পোস্ত দানা
পোস্ত দানা আফিম গাছের বীজ থেকে তৈরি হয়। এটি ছোট, বৃক্কাকার এবং কালো বা সাদা রঙের হতে পারে। পোস্ত দানা বিভিন্ন খাবারে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে মিষ্টি তৈরিতে।
পোস্ত দানার পুষ্টিগুণ:
নিচের টেবিলটিতে ১০০ গ্রাম পোস্ত দানায় পাওয়া পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ দেখানো হয়েছে:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
মোট ক্যালোরি | 487 ক্যালোরি |
চর্বি | 42.2 গ্রাম |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | 4.8 গ্রাম |
মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | 25.4 গ্রাম |
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | 11.8 গ্রাম |
প্রোটিন | 15.2 গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | 7.6 গ্রাম |
ডায়েটারি ফাইবার | 19.5 গ্রাম |
চিনি | 2.7 গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | 778 মিলিগ্রাম |
আয়রন | 7.7 মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | 370 মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | 660 মিলিগ্রাম |
থায়ামিন (B1) | 1.39 মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাবিন (B2) | 1.53 মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন (B3) | 4.1 মিলিগ্রাম |
ফোলেট (B9) | 92 মাইক্রোগ্রাম |

পোস্ত দানার উপকারিতা:
পুষ্টি উপাদান:
- খনিজ: পোস্ত দানা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং লোহার একটি ভালো উৎস। এই খনিজগুলি হাড়ের স্বাস্থ্য, দাঁতের স্বাস্থ্য, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং আরও অনেক কিছুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- ফাইবার: পোস্ত দানা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং দীর্ঘস্থায়ী পূর্ণতার অনুভূতি প্রদান করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: পোস্ত দানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ যা শরীরকে ক্ষতিকর মুক্ত র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। মুক্ত র্যাডিকেল কোষের ক্ষতি এবং বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর চর্বি: পোস্ত দানাতে স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আরোও পড়ুন
হলুদের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
- হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে: পোস্ত দানায় থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
- দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: পোস্ত দানা দাঁতের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে এবং মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: পোস্ত দানায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
- হজম উন্নত করে: পোস্ত দানার প্রচুর পরিমাণে ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেট ফোলাভাব কমায়।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: পোস্ত দানাতে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং HDL (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- ত্বকের জন্য ভালো: পোস্ত দানায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
- চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে: এটি চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং খুশকি দূর করে।
- ঘুমের মান উন্নত করে: পোস্ত দানায় থাকা কিছু যৌগ ঘুমের মান উন্নত করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
পোস্ত দানা এর অপকারিতা:
অ্যালার্জি: কিছু লোকের পোস্ত দানার প্রতি অ্যালার্জি থাকে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফোলাভাব, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট এবং এমনকি অ্যানাফিল্যাক্সিস।
মাদকাসক্তি: এটি মরফিনের উৎস, একটি মাদক যা অভ্যাসবদ্ধ হতে পারে। তবে, খাদ্যে ব্যবহৃত পরিমাণে পোস্ত দানা মরফিনের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ধারণ করে না।
গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য ঝুঁকি: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য পোস্ত দানা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না কারণ এটি গর্ভপাত বা শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: এটি কিছু ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে, যেমন ব্যথানাশক এবং শিথিলকরণকারী। আপনি যদি কোনও ঔষধ গ্রহণ করেন তবে পোস্ত দানা খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
হজমে সমস্যা: অতিরিক্ত পোস্ত দানা খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব এবং পেট ফোলাভাবের কারণ হতে পারে।
পোস্ত দানার রেসিপি:
১. পোস্ত ইলিশ:
- উপকরণ:
- ইলিশ মাছ – 1 টা (মাঝারি আকারের)
- পেঁয়াজ কুচি – 1 কাপ
- আদা বাটা – 1 টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – 1 টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়ো – 1/2 চা চামচ
- মরিচ গুঁড়ো – 1/2 চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো – 1/2 চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো – 1/2 চা চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- তেল – 3 টেবিল চামচ
- পোস্ত দানা বাটা – 2 টেবিল চামচ
- পানি – 1 কাপ
- ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য
- প্রণালী:
- ইলিশ মাছ ভালো করে ধুয়ে লবণ মাখিয়ে 15 মিনিট রেখে দিন।
- একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
- আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো এবং ধনে গুঁড়ো দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন।
- পোস্ত দানা বাটা এবং পানি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- লবণ দিয়ে স্বাদমতো মশলা করে মেরিনেট করা ইলিশ মাছ দিয়ে ঢেকে দিন।
- মাঝারি আঁচে মাছ সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
- ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

২. পোস্ত রুটি:
- উপকরণ:
- ময়দা – 2 কাপ
- পোস্ত দানা বাটা – 1/2 কাপ
- নারকেল কোরা – 1/2 কাপ
- চিনি – 1/4 কাপ
- লবণ – স্বাদমতো
- ঘি – 1/4 কাপ
- পানি – পরিমাণমতো
- প্রণালী:
- একটি বড় পাত্রে ময়দা, পোস্ত দানা বাটা, নারকেল কোরা, চিনি এবং লবণ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- ঘি দিয়ে ভালো করে মেখে নিন।
- অল্প অল্প করে পানি দিয়ে নরম ডো তৈরি করুন।
- ডো থেকে ছোট ছোট রুটি বেলে নিন।
- একটি তাওয়ায় তেল গরম করে রুটি দুপিঠ ভেজে নিন।
- গরম গরম পরিবেশন করুন।
৩.আলু পোস্ত: বাঙালি ঘরের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবার:
উপকরণ:
- আলু – ৩-৪ টা (মাঝারি আকারের)
- পোস্ত দানা – ২ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ কুচি – ১/২ কাপ
- কাঁচা মরিচ কুচি – ২-৩ টা
- আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ১/২ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো – ১/৪ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো – ১/৪ চা চামচ
- লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
- তেল – ২ টেবিল চামচ
- ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য
প্রণালী:
- আলুগুলো ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন।
- পোস্ত দানা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
- একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
- আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো এবং ধনে গুঁড়ো দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন।
- ভেজানো পোস্ত দানা এবং পানি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- লবণ দিয়ে স্বাদমতো মশলা করে কেটে রাখা আলুগুলো দিয়ে দিন।
- মাঝারি আঁচে আলু সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
- ঝোল ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন।
- ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

পরিবেশন:
আলু পোস্ত গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। ঐচ্ছিকভাবে, আপনি আলু পোস্তের সাথে রুটি, পরোটা, লুচি, খিচুড়ি, বা পোলাও খেতে পারেন।
This article is written with the help of Gemini