Skip to content
Home » MT Articles » ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ভালোমত জানুন। নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ভালোমত জানুন। নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।

ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গু জ্বর কি :

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। এই মশা যখন কামড় দেয়, তখন ডেঙ্গু ভাইরাস আমাদের দেহে প্রবেশ করে। ফলে যে জ্বর হয় তাকে আমরা ডেঙ্গু জ্বর বলি। 

ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ :

২০১৮ সালে একটি ন্যাশনাল গাইডলাইনস প্রকাশিত হয়।  গাইডলাইন অনুযায়ী এ জ্বরকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

  • ক্যাটাগরি- এ
  • ক্যাটাগরি- বি
  • ক্যাটাগরি- সি 

১. ক্যাটাগরি-এ : ক্যাটাগরি-এ কে বলা হয় অ্যাবসেন্ট ওয়ার্নিং সাইনস।মানে আমাদের খারাপ কোন উপসর্গ থাকবে না। তাহলে কি হয়, হাই ফিভার হয়। হাই ফিভার  বলতে ১০১ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। এর সাথে যদি সারা শরীর ব্যথা হয়, বিশেষ করে চোখের পিছনে ব্যাথা হয়, মাথাব্যথা হয়, লালচে দাগ হয়। সে ক্ষেত্রে ভাবতে হবে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। 

২. ক্যাটাগরি-বি : ক্যাটাগরি-বি হচ্ছে যাদের ওয়ার্নিং সাইনগুলো থাকে। ‘বি’ ফর বার্নি  সাইনস।যদি পেটে ব্যথা কারও থাকে, কেউ যদি প্রচুর বমি করে এবং আরও বলা আছে, ব্লিডিং ম্যানিফেস্টেশনস। সে কি রকম, আমরা যদি রক্ত বমি করি, নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। অনেক সময় দেখা যায় মহিলাদের মাসিকের সময় না  কিন্তু প্রচুর রক্ত যাচ্ছে। পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে অথবা ত্বকের নিচে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। এগুলো কিন্তু ওয়ার্নিং সাইন। কেউ যদি অজ্ঞানের মত হয়ে যায়, বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং যারা কনফিউজড হয়ে যায় এমনকি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। যদি প্লাজমা লিখেজের এভিডেন্স থাকে, অনেকের পেটে পানি চলে আস,  ফুসফুসে পানি আসে। এ ধরনের উপসর্গ যদি থাকে তাহলে বি ক্যাটাগরিতে পড়বে। তাদের অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। 

৩. ক্যাটাগরি-সি : ক্যাটাগরি-সি হচ্ছে ক্রিটিক্যাল ফেজ। এটি অনেক বেশি খারাপ অবস্থা। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ব্লাড প্রেসার কমে গেল, রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল, রোগী অনেক দুর্বল হয়ে পড়ল। বি ও সি ক্যাটাগরির রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আইসিইউ সাপোর্টও প্রয়োজন হতে পারে। 

ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ :

অন্যান্য অসুস্থতার (যে কারণে জ্বর, ব্যথা, ফুসকুড়ি হয়) সঙ্গে অনেক সময় ডেঙ্গুর উপসর্গ গুলিয়ে যায়। সাধারণত ডেঙ্গুর উপসর্গ কি কি হয় তা দেখে নিন –

  • ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ -জ্বর । ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে। 
  • জ্বরের সঙ্গে চোখে ব্যথা ( সাধারণত চোখের পিছনে হয় )
  • জ্বরের সঙ্গে পেশীতে ব্যথা। 
  • জ্বরের সঙ্গে বমি বমি ভাব / বমি। 
  • জ্বরের সঙ্গে মাথা ব্যাথা। 
  • চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। 

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করবেন ?

