Skip to content
Home » MT Articles » পুঁটি মাছ: স্বাদ আর পুষ্টির সমাহার। পুঁটি মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

পুঁটি মাছ: স্বাদ আর পুষ্টির সমাহার। পুঁটি মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

পুঁঠি মাছ এর পুষ্টিগুণ

পুঁটি মাছ (Puntius genus) একটি ছোট আকারের স্বাদুপানির মাছ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাধারণত পাওয়া যায়। এটি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে খুবই পরিচিত এবং জনপ্রিয় মাছ।

পুঁঠি মাছের বৈশিষ্ট্য:

  1. আকার: পুঁঠি মাছ সাধারণত ছোট থেকে মাঝারি আকারের হয়, লম্বায় ৫-১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
  2. রং: এর শরীর সিলভার রঙের, তবে পিঠে ও পাখনায় হালকা বাদামি বা সবুজ আভা থাকে। কিছু প্রজাতির পুঁঠি মাছের শরীরে কালো দাগও দেখা যায়।
  3. খাদ্য: পুঁঠি মাছ জলজ উদ্ভিদ, পোকামাকড়, এবং অণুজীব খেয়ে বেঁচে থাকে।
  4. জলাশয়: পুঁঠি মাছ পুকুর, নদী, খাল, বিল এবং ধানক্ষেতের পানিতে বাস করে। এটি সাধারণত শান্ত পানিতে বেশি পাওয়া যায়।

পুঁটি মাছের বিভিন্ন প্রজাতি:

বাংলাদেশের নদী, নাল, বিল, পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির পুঁটি মাছ পাওয়া যায়। এদের আকার, রং, আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সবগুলোই পুষ্টিগুণে ভরপুর। আসুন কিছু জনপ্রিয় প্রজাতির সাথে পরিচিত হওয়া যাক:

১. কাঞ্চন পুঁটি:

  • বৈশিষ্ট্য: অন্যান্য পুঁটি মাছের তুলনায় কিছুটা বড় এবং চ্যাপ্টা আকৃতির। শরীর রুপালি, পিঠ কালো এবং অাঁশের গোড়া কালচে।
  • বিশেষত্ব: স্বাদুপানির সর্বত্র পাওয়া যায়। প্রজননকালে পুরুষ মাছের শরীরে লাল ও বেগুনি রং ধরে।

২. চালাপুঁটি:

  • বৈশিষ্ট্য: রুপালি শরীর, পেটের তুলনায় পিঠের দিক অধিক উত্তল। চোয়ালে এক জোড়া বার্বেল থাকে। লেজের পাশে একটি কালো দাগ থাকে।
  • বিশেষত্ব: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। প্রজননকালে পুরুষ মাছের কানকো থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত মাঝ বরাবর একটি লাল ডোরা দেখা দেয়।
পুঁটি মাছের বিভিন্ন প্রজাতি
পুঁটি মাছের বিভিন্ন প্রজাতি

৩. মলা পুঁটি:

  • বৈশিষ্ট্য: দেহ স্বচ্ছ, উভয় পাশে বাদামী-রূপালি বর্ণের ডোরা লম্বালম্বি ভাবে অবস্থান করে। পৃষ্ঠপাখনার গোড়ার সামনের দিকে একটা ছোট কালো দাগ এবং পুচ্ছপাখনার পার্শ্ব দিকে তিলের মত ছোট কালো ফোঁটা সদৃশ দাগ দেখতে পাওয়া যায়।1
  • বিশেষত্ব: বাংলাদেশ ও ভারতের স্থানীয় মাছ। বর্তমানে দুর্লভ প্রজাতির মাছ বলে চিহ্নিত।

অন্যান্য প্রজাতি:

  • দুই দাগা পুঁটি: শরীরে দুটি কালো দাগ থাকে।
  • এক দাগা পুঁটি: শরীরে একটি কালো দাগ থাকে।

পুঁঠি মাছের পুষ্টিগুণ

নীচে পুঁঠি মাছের পুষ্টিগুণ টেবিল আকারে উপস্থাপন করা হলো (প্রতি ১০০ গ্রামে):

উপাদানপরিমাণ
শক্তি (ক্যালোরি)৮৫-৯০ ক্যালোরি
প্রোটিন১৮-২০ গ্রাম
চর্বি১-২ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম২৫-৩০ মিগ্রাম
ফসফরাস২০০-২৫০ মিগ্রাম
আয়রন১-২ মিগ্রাম
ওমেগা-৩০.৫-১ গ্রাম

এটি হালকা ও সহজপাচ্য হওয়ায় শরীরের জন্য খুব উপকারী।

আরোও পড়ুন

“পারশে মাছ: প্রাকৃতিক ওমেগা-৩ এর ভান্ডার” ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।

পুঁটি মাছের উপকারিতা:

পুঁটি মাছ, বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় স্বাদু পানির মাছ, শুধু সুস্বাদুই নয়, এর পুষ্টিগুণও অত্যন্ত উচ্চ। এই ছোট্ট মাছে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

পুঁটি মাছের উপকারিতা
পুঁটি মাছ
  • প্রোটিনের ভান্ডার: পুঁটি মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে, যা শরীর গঠন ও মেরামতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড: এই মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন ও খনিজ: পুঁটি মাছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং জিনকের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ রয়েছে।
  • কম ক্যালোরি: পুঁটি মাছে ক্যালোরির পরিমাণ কম, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রক্তচাপ কমাতে এবং রক্তনালীকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • হাড় মজবুত করে: ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • পেশি গঠন সহায়তা করে: প্রোটিন পেশি গঠনে সহায়তা করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়: ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

কারা পুঁটি মাছ খেতে পারে?

সাধারণত সবাই পুঁটি মাছ খেতে পারে। তবে যাদের কোনো ধরনের অ্যালার্জি আছে, তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

কিভাবে পুঁটি মাছ রান্না করা হয়?

পুঁটি মাছ বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। ভাজা, ঝাল, কড়াই, করি, সুপ ইত্যাদি। আপনার পছন্দ অনুযায়ী পুঁটি মাছ রান্না করে খেতে পারেন।

সতর্কতা

  • তাজা মাছ: সবসময় তাজা মাছ কিনুন এবং রান্না করুন।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: মাছ পরিষ্কার করার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়া: যদিও পুঁটি মাছ পুষ্টিকর, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

পুঁটি মাছ একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার। এটি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অত্যন্ত জরুরি।

আপনি কি পুঁটি মাছ সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চান?

সম্পর্কিত:

হরিতকির উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

March 10, 2024

অড়হর ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

April 21, 2024

পেস্তা বাদাম কি? পেস্তা বাদামের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 14, 2023

শরিফা বা আতা ফল কি? শরিফা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 23, 2023

পিয়াজের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। পিয়াজ কেন খাবেন?

August 30, 2023

সয়াবিন সবজি: সয়াবিন সবজির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

March 22, 2025

ছোলা ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

April 17, 2024

খলসে মাছ: পুষ্টিগুণে ভরপুর গ্রাম বাংলার সুস্বাদু একটি মাছ।

November 18, 2024

টক পালং শাক: জেনেনিন টক পালং শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও রেসিপি।

February 17, 2025

গলদা চিংড়ি’র মজাদার সব রেসিপি।

February 4, 2024
error: Content is protected !!