উপকূলীয় অঞ্চলে এবং মোহনায় পাওয়া যায়।
  • এটি একটি জনপ্রিয় খাবার মাছ এবং এর যথেষ্ট বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে।

তপসে মাছের পুষ্টিগুণ:

তপসে মাছ প্রোটিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। সাধারণভাবে মাছের পুষ্টিগুণ আলোচনা করলে দেখা যায় যে এটি:

  • উচ্চ মানের প্রোটিনের উৎস, যা শরীরের গঠন ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
  • ভিটামিন ডি এবং বি১২ এর উৎস, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • আয়োডিন, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের মতো খনিজ পদার্থ ধারণ করে, যা থাইরয়েড function, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

বিভিন্ন ধরনের মাছের পুষ্টিগুণ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত মাছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং ভিটামিন বিদ্যমান।

আরোও পড়ুন

শরিফা বা আতা ফল কি? শরিফা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।

তপসে মাছের উপকারিতা:

তপসে মাছের উপকারিতা
তপসে মাছ
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: তপসে মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (EPA এবং DHA) থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তনালীতে চর্বি জমতে বাধা দেয় এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং শেখার ক্ষমতা উন্নত করতে পারে। শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: তপসে মাছে ভিটামিন এ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: এই মাছে ভিটামিন ডি এবং ফসফরাস থাকে যা হাড়কে মজবুত করতে এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: তপসে মাছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যেমন ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • প্রোটিনের উৎস: তপসে মাছ উচ্চ মানের প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। প্রোটিন শরীরের কোষ গঠন ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য।
  • কম চর্বিযুক্ত: এই মাছে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে ফ্যাট থাকে, তাই যারা ওজন কমাতে চান বা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চান তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প।

তপসে মাছের অপকারিতা:

  • পারদের উপস্থিতি: অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের মতো তপসে মাছেও পারদ থাকতে পারে। পারদ একটি ভারী ধাতু যা বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। ছোট মাছের তুলনায় বড় এবং শিকারী মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই তপসে মাছের আকার ও উৎসের উপর নির্ভর করে এতে পারদের উপস্থিতি কমবেশি হতে পারে। গর্ভবতী মহিলা, স্তন্যদানকারী মা এবং ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে পারদযুক্ত মাছ খাওয়া সীমিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • দূষণ: সমুদ্র বা নদীর দূষণের কারণে তপসে মাছে অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইলস (PCBs) এবং ডাইঅক্সিন জমা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী exposure-এর ফলে এই পদার্থগুলো স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • অ্যালার্জি: কিছু মানুষের মাছের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। তপসে মাছ খেলেও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, যার মধ্যে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট বা পেটের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত।
  • সোডিয়ামের পরিমাণ: কিছু প্রক্রিয়াজাত বা লবণাক্ত তপসে মাছে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • পরজীবী: কাঁচা বা সঠিকভাবে রান্না না করা তপসে মাছে পরজীবী থাকতে পারে যা পেটের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

তপসে মাছের রেসিপি:

তপসে মাছ ভাজা:
তপসে মাছ ভাজা

এই পদটি খুবই সহজে তৈরি করা যায় এবং এটি একটি মুখরোচক খাবার।

উপকরণ:

  • ৪-৫টি তপসে মাছ
  • ১ চা চামচ আদা বাটা
  • ১/২ চা চামচ রসুন বাটা
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
  • ১/২ চা চামচ মরিচ গুঁড়ো (স্বাদ অনুযায়ী)
  • স্বাদ অনুযায়ী লবণ
  • ভাজার জন্য তেল

প্রস্তুত প্রণালী:

১. প্রথমে তপসে মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। মাছের আঁশ ও ভেতরের অংশ ফেলে দিন। ২. একটি পাত্রে আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো এবং লবণ একসাথে মিশিয়ে নিন। 3. এই মসলার মিশ্রণটি মাছের গায়ে ভালোভাবে মাখিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন মাছের ভেতরের দিকেও মসলা লাগে। 4. মাখানো মাছগুলো অন্তত ১৫-২০ মিনিট মেরিনেট করার জন্য রেখে দিন। এতে মাছের ভেতরে মসলার স্বাদ ভালোভাবে ঢুকবে। 5. একটি কড়াইতে তেল গরম করুন। তেল মাঝারি আঁচে গরম হতে দিন। 6. তেল গরম হয়ে গেলে মেরিনেট করা মাছগুলো সাবধানে কড়াইতে দিন। একবারে বেশি মাছ না দেওয়াই ভালো, যাতে মাছগুলো ভালোভাবে ভাজা হতে পারে। 7. মাছগুলো একপাশ সোনালী বাদামী হয়ে এলে সাবধানে উল্টে দিন এবং অন্য পাশও একই ভাবে ভেজে নিন। 8. মাছগুলো ভালোভাবে ভাজা হয়ে গেলে তেল থেকে তুলে একটি কিচেন টিস্যুর উপর রাখুন, যাতে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। 9. গরম গরম ভাজা তপসে মাছ ভাতের সাথে বা এমনিতেই পরিবেশন করুন।