ডেঙ্গু রোগের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণগুলির চিকিৎসা করা যেতে পারে।যদি আপনি মনে করেন যে আপনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ডেঙ্গু হলে বাড়িতে যা করবেন :

  • পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। 
  • প্রচুর তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হব। যেমন – ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করুন একটু পর পর। 
  • যদি খুব জ্বর থাকে তাহলে ঠান্ডা জল দিয়ে রোগীর গা মুছিয়ে দিন। 
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার , হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 
  • ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এজাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পার। 

 ডেঙ্গু হলে যা করবেন না :

  • ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট এখন আর মূল বিষয় নয়। প্লাটিলেট হিসাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নামলে বা শরীরের কোন জায়গা থেকে রক্তপাত হলে প্রয়োজন বোধে প্লাটিলেট বা ফ্রেশ রক্ত দেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি খুবই কম দেখা যায়। 
  • অনেকে বলেন পেঁপে পাতার জুস ইত্যাদি খেলে প্লাটিলেট বাড়ে। আসলে এসবের কোন ভূমিকা নেই। জ্বর কমে যাওয়ার পর সংকটকাল পেরিয়ে গেলে আপনা থেকেই প্লাটিলেট বাড়তে শুরু করে। 
  • জ্বরের শেষের দিকে রক্তচাপ কমে যেতে পারে অথবা মাড়ি , নাক, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। এরকম হলে প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া লাগতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। 

কখন হাসপাতালে যেতে হবে :

ডেঙ্গু হলে কি ধরনের চিকিৎসা নেবেন ? বাসায় থাকবেন না হাসপাতলে যাবেন – তা নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে , এ, বি, ও সি। ‘এ’ – ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। 

‘বি’-ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ যেমন -পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ভালো। 

‘সি’-ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আই,সি,ইউ এর প্রয়োজন হতে পারে। 

ডেঙ্গু জ্বর এর রোগীর কখন প্লাটিলেট লাগে :

রক্তের তিন ধরনের উপাদান বা কোষ আছে। লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা ও অনুচক্রিকা (প্লাটিলেট)। ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে, তখন রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গে (মস্তিষ্ক, চোখ,  পেট ইত্যাদি) অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ থেকে রোগীর মৃত্যুঝুকিও থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হলে তাই স্বভাবতই প্লাটিলের পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। প্লাটিলেট সাধারণত নেমে গিয়ে আবার বাড়তে শুরু করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন চিকিৎসা লাগেনা। তবে কখনো কখনো যদি চিকিৎসক মনে করেন যে রোগীর প্লাটিলেট আশঙ্কাজনক হারে কম, তখন কারো দান করা রক্ত থেকে অনুচক্রিকা আলাদা করে রোগীর শরীরে দিতে পারেন। 

রক্ত থেকে দুই ভাবে অনুচক্রিকা আলাদা করা যায়।

প্রথম পদ্ধতি : প্রথম পদ্ধতিটি হলো রেনডম ডোনার প্লাটিলেট (আর,ডি,পি)।এতে ৪-৬  জন রক্তদাতার কাছ থেকে রক্ত নিয়ে মেশিনের মাধ্যমে অনুচক্রিকাকে আলাদা করা হয়। 

দ্বিতীয় পদ্ধতি : দ্বিতীয় পদ্ধতিতে প্লাটিলেট অ্যাফেরেসিস মেশিনের মাধ্যমে রক্তদাতার কাছ থেকে অনুচক্রিকা আলাদা করে নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় রক্তদাতার শরীরের একটি শিরায় সূঁচ দিয়ে রক্ত ​​নির্গত করা হয় ও রক্তটি একটি যন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয় যা প্লাটিলেট গুলিকে আলাদা করে। তারপর প্লাটিলেট গুলি একটি ব্যাগে সংগ্রহ করা হয় এবং বাকি রক্তের বাকি উপাদান যেমন লোহিত রক্তকণিকা, প্লাজমা পুনরায় রক্তদাতার শরীরে ফেরত দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৪৫-৯০ মিনিট সময় লাগে। 

প্লাটিলেট অ্যাফেরেসিস প্রক্রিয়া সবথেকে উত্তম। এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে প্লাটিলেট দিলে প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। রোগীর রক্ত গ্রহণের প্রতিক্রিয়া কম হয়, সংক্রমণের ঝুকিও কম থাকে। তবে এই প্রক্রিয়ায় খরচ বেশি। অ্যাফেরেসিস মেশিনের পাশাপাশি দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিস্টেরও প্রয়োজন পড়ে। 

আরোও পড়ুন

থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে আপনার যা কিছু জানা প্রয়োজন

অ্যাফেরেসিস রক্তদাতার যোগ্যতা :

