Skip to content
Home » MT Articles » লইট্টা মাছ এর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও মজাদার রেসিপি।

লইট্টা মাছ এর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও মজাদার রেসিপি।

লইট্টা মাছ

লইট্টা মাছ

লইট্টা মাছ, যা লোটে মাছ বা বম্বে ডাক নামেও পরিচিত, একটি জনপ্রিয় সামুদ্রিক মাছ যা বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

লইট্টা মাছের বৈশিষ্ট্য:

  • আকার: লইট্টামাছ সাধারণত ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, তবে সর্বোচ্চ ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
  • দেহ: লম্বাটে ও চ্যাপ্টা দেহ থাকে।
  • চোখ: বড় ও চকচকে চোখ থাকে।
  • মুখ: ছোট মুখ থাকে, যার উপরের অংশে ছোট ছোট দাঁত থাকে।
  • পাখনা: দুটি পৃষ্ঠীয় পাখনা, একটি বুকের পাখনা, একটি পায়ু পাখনা এবং একটি লেজের পাখনা থাকে।
  • রঙ: পিঠের অংশ বাদামী বা ধূসর রঙের এবং পেটের অংশ সাদা রঙের হয়।

লইট্টা মাছের পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ( প্রতি ১00 গ্রাম লইট্টা মাছে)
শক্তি120 কিলোক্যালোরি
প্রোটিন18 গ্রাম
চর্বী2 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট2 গ্রাম
ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড1.5 গ্রাম
ভিটামিন ডি400 আন্তর্জাতিক একক (IU)
ক্যালসিয়াম50 মিলিগ্রাম
ফসফরাস200 মিলিগ্রাম
আয়োডিন35 মাইক্রোগ্রাম
লোহা2.5 মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম300 মিলিগ্রাম
সোডিয়াম60 মিলিগ্রাম

লইট্টা মাছের উপকারিতা:

১) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:

  • লইট্টা মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সুরক্ষিত করতে এবং স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে।
লইট্টা মাছের শুটকি

২) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:

  • লইট্টা মাছে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL (খারাপ) কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • এটি HDL (ভাল) কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে।
  • এই প্রভাবগুলি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৩) হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:

  • লইট্টা মাছে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
  • ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।
  • ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্তিশালী এবং ঘন রাখতে সাহায্য করে।

আরোও পড়ুন

পাবদা মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

৪) চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:

  • লইট্টা মাছে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রেটিনা সুরক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন এ রাতের অন্ধত্ব প্রতিরোধে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

৫) ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:

  • লইট্টা মাছে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে শুষ্কতা এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • এটি বয়সের সাথে সাথে ত্বকের ঝাঁঝরা হওয়া এবং রিঙ্কেল হওয়া কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

৬) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

  • লইট্টামাছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • এই পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

৭) ওজন কমাতে সাহায্য করে:

  • লইট্টা মাছ ক্যালোরি এবং চর্বিতে কম
  • এটি প্রোটিনে সমৃদ্ধ, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে পারে।

লইট্টা মাছ এর অপকারিতা:

১) পারদ:

  • লইট্টা মাছে পারদ এর মাত্রা অন্যান্য কিছু মাছের তুলনায় বেশি হতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্য অতিরিক্ত পারদ গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে।
  • সপ্তাহে দুইবারের চেয়ে বেশি লইট্টা মাছ খাওয়া এড়ানো উচিত।

২) হিস্টামিন:

  • কিছু লইট্টা মাছে হিস্টামিন এর মাত্রা বেশি হতে পারে।
  • হিস্টামিন অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা এবং চুলকানি
  • আপনি যদি হিস্টামিন অ্যালার্জিতে ভোগেন তবে লইট্টা মাছ এড়ানো উচিত।

৩) অ্যালার্জি:

  • কিছু লোকের লইট্টা মাছের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে।
  • অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, উরটিকারিয়া (ত্বকের ফুসকুড়ি) এবং শ্বাসকষ্ট।
  • আপনি যদি মাছের প্রতি অ্যালার্জিতে ভোগেন তবে লইট্টা মাছ এড়ানো উচিত।

৪)পরিবেশগত দূষণ:

