Skip to content
Home » MT Articles » ঝিঙার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। ঝিঙার চাষ পদ্ধতি।

ঝিঙার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। ঝিঙার চাষ পদ্ধতি।

ঝিঙা

ঝিঙা 

ঝিঙা একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বর্গ এবং উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় লতাজাতীয় উদ্ভিদ যা শসা কিউকুয়াবিটাশা পরিবারে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। ঝিঙার ইংরেজি নাম Luffa।ঝিঙা সাধারণত দুই প্রজাতির হয়, যথা, luffa aegyptiaca এবং luffa acutangula। ধুন্দল মূলত সবজি হিসাবে চাষ করা হয়।

ঝিঙার বৈজ্ঞানিক নাম: Luffa। ঝিঙার অপর নামগুলো হলো ভিয়েতনামী ধুন্দল, ভিয়েতনামী লাউ, বা চীনা অক্রা।

ঝিঙা একটি পুষ্টিকর সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে। ঝিঙায় ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এবং ফাইবার রয়েছে।

ঝিঙার পুষ্টিগুণ

ঝিঙার পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |

| ক্যালোরি | 17 |

| প্রোটিন | 1.1 গ্রাম |

| কার্বোহাইড্রেট | 3.6 গ্রাম |

| ফাইবার | 1.2 গ্রাম |

| চর্বি | 0.1 গ্রাম |

| ভিটামিন এ | 33% |

| ভিটামিন সি | 14% |

| আয়রন | 2% |

| পটাশিয়াম | 16% |

| ম্যাগনেসিয়াম | 8% |

| ক্যালসিয়াম | 2% |

| ফসফরাস | 2% |

ঝিঙা একটি পুষ্টিকর সবজি যা ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস। এটিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং এটি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ঝিঙার চাষ পদ্ধতি:

ঝিঙা এর চাষ পদ্ধতি

ঝিঙা একটি জনপ্রিয় সবজি যা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। এটি একটি উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ুতে ভাল জন্মায় এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রয়োজন। ঝিঙা চাষের জন্য জমি নির্বাচন ও তৈরি, বীজ বপন, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ, সেচ, আগাছা দমন, রোগ ও পোকামাকড় দমন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ।

জমি নির্বাচন ও তৈরি:

ঝিঙা চাষে সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রাপ্ত এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। জমিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

বীজ বপন:

ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ঝিঙার বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের আগে বীজগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। বীজ বপনের জন্য মাটিতে ৪-৫ সেমি গভীর গর্ত তৈরি করে নিতে হবে। প্রতি গর্তে ২-৩টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর মাটি হালকা করে চাপ দিতে হবে।

আরোও পড়ুন

কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। কাঁকরোল রেসিপি, চাষ পদ্ধতি।

চারা রোপণ:

বীজ থেকে চারা গজাতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। চারা যখন ১০-১২ সেন্টিমিটার লম্বা হয় তখন সেগুলোকে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের জন্য ২ মিটার দূরত্বে সারি তৈরি করে নিতে হবে। প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা রোপণ করতে হবে।

সার প্রয়োগ:

ঝিঙার ভালো ফলন পেতে চাইলে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময় প্রতি শতাংশ জমিতে ২৫ কেজি গোবর, ৫ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি এবং ১০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১৫ দিন পর প্রতি শতাংশ জমিতে ৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ:

ঝিঙা একটি আর্দ্রতাপ্রিয় ফসল। চারা রোপণের পর থেকে ফল ধরা পর্যন্ত মাটি সবসময় আর্দ্র রাখতে হবে। সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জল গাছের গোড়ায় জমে না থাকে।

আগাছা দমন:

ঝিঙা গাছের চারপাশে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আগাছা গাছের পুষ্টি উপাদান শোষণ করে এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি করে। আগাছা দমনের জন্য প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

রোগ ও পোকামাকড় দমন:

ঝিঙায় বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলে ফেলতে হবে।
  • আক্রান্ত গাছ থেকে অন্য গাছে রোগ ও পোকামাকড় ছড়িয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
  • রাসায়নিক কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

ঝিঙা এর জাত:

  • বারি ঝিঙা-১
  • বারি ঝিঙা-২
  • সামার সর্ট
  • শতাব্দী

ঝিঙার উপকারিতা:

ঝিঙার উপকারিতা

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে: 

ঝিঙায় পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

হজমশক্তি বাড়ায়: 

ঝিঙায় ফাইবার রয়েছে যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: 

ঝিঙায় ভিটামিন সি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: 

ঝিঙায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: 

ঝিঙায় ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং এটি ফাইবার সমৃদ্ধ, তাই এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: 

ঝিঙায় ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে যা ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।

লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: 

ঝিঙা লিভারের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

জন্ডিসের চিকিৎসায় সাহায্য করে: 

ঝিঙা জন্ডিসের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে: 

ঝিঙায় ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

ঝিঙার অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

ঝিঙা একটি নিরাপদ সবজি। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যালার্জি: ঝিঙায় অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ঝিঙা খেলে ত্বকে চুলকানি, ফোলাভাব বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • হজম সমস্যা: ঝিঙায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। তাই, এটি খেলে কিছু লোকের হজম সমস্যা হতে পারে, যেমন পেট ফাঁপা, গ্যাস বা ডায়রিয়া।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: ঝিঙায় চিনি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত পরিমাণে ঝিঙা খাওয়া উচিত নয়।

ঝিঙার অপকারিতা এড়াতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত:

  • যদি আপনি ঝিঙায় অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তাহলে এটি খাওয়া বন্ধ করুন।
  • যদি আপনি হজম সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলে ঝিঙা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের ঝিঙা খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
error: Content is protected !!