পারশে মাছ/ বাটা মাছ
পারশে মাছ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অতি পরিচিত একটি স্বাদু পানির মাছ। এর সুস্বাদু মাংসের জন্য এটি রান্নার জগতে বেশ জনপ্রিয়।
পারশে মাছের বৈশিষ্ট্য:
- আকার: সাধারণত ২০-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে।
- রং: শরীর পাতলা এবং রুপালি রঙের।
- বাসস্থান: অগভীর উপকূলীয় জলাশয়, খাড়ি অঞ্চল এবং প্যারাবনের জলাশয়ে এ মাছ পাওয়া যায়।
- খাদ্য: অপ্রাপ্ত বয়স্ক মাছ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী কণা খেলে, প্রাপ্তবয়স্ক হলে শেওলা, ডায়াটম সহ নানা জৈব পদার্থ খায়।
পারশে মাছের পুষ্টিগুণ:
সাধারণত এই মাছে থাকে:
- উচ্চমানের প্রোটিন: শরীর গঠন ও মেরামতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: হৃদরোগ প্রতিরোধে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য এবং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন এবং মিনারেল: ভিটামিন ডি, বি১২, আয়রন, জিঙ্ক ইত্যাদি।
পারশে মাছের উপকারিতা:
১. প্রোটিনের ভালো উৎস:
- পারশে মাছে প্রচুর পরিমাণে উচ্চমানের প্রোটিন থাকে, যা শরীর গঠন ও মেরামতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
- প্রোটিন শক্তি সরবরাহ করে, পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভান্ডার:
- পারশে মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে।
- ওমেগা-৩ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- এটি জয়েন্টের ব্যথা কমাতেও সহায়তা করে।

৩. ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ভালো উৎস:
- পারশে মাছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যেমন ভিটামিন ডি, বি১২, আয়রন, জিঙ্ক ইত্যাদি থাকে।
- এই পুষ্টি উপাদানগুলি হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে।
৪. হালকা ও সহজে হজমযোগ্য:
- পারশে মাছ অন্যান্য মাছের তুলনায় হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য।
- এটি পেটের সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
৫. শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য উপকারী:
- পারশে মাছের হালকা স্বাদ এবং সহজে হজমযোগ্য হওয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত খাবার।
- এতে থাকা প্রোটিন ও ওমেগা-৩ শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য এবং বৃদ্ধদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
আরোও পড়ুন
টাকি মাছ: টাকি মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।
৬. ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
- পারশে মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের কোষগুলোকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
- এটি ত্বকের শুষ্কতা, খসখসে এবং একজিমা থেকে রক্ষা করতে পারে।
পারশে মাছের অপকারিতা:

পারশে মাছ খাওয়ার সম্ভাব্য অপকারিতা:
- পারদ জমার সম্ভাবনা: বড় আকারের মাছগুলোতে পারদ জমার সম্ভাবনা থাকে। যদি এই মাছ দূষিত জলে বেড়ে ওঠে, তাহলে তাতে পারদের পরিমাণ বেশি থাকতে পারে। অতিরিক্ত পারদ শরীরে গেলে নার্ভাস সিস্টেম, কিডনি এবং হৃদয়ের ক্ষতি করতে পারে।
- অ্যালার্জি: খুব কম ক্ষেত্রে, কিছু মানুষ মাছের প্রতি অ্যালার্জিক হতে পারে। এই মাছ খেলে তাদের শ্বাসকষ্ট, চামড়ায় ফুসকুড়ি, পেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
- পরিবেশগত দূষণ: যদি মাছটি দূষিত জলে বেড়ে ওঠে, তাহলে তাতে অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থও থাকতে পারে। এগুলি শরীরে গেলে বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
- পরিমাণ: যে কোনো খাবারের মতো, পারশে মাছও মধ্যস্থিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত মাছ খাওয়া অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।
পারশে মাছ রান্নার কিছু জনপ্রিয় উপায়:
- ভাপা: পারশে মাছ ভাপা একটি স্বাস্থ্যসম্মত এবং সহজ রান্নার পদ্ধতি।
- তরকারি: বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মশলা দিয়ে পারশে মাছের তরকারি তৈরি করা যায়।
- ভাজা: পারশে মাছ ভাজা একটি জনপ্রিয় খাবার। তবে, অতিরিক্ত তেল ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।
- পোড়া: পারশে মাছ পোড়া একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।
This article is written with the help of Gemini