Skip to content
Home » MT Articles » লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা।

লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা।

লিচুর উপকারিতা

লিচু

ষড় ঋতুর এই দেশে বিভিন্ন মৌসুমে পাওয়া যায় নানান পুষ্টিকর ফল। এসব ফল আমাদের শরীরের পুষ্টিচাহিদা পূরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনই একটি ফল লিচু।লিচু হলো একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে জন্মে। এটি একটি ছোট, গোলাকার ফল যা হালকা লাল বা গোলাপী রঙের। লিচুর শাঁস সাদা এবং মিষ্টি, এবং এর মধ্যে একটি ছোট, শক্ত বিচি থাকে। লিচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ভিটামিন বি, পটাশিয়াম এবং ফাইবারেরও ভাল একটি উৎস।

লিচুর পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ (প্রতি 100 গ্রাম)
জল90.00 গ্রাম
ক্যালোরি48 ক্যালোরি
প্রোটিন0.60 গ্রাম
চর্বি0.20 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট11.00 গ্রাম
ফাইবার1.50 গ্রাম
চিনি8.30 গ্রাম
ভিটামিন সি64.00 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি60.20 মিলিগ্রাম
ফলিক অ্যাসিড19.00 মাইক্রোগ্রাম
পটাশিয়াম175.00 মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম10.00 মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম5.00 মিলিগ্রাম
লোহা0.30 মিলিগ্রাম
জিঙ্ক0.30 মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ0.20 মিলিগ্রাম
তামা0.10 মিলিগ্রাম
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট1200 ORAC ইউনিট

দ্রষ্টব্য:

  • এই তথ্য 100 গ্রাম লিচুর জন্য। লিচুর আকারের উপর নির্ভর করে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
  • লিচুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ ORAC (Oxygen Radical Absorbance Capacity) ইউনিটে পরিমাপ করা হয়।

লিচু গাছের বৈশিষ্ট্য:

আকার: লিচু গাছ মাঝারি থেকে বড় আকারের, ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

পাতা: লিচু গাছের পাতা যৌগপত্রী, ৪-৭ টি পত্রিকা থাকে। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ, চকচকে এবং লম্বাটে ডিম্বাকৃতির।

ফুল: লিচু গাছের ফুল ছোট, সাদা বা হলুদ রঙের। ফুলগুলো থোকা থোকা করে ফোটে।

ফল: লিচু ফল গোলাকার, লাল রঙের, এবং মসৃণ খোসাযুক্ত। ফলের ভেতরে সাদা, মিষ্টি এবং সুস্বাদু শাঁস থাকে।

বীজ: লিচু ফলের ভেতরে একটি বাদামী রঙের বীজ থাকে।

জীবনকাল: লিচু গাছ দীর্ঘজীবী, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে।

জলবায়ু: লিচু গাছ উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ু পছন্দ করে।

মাটি: লিচু গাছ গভীর, দোঁয়াশ মাটিতে ভালো জন্মে।

রোপণ: লিচু গাছ বীজ, কলম, বা চারা থেকে রোপণ করা যায়।

ফলন: লিচু গাছ রোপণের ৩-৪ বছর পর ফল দিতে শুরু করে।

পরিচর্যা: লিচু গাছের নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ, এবং গাছের গোড়া পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।

রোগ ও পোকামাকড়: লিচু গাছ বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণের শিকার হতে পারে।

ব্যবহার: লিচু ফল তাজা খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

লিচুর উপকারিতা: 

লিচুর উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: লিচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করে।লিচুতে থাকা অলিগোনল ভাইরাসের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। তাই গরমের সময়ে নিয়মিত লিচু খেলে বাঁচতে পারবেন সর্দি ও সাধারণ ফ্লু থেকে।

হার্টকে সুস্থ রাখে: লিচুতে পটাশিয়াম রয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: লিচুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তারকে বাধা দিতে সাহায্য করে।

কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়: লিচুতে পর্যাপ্ত পানি এবং পটাসিয়াম থাকায়, কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এই ফলটি শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্বও কমায়। যে কারণে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।

ত্বককে সুস্থ রাখে: লিচুতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে ক্ষতিকর সূর্য রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং মসৃণ রাখতেও সাহায্য করে।

কার্যকরী ব্যথানাশক: লিচু একটি কার্যকরী ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এটি খেলে প্রদাহ কমে । সেইসঙ্গে এটি শরীরের বিভিন্ন টিস্যুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

চুলকে সুস্থ রাখে: লিচুতে ভিটামিন বি6 রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি চুলকে ঝরঝরে এবং চকচকে রাখতেও সাহায্য করে।

হজম ক্ষমতা বাড়ায়: লিচুতে ফাইবার রয়েছে, যা হজমকে সহজ করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: লিচুতে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে। এটি পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

আরোও পড়ুন

জ্বর কী, কেন হয়, কাদের বেশি হয় ? জ্বর কত প্রকার ?

সতর্কতা:

খেতে সুস্বাদু হলেও ইচ্ছেমতো লিচু খাওয়ার সুযোগ নেই। দিনে ১০-১২ টি লিচু খাওয়া যেতে পারে। বয়স, শরীর, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিমিতভাবে লিচু বা যেকোনো ফল খেতে হবে।

লিচুর অপকারিত

বেশি লিচু খেলে কী ক্ষতি হতে পারে ?

  • মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
  • লিচুতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড নেই। ফলে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে তা শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট করতে পারে।
  • খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।
  • অতিরিক্ত লিচু খাওয়া অনেক সময় লো প্রেশারের রোগীর বুক ধড়ফড় সমস্যার সৃষ্টি করে। যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তাদের লিচু খাওয়ার সময়ে সতর্ক থাকতে হবে।

লিচু গাছের রোগ ও প্রতিকার:

রোগ:

  • লিচু এনথ্রাকনোজ:এই রোগ ছত্রাকের আক্রমণে হয়। পাতায়, ডালে, এবং ফলে বাদামী দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত ফল পড়ে যায়।
  • লিচু পাতা পোড়া রোগ:এই রোগ ছত্রাকের আক্রমণে হয়। পাতায় বাদামী দাগ দেখা যায়। পাতা শুকিয়ে মরে যায়।
  • লিচু ফল ফাটা রোগ:এই রোগ ছত্রাকের আক্রমণে হয়। ফল ফাটা যায় এবং মাংস নরম হয়ে যায়।
  • লিচু মাইট:এই পোকামাকড় পাতার রস শুষে খায়। পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং শুকিয়ে মরে যায়।
  • লিচু স্কেল পোকা:এই পোকামাকড় ডালে এবং পাতায় আঁশযুক্ত খোসা তৈরি করে। পোকামাকড় রস শুষে খায় এবং গাছ দুর্বল হয়ে যায়।
লিচু এনথ্রাকনোজ
লিচু এনথ্রাকনোজ

প্রতিকার:

  • রোগ প্রতিরোধ: রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতি বছর গাছের চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা, আগাছা পরিষ্কার করা, এবং সার প্রয়োগ করা উচিত।
  • ছত্রাকনাশক ব্যবহার: এনথ্রাকনোজ এবং পাতা পোড়া রোগের জন্য ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ফলের বোঁটায় ঔষধ প্রয়োগ: ফল ফাটা রোগ প্রতিরোধের জন্য ফলের বোঁটায় ঔষধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • পোকামাকড়নাশক ব্যবহার: মাইট এবং স্কেল পোকার জন্য পোকামাকড়নাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
error: Content is protected !!