তপসে মাছের ঝোল:
তপসে মাছের ঝোল

উপকরণ:

  • ৪-৫ টুকরা তপসে মাছ
  • ১টি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ কুচি
  • ১ চা চামচ আদা বাটা
  • ১/২ চা চামচ রসুন বাটা
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
  • ১/৪ চা চামচ মরিচ গুঁড়ো (স্বাদ অনুযায়ী)
  • ১/২ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
  • ১/৪ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
  • ১টি ছোট টমেটো কুচি (ঐচ্ছিক)
  • ২-৩টি কাঁচা মরিচ ফালি (স্বাদ অনুযায়ী)
  • সামান্য ধনে পাতা কুচি (সাজানোর জন্য)
  • লবণ স্বাদ অনুযায়ী
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ২ কাপ গরম জল

প্রস্তুত প্রণালী:

১. প্রথমে তপসে মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন এবং সামান্য লবণ ও হলুদ মাখিয়ে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। 2. একটি কড়াইতে তেল গরম করুন। তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা বাদামী করে ভেজে নিন। 3. পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে আদা বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিন, যতক্ষণ না কাঁচা গন্ধ চলে যায়। 4. এরপর হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো এবং ধনে গুঁড়ো দিয়ে সামান্য জল ছিটিয়ে মসলা কষিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন মসলা যেন পুড়ে না যায়। 5. মসলা কষানো হয়ে গেলে টমেটো কুচি (যদি ব্যবহার করেন) এবং কাঁচা মরিচ ফালি দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন যতক্ষণ না টমেটো নরম হয়ে আসে। 6. এবার কড়াইতে গরম জল ঢেলে দিন এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ মিশিয়ে দিন। ঝোল ফুটে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। 7. ঝোল ফুটতে শুরু করলে লবণ মাখানো মাছের টুকরোগুলো সাবধানে ঝোলের মধ্যে ছেড়ে দিন। 8. মাঝারি আঁচে ৫-৭ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না মাছ সেদ্ধ হয়ে যায় এবং ঝোল ঘন হয়ে আসে। খুব বেশি নাড়াচাড়া করবেন না, এতে মাছ ভেঙে যেতে পারে। 9. ঝোল ঘন হয়ে এলে এবং মাছ ভালোভাবে সেদ্ধ হলে ধনে পাতা কুচি দিয়ে দিন। 10. কিছুক্ষণ পর চুলা বন্ধ করে দিন এবং গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

তপসে মাছের মালাইকারি:

উপকরণ:

  • ৪-৫ টুকরা তপসে মাছ
  • ১টি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ বাটা
  • ১ চা চামচ আদা বাটা
  • ১/২ চা চামচ রসুন বাটা
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
  • ১/৪ চা চামচ মরিচ গুঁড়ো (ঐচ্ছিক)
  • ১/২ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
  • ১/৪ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো
  • ২ কাপ ঘন নারকেলের দুধ
  • ২-৩টি কাঁচা মরিচ চিরে নেওয়া
  • ১টি তেজপাতা
  • ২-৩টি এলাচ
  • ২-৩টি লবঙ্গ
  • ১ ইঞ্চি দারুচিনি
  • সামান্য চিনি (স্বাদ অনুযায়ী)
  • লবণ স্বাদ অনুযায়ী
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ধনে পাতা কুচি (সাজানোর জন্য)

প্রস্তুত প্রণালী:

১. প্রথমে তপসে মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন এবং সামান্য লবণ ও হলুদ মাখিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। 2. একটি কড়াইতে তেল গরম করুন। তেল গরম হলে তেজপাতা, এলাচ, লবঙ্গ ও দারুচিনি ফোড়ন দিন। সুগন্ধ বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। 3. এরপর পেঁয়াজ বাটা দিয়ে হালকা বাদামী করে ভেজে নিন। 4. পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে আদা বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিন, যতক্ষণ না কাঁচা গন্ধ চলে যায়। 5. হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো (যদি ব্যবহার করেন) এবং জিরা গুঁড়ো দিয়ে সামান্য জল ছিটিয়ে মসলা কষিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন মসলা যেন পুড়ে না যায়। 6. কষানো মসলার মধ্যে লবণ মাখানো মাছের টুকরোগুলো সাবধানে দিয়ে হালকাভাবে ভেজে নিন। খুব বেশি ভাজার দরকার নেই, শুধু মসলার সাথে মিশিয়ে নিন। 7. এবার কড়াইতে ঘন নারকেলের দুধ ঢেলে দিন। কাঁচা মরিচ চিরে দিন এবং স্বাদ অনুযায়ী সামান্য চিনি যোগ করুন। 8. ঝোল ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন এবং ৫-৭ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না মাছ ভালোভাবে সেদ্ধ হয় এবং ঝোল ঘন হয়ে আসে। মাঝে মাঝে হালকাভাবে নাড়াচাড়া করুন যাতে মাছ ভেঙে না যায়। 9. রান্না প্রায় শেষ হলে গরম মশলা গুঁড়ো ছিটিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ দমে রাখুন। 10. চুলা বন্ধ করে ধনে পাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

error: Content is protected !!