একজন সুস্থ মানুষ যে রক্ত দিতে পারবেন তিনি প্লাটিলেটও দিতে পারবেন। প্লাটিলেট দান করার জন্য কিছু বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। দাতার প্লাটিলেট ভালো থাকতে হবে। ওজন ঠিক থাকতে হব,  উচ্চতা ভালো থাকতে হবে, রক্তদাতার শিরা স্পষ্ট ও দৃশ্যমান হতে হবে, সাত দিনের মধ্যে ব্যথার ওষুধ সেবনকারী প্লাটিলেট দিতে পারবেন না। অ্যাফেরেসিস প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট দিলে রক্তদাতা ১৪ দিন পর আবার প্লাটিলেট দিতে পারবেন। কিন্তু সম্পূর্ণ রক্তদান করলে চার মাস পর আবার রক্তদান করতে পারবেন। 

অ্যাফেরেসিস প্রক্রিয়ায় যে প্লাটিলেট পাওয়া যায় তার এক ইউনিট রোগীর শরীরে দিলে ৩০ থেকে ৬০ হাজার  পর্যন্ত প্লাটিলেট বৃদ্ধি পায়। 

ঢাকার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাফেরেসিস এর মাধ্যমে প্লাটিলেট আলাদা করা যায়। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও এই সুবিধা আছে। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ ও চট্টগ্রামেও এই সুবিধা রয়েছ। 

এডিস মশা :

এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বর ছড়ায়

ডেঙ্গু ভাইরাস প্রাথমিকভাবে এডিস মশা দ্বারা পরিবাহিত হয়, বিশেষ করে A. aegypti । এরা মূলত দিনের বেলা কামড়ায়। এই ভাইরাসের প্রাথমিক ধারক মানুষ, কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য প্রাইমেটিদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়। একবার কামড়ালেই সংক্রমণ হতে পারে। স্ত্রী মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত রক্ত পান করে নিজে সংক্রমিত হয় ও পেটে ভাইরাস বহন করে। প্রায় ৮-১০ দিন পর ‘ভাইরাস’ মশার দেহের অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়ে যার মধ্য আছে মশার লালা গ্রন্থি এবং শেষে এর লালায় চলে আসে। সারা জীবনের জন্য আক্রান্ত হলেও মশার উপর এই ভাইরাসের কোন ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে না। এরা কৃত্রিম জলাধারে ডিম পাড়তে, মানুষের সবচেয়ে কাছে থাকতে এবং অন্যান্য মেরুদন্ডীদের চাইতে মানুষের রক্ত খেতে বেশি পছন্দ করে। 

মশার প্রকারভেদ :

পৃথিবীতে প্রায় ৩,৫০০ প্রজাতির মশা রয়েছে। এদের মধ্যে ৩০০-৪০০ প্রজাতির মশা মানুষের রক্ত খেয়ে থাকে। এদের মধ্যে কিছু মশা গুরুতর রোগ ছড়ায়, যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, ইয়েলো ফিভার, ওয়েস্ট নাইলের ভাইরাস ইত্যাদি।

বাংলাদেশে প্রায় ১৫০ প্রজাতির মশা রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হল অ্যানোফিলিস মশা, কিউলেক্স মশা এবং এডিস মশা।

  • অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে।
  • কিউলেক্স মশা ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া এবং ওয়েস্ট নাইলের ভাইরাসের জীবাণু বহন করে।
  • এডিস মশা ডেঙ্গু, জিকা এবং চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের জীবাণু বহন করে।

ডেঙ্গু ভাইরাস কিভাবে মানুষকে অসুস্থ করে ও ক্ষতিসাধন করে ?

যখন ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা কাউকে কামড়ায় মশার লালার মাধ্যমে ভাইরাস ত্বকের ভিতর প্রবেশ করে। এটি বাসস্থান পাকা করে নেয় এবং শ্বেত রক্তকোষ এ প্রবেশ করে এবং যখন কোষগুলি শরীরের সর্বত্র চলাচল করে তখন সে গুলির ভিতর এই ভাইরাস প্রজননকার্য চালিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় শ্বেত রক্তকোষগুলি বহু সংখ্যক সিগন্যালিং প্রোটিন তৈরি করে, যেমন ইন্টারফেরন, যা অনেকগুলি উপসর্গের জন্য দায়ী যেমন জ্বর, ফ্লু, এর মত উপসর্গ এবং প্রচন্ড যন্ত্রণা। প্রবল সংক্রমণের শরীরের ভিতরে ভাইরাসের উৎপাদন অত্যাধিক বৃদ্ধি পায় এবং অনেক বেশি প্রতঙ্গ (যেমন- যকৃত এবংঅস্থিমজ্জা ) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং রক্তস্রোত থেকে তরল ক্ষুদ্র রক্ত নালীগুলির দেয়াল থেকে শরীর গহ্বরে চুঁইয়ে  পড়ে। ফলে রক্তনালীগুলিতে কম রক্ত সংবহিত হয় এবং রক্তচাপ এত বেশি কমে যায় যে প্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহে যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত সরবরাহ হতে পারে না। উপরন্তু অস্থিমজ্জা কাজ না করায় অনুচক্রিকা বা প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায় যা কার্যকরী রক্ত জমাট বাধার জন্য দরকারি। এতে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম বড় সমস্যা।