  • লইট্টামাছ পারদ এবং অন্যান্য পরিবেশগত দূষণকারী দ্বারা দূষিত জলে বাস করতে পারে।
  • এই দূষণকারীগুলি মাছে জমা হতে পারে এবং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৫) অতিরিক্ত মাছ খাওয়া:

  • অতিরিক্ত পরিমাণে যেকোনো ধরণের মাছ খাওয়া, লইট্টা মাছ সহ, অস্বাস্থ্যকর হতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

লইট্টা মাছের রেসিপি:

লইট্টা মাছের ভুনা:

উপকরণ:

  • লইট্টা মাছ – ৫০০ গ্রাম (মাঝারি আকারের)
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
  • আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • তেল – ভাজার জন্য
  • কাঁচা মরিচ – 2-3 টি (কাটা)
  • ধনেপাতা – সাজানোর জন্য
লইট্টা মাছের ভুনা

প্রণালী:

  1. মাছ ভালো করে ধুয়ে লবণ মাখিয়ে 15 মিনিট রেখে দিন।
  2. একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
  3. আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া এবং ধনে গুঁড়া দিয়ে আরও 2 মিনিট কষিয়ে নিন।
  4. লবণ এবং পানি দিয়ে মসলা কষান।
  5. মাছগুলো মসলায় মাখিয়ে ঢেকে 10 মিনিট রান্না করুন।
  6. ঢাকনা খুলে মাঝারি আঁচে মাঝে মাঝে নাড়তে নাড়তে আরও 5 মিনিট রান্না করুন।
  7. কাঁচা মরিচ এবং ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

লইট্টা মাছের ঝোল:

উপকরণ:

  • লইট্টা মাছ – ৫০০ গ্রাম (মাঝারি আকারের)
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
  • আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • তেল – ভাজার জন্য
  • কাঁচা মরিচ – 2-3 টি (কাটা)
  • ধনেপাতা – সাজানোর জন্য
  • পানি – পরিমাণমতো
লইট্টা মাছের ঝোল

প্রণালী:

  1. মাছ ভালো করে ধুয়ে লবণ মাখিয়ে 15 মিনিট রেখে দিন।
  2. একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
  3. আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া এবং ধনে গুঁড়া দিয়ে আরও 2 মিনিট কষিয়ে নিন।
  4. লবণ এবং পানি দিয়ে মসলা কষান।
  5. পানি ফুটে এলে মাছগুলো দিয়ে ঢেকে 10 মিনিট রান্না করুন।
  6. ঢাকনা খুলে মাঝারি আঁচে মাঝে মাঝে নাড়তে নাড়তে আরও 5 মিনিট রান্না করুন।
  7. কাঁচা মরিচ এবং ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

লইট্টা মাছের ভাজি(ফ্রাই):

উপকরণ:

  • লইট্টা মাছ – ৫০০ গ্রাম (মাঝারি আকারের)
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
  • আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • তেল – ভাজার জন্য
  • কাঁচা মরিচ – 2-3 টি (কাটা)
  • ধনেপাতা – সাজানোর জন্য
  • পানি – পরিমাণমতো
ফ্রাই লইটা

প্রণালী:

  1. মাছ ভালো করে ধুয়ে লবণ মাখিয়ে 15 মিনিট রেখে দিন।
  2. একটি পাত্রে পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া এবং লবণ মিশিয়ে একটি মসলা তৈরি করুন।
  3. মাছগুলোতে মসলা মাখিয়ে 15 মিনিট রেখে দিন।
  4. একটি কড়াইতে তেল গরম করে মাছগুলো বাদামী করে ভেজে নিন।
  5. ভাজা হয়ে গেলে কাঁচা মরিচ এবং ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

This article is written with the help of Gemini

সম্পর্কিত:

বুট ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

June 12, 2024

গজাল মাছ: গজাল মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য।

November 13, 2024

হলুদের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

August 30, 2023

চিনাবাদাম কি? চিনাবাদামের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 11, 2023

কাগজী লেবুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা, জাত ও চাষ পদ্ধতি।

October 4, 2023

ঝিঙে সবজি: ঝিঙের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

October 3, 2024

লাল শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

February 22, 2024

"পারশে মাছ: প্রাকৃতিক ওমেগা-৩ এর ভান্ডার" ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।

November 17, 2024

ঢেঁড়শের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

September 3, 2023

পিয়াজের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। পিয়াজ কেন খাবেন?

August 30, 2023
error: Content is protected !!