এডিস মশা কিভাবে বংশ বিস্তার করে ও ডেঙ্গু জ্বর ছড়ায় ?

এডিস মশার জীবনচক্র চারটি ধাপে সম্পন্ন হয়: ডিম, লার্ভা, পিউপা এবং প্রাপ্তবয়স্ক মশা।

  • ডিম : এডিস মশা সাধারণত স্থির ও নোংরা জলে ডিম পাড়ে। একটি স্ত্রী এডিস মশা একবারে ১০০-৩০০টি ডিম পাড়তে পারে। ডিমগুলি খুবই ছোট এবং খালি চোখে দেখা যায় না।
  • লার্ভা : ডিম থেকে ১-২ দিনের মধ্যে লার্ভা বেরিয়ে আসে। লার্ভাগুলি জলের পৃষ্ঠে ভাসে এবং অক্সিজেন গ্রহণ করে। লার্ভাগুলি জলের মধ্যে থাকা অণুজীব এবং উদ্ভিদ পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে।
  • পিউপা : লার্ভা থেকে ৫-৭ দিনের মধ্যে পিউপা বেরিয়ে আসে। পিউপাগুলি জলের পৃষ্ঠের নিচে থাকে এবং শ্বাস নেওয়ার জন্য একটি নল বের করে রাখে। পিউপা থেকে ১-২ দিনের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক মশা বেরিয়ে আসে।
  • প্রাপ্তবয়স্ক মশা : প্রাপ্তবয়স্ক মশা সাধারণত ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মশারা রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। তারা মানুষের রক্ত, পশুর রক্ত এবং পাখির রক্ত খেতে পারে।
এডিস মশার পিউপা ও লার্ভা
পিউপা ও লার্ভা

এডিস মশারা ডেঙ্গু, জিকা, চিকেনগুনিয়া এবং ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগের বাহক।

এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে :

  • মশারি ব্যবহার করুন।
  • সারা শরীর ঢেকে রাখার মত পোশাক পরিধান করূন।
  • ঘরের চারপাশে মশা মারার স্প্রে করুন।
  • ঘরের আশেপাশে অথবা ঘরের ভিতরে অব্যবহৃত আসবাবপত্রে পানি জমে থাকতে দেবেন না।

এডিস মশার বংশ বিস্তার ও ডেঙ্গু জ্বর রোধে করণীয়:

  • পানি জমে থাকতে দেবেন না। এডিস মশা সাধারণত স্থির ও নোংরা পানিতে ডিম পাড়ে। তাই, ঘরের আশে পাশে কিংবা ঘরের ভিতরে ব্যবহৃত আসবাবপত্রে পানি জমে থাকতে দেবেন না। যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে, যেমন- ফুলের টব, বালতি, ড্রাম, এয়ার কন্ডিশনারের ড্রেন পাইপ, ছাদের গর্ত ইত্যাদি পরিষ্কার করে রাখুন।
  • মশারি ব্যবহার করুন। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। এতে মশা আপনাকে কামড়াতে পারবে না।
  • শরীর ঢেকে রাখুন। বাইরে যাওয়ার সময় সারা শরীর ঢেকে রাখার মত পোশাক পরিধান করূন। এতে মশা আপনাকে কামড়াতে পারবে না।
  • মশা মারার স্প্রে ব্যবহার করুন। ঘরের চারপাশে মশা মারার স্প্রে ব্যবহার করুন। এতে মশা মারা যাবে।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। সবাইকে এ ব্যাপারে অবহিত করুন।

এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। এতে আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরিবারকে এডিস মশাবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারব।

error: Content is protected !!